আহসান হাবিব: [১] যেকোনো অনুভূতি প্রকাশ করা সম্ভব। কারণ অনুভূতি নিজেই একটি ভাষা। কোনো অনুভূতি ভাষাতিরিক্ত নয়। তবে তা যখন রূপান্তরিত হয়, তখন তা বদলে বদলে যায়। এটা রূপান্তরের বৈশিষ্ট্য। যেমন কোন কথাকে আমরা সুর দিই, তখন কথাটা খানিক বদলে যায়। সুর কথাটাকে ভিন্ন ভাষা দান করে, ফলত তার ব্যঞ্জনা অন্যরকম হয়। সুর বা কবিতা আদি অনুভবের চেয়ে আলাদা কিন্তু মূলগত একই, তবে বদলটাও সত্য। অনুভূতি এবং তার প্রকাশক্ষম মাধ্যম একই ভাষার দুই উৎসারণ। [২] কিন্তু সেই অনুভূতিই সবচেয়ে সুন্দরভাবে ভাষায় রূপান্তরিত হতে পারে, যা সত্যরূপে অনুভূত। যা অনুভূত হয়নি, অর্থাৎ অভিজ্ঞতালব্ধ নয়, তার প্রকাশ সুন্দর হয় না। সেখানে গোঁজামিল থেকে যায়। আমি যে পথে হেঁটে গেছি বারবার, কেবল সে পথের বর্ণনাই দিতে পারবো নিখুঁত। যদি দেখি একদিন সেখানে তৃণ জন্মেছে, বুঝবো অনেকদিন এই পথে আমার হয়নি হাঁটা।
[৩] কিন্তু মানুষ এক রাজনৈতিক প্রাণি। ভাষার মধ্যদিয়ে আপনি কোন রাজনীতি চর্চা করছেন, তাই মুখ্য। আপনি নির্বাচন করেন সেইসব শব্দ যা আপনার রাজনীতির পক্ষে। একটি ভাষা পৃথিবীর যেকোনো ভাষা থেকে শব্দ নিতে পারে, তবে তার আগে চাই তার যেকোনো প্রকারের আগ্রাসন। এই আগ্রাসনের একটি শ্রমভিক্তিক রূপ আছে যা তার শ্রমের রূপের মধ্যে ঢুকে ভাষায় প্রকাশিত হয়। এটা সেই ভাষায় থেকে যায়। হয়তো দেখা গেলো তারা আর এদেশীয় রাজনীতির কোন ফ্যাক্টর নয়, তখন আগত শব্দগুলি নিরীহ হয়ে পড়ে এবং আত্তীকৃত হয়। কিন্তু যা এখনো রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্রে আছে এবং মানুষ লড়াই করছে, তখন আপনার উচ্চারিত ভাষাটি আর নিরীহ থাকে না, রাজনৈতিক হয়ে ওঠে এবং আপনার পক্ষ নির্ধারিত হয়ে পড়ে। তখন কেবল ভাষার দোহাই দিয়ে নিজেকে লুকানো যায় না। [৪] চিন্তা অনুভূতিকে একটি নির্দিষ্ট আকার দেয়। এই চিন্তা কিন্তু স্বতঃস্ফূর্ত নয় যা মস্তিষ্ক হরহামেশাই করে, এই চিন্তা একটি দৃষ্টিভঙ্গির ফলিত রূপ। এটা গড়ে ওঠে ধীরে ধীরে। কোন ঘটনাকে দেখার পার্থক্যই দৃষ্টিভঙ্গির অনন্যতা গড়ে দেয়। এটাই আপনার রাজনীতি। তাই যেকোনো শিল্প তার রচয়িতার এক রাজনৈতিক দলিল। ভাষা, এ বড় কঠিন যাদুকর, তার ভেতর আপনার শ্রেণিস্বার্থটি প্রকটিত হবেই তা আপনি যতই গাঁইগুঁই করেন। লেখক: কথাসাহিত্যিক
আপনার মতামত লিখুন :