শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৭ জুলাই, ২০২৪, ০১:৫১ রাত
আপডেট : ০৭ জুলাই, ২০২৪, ০১:৫১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বৃটেনের নির্বাচন ও গণতন্ত্রের সৌন্দর্য 

কাকন রেজা 

কাকন রেজা: সত্যিকার গণতন্ত্রের সৌন্দর্যটাই এখানে। বৃটেনের নির্বাচনের কথা বলছি। ঋষি সুনাক নির্দ্বিধায় নিজের পরাজয় মেনে নিয়েছেন। লেবার পার্টির জয়ে কেউ বলেননি এই নির্বাচন মানি না, এতে কারচুপি হয়েছে। যারা পরাজিত হয়েছেন, তারা বুঝেছেন জনগণের সমর্থন তাদের প্রতি নেই। এই বাস্তবতাকে মেনেই তারা বিরোধীদের কাতারে বসার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। অন্যদিকে সারাবিশ্ব থেকে সবার অভিনন্দন আসছে লেবার পার্টির এ জয়ে। বিশ্বের গণতন্ত্রকামী সবদেশ, সব নেতা এই জয়ে লেবার পার্টির এবং স্টারমারকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। স্টারমার প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন এটা কারো দয়ার দানে নয়, ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে নয়, কোনো বাহিনীর উপর নির্ভর করে নয়, শুধুমাত্র জনগণের উপর নির্ভর করে। মানুষের ভোটাধিকারের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন স্টারমার। এমন প্রধানমন্ত্রীর থাকে নৈতিক জোর। তাকে বিশ্বের কেউ রক্তচক্ষু দেখাতে পারে না। কোনো দেশ সফরে অন্য দেশ কী বললো, তা নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় না। বলতে হয় না, অমুক দেশ না থাকলে আমাদের নির্বাচনে সমস্যা হতো।

ঋষি সুনাকের পরিণতির কথা অনেক আগেই লিখেছিলাম। বলেছিলাম, তাকে সম্ভবত মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে হবে। যারা আমার লেখা পড়ে থাকেন, তাদের হয়তো স্মরণ আছে। নিজের লেখার কথা বলছি এ কারণে যে, যেসব দেশে সত্যিকার গণতন্ত্র থাকে, জনগণের মতামতই সরকার পরিবর্তনের মূলকথা হয়, সে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সব বিষয়ে একটা ধারণা করা যায়। কিন্তু ধরুন পাকিস্তানের মতন একটা দেশ, যেখানে জনগণই শেষ কথা নয়, এমন দেশ নিয়ে এ ধারায় মন্তব্য করা কঠিন। সবচেয়ে বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ বলে অহংকার করা ভারতের গণতান্ত্রিক অবস্থান ক্রমেই নিম্নমুখী। এবার ভারত সম্পর্কে বলেছিলাম, মোদিই সরকার গঠন করবে এবং সে সরকার হবে দুর্বল সরকার। ধারণা ভুল হয়নি। কারণ, ভারতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সমস্যা শুরু হলেও, সে সমস্যা এখনো গণতন্ত্রকে বিপর্যস্ত করতে পারেনি। 

মানুষ এখনো ভোট দিতে বুথে আসে এবং তা অনেকটাই উৎসবমুখর পরিবেশে। কিন্তু গত মোদি সরকার এবং নতুন মোদি সরকারের মধ্যে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। ফলে ভারতের গণতন্ত্রও যে কোনো সময় বিপন্ন হতে পারে। অরুন্ধতী রায় আইনী কাঠামোতে আক্রান্ত হওয়া তারই নমুনা। ফ্যাসিজমের উত্থান মূলত আইনী প্রক্রিয়াতেই ঘটে। ফ্যাসিস্টরা জনমতের বিপরীতে আইনকে ব্যবহার করে নিজেদের সুরক্ষিত করতে চায়। যার ফলেই ফ্যাসিস্ট কবলিত রাষ্ট্রে না-না কালাকানুন তৈরি হয়। এবার ভারতে যদি মোদির বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতার পেত তাহলে সম্ভবত সংবিধান কাটাছেঁড়া করে সেই কালাকানুনের নজির দেখতো মানুষ। কিন্তু ভারতের এখনো অনেক মানুষ আছেন যারা ফ্যাসিজমের বিরোধী। তারা এবার অন্তত বিজেপির সে যাত্রা থামিয়ে দিয়েছে। 

মোদি সরকার নির্বাচনের আগে দুই মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে। মূল বিরোধীদল কংগ্রেসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে। আরো না-না ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু বৃটেনের ক্ষেত্রে দেখুন ঋষি সুনাক ও তার কনজারভেটিভ পার্টি কিছ্ইু করেনি। করার চেষ্টাও করেনি। ঋষি সুনাক নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করেছেন নির্বাচনের আগেই। তিনি জানেন, তার সরে যাবার প্রকৃত সময় কোনটা এবং কখন সরে গেলে পুনর্বার সফল প্রত্যাবর্তন সম্ভব। কিন্তু ফ্যাসিস্টদের ক্ষেত্রে হয় উল্টো। তারা ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে যায় এবং এক পর্যায়ে মনে করে ক্ষমতা থেকে তাদের কেউ নামাতে পারবে না। কিন্তু ঠিকই তাদের নামতে হয়। আর সে নামাতে আর প্রত্যাবর্তনের পথ থাকে না। সঠিক গণতন্ত্রে সবারই প্রত্যাবর্তন সম্ভব। কিন্তু ফ্যাসিজমে প্রত্যাবর্তন নেই। ফ্যাসিজম মানে ‘ওয়ান ওয়ে জার্নি’। 

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়