আজিজুর রহমান আসাদ: চাকরিতে ‘কোটা’ প্রশ্ন কেন চাকরিপ্রত্যাশী ছাত্র তরুণদের আগ্রহের বিষয়? বুঝতে হলে দারিদ্র্যের ফাঁদ, পুঁজিবাদ ও রাজাকার আলবদরের রাজনীতি বুঝতে হবে। প্রথমত এবং প্রধানত, কোটা বিরোধিতার একটি রাজনৈতিক অর্থনীতি আছে; ছাত্র তরুণদের চাকরি লাভের স্বার্থবোধ। যা প্রকাশ করছে কোটা বৈষম্য যুক্তিতে। যখন দেখা যাচ্ছে, চাকরি লাভের সম্ভাবনা সামান্য হলেও কমে যাচ্ছে, এরা দায়ী করছে কোটাকে। যেমন জার্মানিতে নয়া দারিদ্র্যের জন্য, চরম প্রতিক্রিয়াশীল নিওনাৎসিরা দায়ী করে বিদেশি শ্রমিকদের। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী একটি রাজনৈতিক মতাদর্শগত অবস্থান আছে, রাজাকার-আলবদরের রাজনীতির ধারাবাহিকতায়, প্রতিবিপ্লবের সাফল্যে। অন্তত যারা এই কোটা বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে আছে, এদের অবস্থান পরিষ্কার মুক্তিযুদ্ধবিরোধিতা। তাঁদের জন্য, মুক্তিযোদ্ধা কোটা একটি সুযোগ, মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করার ও সরকার বিরোধিতার। অন্যদিকে যারা অংশ নিচ্ছে ও সমর্থক, এদের প্রধান অংশই প্রোপাগান্ডায় আবেগতারিত।
নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে আসা ছাত্র তরুণরা শিক্ষার যোগ্যতায় আপওয়ার্ড মোবিলিটি চায়, দারিদ্র্যের ফাঁদ থেকে ব্যক্তি হিসেবে বেরিয়ে আসতে চায়। সে আছে অন্যদের সাথে প্রতিযোগিতায়। তার চাকরির অনিশ্চয়তার জন্য, পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সংকটকে সে বুঝতে পারে না, কারণ বামপন্থি ছাত্রসংগঠন সাধারণ ছাত্রদের শিক্ষা ও শিক্ষাপরবর্তী জীবনের প্রশ্নে কোনো বিচারবাদী বিশ্লেষণ হাজির করেনি এবং বেকারত্ব নিরসনের কোনো কর্মসূচিও নেই। ফলে রাজাকার-আলবদরের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, ছাত্র তরুণদের ভবিষ্যৎ চাকরি নিয়ে উদ্বেগের একটি বিশ্লেষণ ও ভাষা দিয়েছে। টার্গেট করেছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা, যেন এটাই সব সমস্যার মূলে। এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিপক্ষে একটি রাজনৈতিক সমাবেশিকরণের সুযোগ পেয়েছে।
বামপন্থি ছাত্রদের কাজ পপুলিজমের লেজুড়বৃত্তি নয়। সাধারণ ছাত্রদের জীবনের যে সংকট, ভবিষ্যতের যে উদ্বেগ, এর একটি সমাজবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়া প্রয়োজন ছিল। পুঁজিবাদের নিজস্ব চরিত্রের কারণে, সকল ছাত্র তরুণদের পক্ষে দারিদ্র্যের ফাঁদ যেকে মুক্তি সম্ভব নয়, ইউরোপ-আমেরিকায়ও সম্ভব হয়নি। প্রয়োজন পুঁজিবাদী এই ব্যবস্থার বদল, সেই রাজনীতিটা সামনে আনা। অন্যথায় বাম ছাত্র সংগঠন দিনশেষে, রাজাকার আলবদরের প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির সেবা করবে। লেখক: গবেষক