ডা. লেলিন চৌধুরী: সাপের কামড় নিয়ে সারাদেশে নতুন করে ভয়ের ঢেউ তৈরি হয়েছে। রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপকে কেন্দ্র করে এ অবস্থার উদ্ভব। প্রতিবছর বাংলাদেশে ৪ থেকে ৫.৫ লাখের মতো মানুষ সর্পদংশনের শিকার হয়। এর মধ্যে মারা যায় সাড়ে ৭ হাজারের মতো মানুষ। বিশ্বে মোট ৩ হাজার প্রজাতির মতো সাপ আছে। আর বাংলাদেশে আছে ৯১-৯৪ প্রজাতির সাপ। এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ সাপ বিষহীন। তাহলে কেবলমাত্র ২০ শতাংশ সাপের কামড়ে মৃত্যুঝুঁকি থাকে। বিষধর সাপের কামড় দুই ধরনের হয়ে থাকে। বিষধর সাপ কামড় দিয়েছে, কিন্তু নানা কারণে শিকারের শরীরে বিষ ঢালতে পারেনি। একে বলে বিষহীন কামড়। এ ধরনের কামড়ে সঙ্গত কারণে শরীরে কোনো বিষ্ক্রিয়ার আলামত হয় না। কেবলমাত্র বিষযুক্ত দংশনেই মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশে সর্পদংশনের ৯৫ শতাংশ গ্রামাঞ্চলে হয়ে থাকে। গ্রামাঞ্চলে সাপেকাটা মানুষের বড় অংশ ওঝা বা গুণীনের শরণাপন্ন হয় এবং এদের বেশির ভাগ ওঝার বিষ নামানো অথবা গুণীনের জড়িবুটিতে ভালো মানে বিষমুক্ত হয়ে যায়। ফলে গ্রামবাংলায় এদের উপর সাধারণ মানুষের রয়েছে গভীর আস্থা। যদিও এখন ধীরে ধীরে অনেকেই আধুনিক চিকিৎসামুখী হচ্ছে। ওঝা/গুণীনের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার পর প্রতি ১০ জনের মধ্যে প্রায় ৯ জনের শরীরে বিষের প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। বাকি ১ জন বিষের প্রভাবে মৃত্যুবরণ করে। তখন বলা হয় একে কালসাপ/কালনাগে খেয়েছে, কারো কিছু করার নেই।
হায়াত-মউত উপরওয়ালার হাতে বিধায় মানুষ সে মৃত্যুকে মেনে নেয়। ১০ জন সর্পদংশিত রোগীর ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ৮জন বিষহীন কামড়ের শিকার, বাকি ২ জন যাদের বিষধর সাপ কামড়িয়েছে তাদের অন্তত ১ জন বিষহীন কামড়ের শিকার হলে কেবলমাত্র একজনের মৃত্যুঝুকি থাকে। তবে এই একজনের মৃত্যুও কিন্তু অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করে রুখে দেয়া যায়। সঠিক অ্যান্টিস্নেক ভেনম তৈরি, সেগুলোকে সারাদশে সহজলভ্য করা এবং সাপেকাটা ব্যক্তি দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করলে সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যের কাছাকাছি বা অনেক অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। লেখক: জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
আপনার মতামত লিখুন :