ড. কামরুল হাসান মামুন: শিক্ষক সমিতির নেতারা কীভাবে রাজনৈতিক দলের সভাপতির কার্যালয়ে আলোচনার জন্য যান, আমি তো সেটাই বুঝি না। তাদের আত্মসম্মানবোধ থাকলে কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে আলোচনার জন্য যেতে পারতেন না। শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন। এইটা একটা কালেকটিভ গোষ্ঠী। একজন দুইজন না। তারা হাজার হাজার শিক্ষকদের প্রতিনিধি। সুতরাং হাজার হাজার শিক্ষকদের সম্মান রক্ষার প্রতিনিধি তারা। তারা কীভাবে সকলের উঁচু মাথা নিচে নামিয়ে দেন? আবার সেখানে রাজনৈতিক নেতারা কীভাবে বলেন শিক্ষকদের ভুল তত্ত্ব দেওয়া হয়েছে, তাই সেই ভুল বোঝাবুঝি মিটে গেছে। তারা শিক্ষক নেতাদের শিশু ভেবেছেন! সেই শিশুরা বৈঠক থেকে বের হয়ে বলে আলোচনা সন্তোষজনক হয়েছে। ২০১৫ সালে যখন নতুন বেতন স্কেল ঘোষণা হয় তখন এই শিক্ষক নেতাদের কারণেই ওয়ারেন্ট অফ প্রিসিডেন্সে শিক্ষকদের অবস্থানের অবনমন হয়। যারা স্বর্থরক্ষার দায়িত্ব নেয় তারাই নিজের ব্যক্তিগত লাভের আশায় সমষ্টির লাভকে বিসর্জন দেয়। নতুন প্রত্যয় এই বছর চালু হবে না আগামী বছর চালু হবে এইটা তো আন্দোলনের ইস্যু ছিল না। এই বছর থেকে চালু না করে আগামী বছর থেকে প্রত্যয় স্কিম চালু করার দাবি তো ছিল না। দাবি হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিদ্যমান পেনশন স্কিমেই থাকতে চায়। তারা প্রত্যয় নামক স্কিমে যেতে চায় না। আজকে যারা ছাত্র আগামী বছর তারা শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পেলে তাদের উপর প্রত্যয় স্কিম কার্যকর হবে।
যারা এখন শিক্ষক না তাদের হয়ে তাদের স্বার্থের আন্দোলনটা আমাদেরই করতে হবে। নিজেদের ওপর কার্যকরের কথা হলে একটু স্যাক্রিফাইস করা যায়। কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থের বিরুদ্ধে কিছু গেলে তাদের হয়ে তাদের যুদ্ধটা আমাদের নিঃস্বার্থভাবে করতে হবে। দুঃখজনক হলো আমাদের শিক্ষক নেতারা এই পবিত্র কর্তব্য সম্মন্ধে ন্যূনতম ধারণাও রাখে না। শিক্ষকদের এমন বেতন দিতে হবে যাতে টাকা উপার্জনের জন্য কোনো শিক্ষককে পার্টটাইম অন্যত্র কোথাও পড়াতে না হয়। শিক্ষকদের এমন বেতন দিতে হবে যাতে দুটো পয়সার জন্য নিজের কোর্সের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য টাকা নিতে না হয়। শিক্ষকদের এমন বেতন দিতে হবে যাতে কোনো একাডেমিক মিটিং কিংবা সহকর্মীদের নিয়োগ ও প্রোমশনের বোর্ডে থেকে এনভেলপ মানি নিতে না হয়। শিক্ষকদের এমন বেতন দিতে হবে যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ভর্তি পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করে এনভেলপ মানি নিতে না হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষকদের মাঝে আত্মমর্যাদাবোধ জন্মাবে। সমাজে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। ফলে ছাত্ররা শিক্ষকদের আরও বেশি সার্ভিস পাবে। শিক্ষার্থীরা লাভবান হবে। সমাজে সততাচর্চা হবে এবং তাতে সমাজে সৎ মানুষ তৈরির পরিবেশ হবে। লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মতামত লিখুন :