শাকিব মুস্তাভী: ছুটির দিন বলে বেশ দেরি করে ঘুম থেকে উঠলাম। দুপুরবেলা ফেসবুকে ঢুকে দেখি বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের প্রতিবেদন প্রকাশের পর নিউজফিডজুড়ে তোলপাড় চলছে। একটি প্রতিবেদন হয়ে উঠেছে লাখো চাকরি প্রত্যাশীর হতাশ, অনিশ্চয়তা ও মোহভঙ্গের কারণ। সর্বস্তরে প্রশ্নফাঁসের ব্যাপারে তলেতলে বাংলাদেশি পাবলিকের মধ্যে একটা কনশেনসাস থাকলেও গত এক দশকে বিভিন্ন ইনফ্লুয়েন্সার ও পীরের মোটিভেশন শুনে বোকা পোলাপান বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ ফেয়ার ভাবতে শুরু করেছিল। বিশ্বাসের সেই বেলুন ফুটো হয়ে গেলো। সাথে সাথে অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়ল বিসিএস পরীক্ষাকে ঘিরে তৈরি হওয়া শত শত কোটি টাকার কোচিং, বই, আবাসন ও মোটিভেশন বাণিজ্য।
বাংলাদেশের একজন সাধারণ শিক্ষার্থী পুষ্টিকর খাদ্য, স্বাস্থ্যকর আবাসন এবং নিরাপত্তার অপ্রতুলতার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বা প্রাইভেট মেসে অত্যন্ত মানবেতর পরিবেশে চার-পাঁচটা বছর পার করে। কোনোমতে, আন্ডারগ্র্যাড শেষ করার পর বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে নিতে আরো তিন-চারটা বছর নষ্ট হয়। এই রিপোর্ট দেখার পর বিসিএস প্রত্যাশীদের মনের ভেতর দিয়ে কী ঝড় বয়ে যাচ্ছে, সেটা খুব সহজেই অনুমেয়। তবে এত হতাশার ভেতর সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো, বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছর ধরে বিসিএস নাকি বিদেশে উচ্চশিক্ষা এই ইস্যুতে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মনে যে কনফিউশন তৈরি হয়েছিল, তার চূড়ান্ত ফয়সালা এই রিপোর্টের মাধ্যমে হয়ে গেলো। বিসিএসের উপর ভরসা করে পিএসসির অসৎ কর্মচারীদের হাতে নিজেদের ভবিষ্যৎ সপে দেওয়ার যে চরম ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত অনেকে সেটা বুঝতে পেরেছেন।
তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আমি বলবো হতাশ হবেন না। আপনার মেধা ও পরিশ্রম কখনো বৃথা যাবে না। কোটা ও প্রশ্নফাঁসের অভিশাপে জর্জরিত বাংলাদেশ আপনার মেধা ও পরিশ্রমের প্রকৃত মূল্যায়ন করতে না পারলেও পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ আছে যারা আপনার যোগ্যতাকে কাজ লাগাতে ইচ্ছুক। আপনার জন্য সারা পৃথিবীতে সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত রয়েছে। এছাড়া আজকাল পৃথিবীটা ছোট হতে হতে হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। বিদেশে চলে যাওয়া মানে দেশ ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া নয়। এখন অনেক স্কিলড এবং ওয়েল কোয়ালিফাইড বাংলাদেশি বিদেশে বাবা-মা, ভাই-বোনকে নিয়ে বসবাস করছেন। চেষ্টা করলে আপনিও পারবেন। এছাড়া দেশে বসে থেকে হতাশার নিজের অমিত সম্ভাবনাকে নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। তার চেয়ে বরং বিদেশ থেকে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করা ভালো। আপনি আন্তরিক হলে আপনার স্কিল ও এক্সপেরিয়েন্স একদিন না একদিন এই দেশের মানুষের কাজে লাগবে। ৭ জুলাই ২০২৪। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :