জিয়া আরেফিন আজাদ: শৃঙ্খলার বিষয়ে আমরা সব ক্ষেত্রে, সব সময়েই উদাসীন। ক্রিকেটে প্রত্যাশা বেশি, তাই অনিয়মগুলো সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচিত হয়। ১৯৯৫ সালের দিকের কথা। বাংলাদেশ তখন আইসিসি সহযোগী সদস্য। তখন রাজশাহীতে নিয়মিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আসর বসতো। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ বা ইংল্যান্ড এ কোনো একটা টিমের সাথে বাংলাদেশের খেলা ছিল। বাংলাদেশ দল রাত্রিযাপন করেছিল পর্যটন মোটেলে। সেই টিমের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় ছিল ক্রিকেটার বন্ধু তাপসের বন্ধু। সেই সূত্রে আমারও বন্ধুস্থানীয়। তাপসের সাথে পর্যটন মোটেলে গেলাম। তখনকার দিনে এত কড়াকড়ি ছিল না। ম্যানেজার ছিলেন গাজী আশরাফ হোসেন। খেলোয়াড়দের সাথে আমাদের খোশগল্প করতে দেখে লিপু ভাই প্রশ্রয়ের দৃষ্টি নিয়ে আমাদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করলেন। তারপর এনজয় ইয়োর টাইমস বলে অন্য দিকে চলে গেলেন।
খেলোয়াড়দের একটা রুমে আমরা গল্প করার জন্য ঢুকলাম। কিছুক্ষণ পর তৃতীয় একজন খেলোয়াড় একটু আড়াল করে একটা পানীয় বোতল নিয়ে আসলেন। ব্র্যান্ড চিনি না, তাই নাম মনে করতে পারছি না। ড্রিংক করি না বলে সেখান থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম। ড্রিংক না করলেও মদ্যপান নিয়ে আমার কোনো প্রেজুডিস নাই। মাতলামি না করে কেউ যদি পয়সা খরচ করে এই বিস্বাদ জিনিস খেতে চায়, আমার আপত্তি নেই। ড্রিংকসের সেই বোতলটা শ্যাম্পেন, জিন বা মডারেট কোনো পানীয় হতে পারে। সাথে করে এনেছে বলেই ওই খেলোয়াড়েরা নিজেরাই পুরো বোতল সাবাড় করে দিত এমনটা অনুমান করা ঠিক না। হয়তো অতিথি আপ্যায়নের জন্যই তাদের এই প্রচেষ্টা। ঘটনা যেটাই হোক, তখনকার দিনে শৃঙ্খলার বিষয়ে কড়াকড়ি ছিল না, এটা নিশ্চিত বলা যায়। অবশ্য প্রাপ্তবয়স্ক খেলোয়াড়দের শৃঙ্খলায় আনতে লাগেজ চেকিং করাটা সম্মানজনক নয়। একটা পর্যায়ে আস্থা রাখতেই হবে।
পরবর্তী সময়ে নানা সূত্র থেকে জেনেছি, আমাদের খেলোয়াড়দের কেউ কেউ বিদেশে গেলে নাইট ক্লাবে যেতে পছন্দ করেন। ড্রিংকস, জুয়া বা অন্য এন্টারটেইনমেন্টের প্রলোভনে পড়ে যান অনেকে। ডিউটি ফ্রি শপ থেকে অ্যালকোহল কেনা তো মামুলি ব্যাপার। সে সব অনেক আগের কথা। অসমর্থিত সূত্রের তথ্য দিয়ে কারো দিকে আঙুল তোলা ঠিক না। আমি শুধু পরিবেশের কথা বলতে চেয়েছি। এখন সময় পরিবর্তন হয়েছে। খেলায় প্রচুর টাকা এসেছে। খেলোয়াড়েরা নানা রকম চুক্তি ও কোড অব কনডাক্টে বাধা। একজন পেশাদার ক্রিকেটারের ব্যক্তিগত জীবন এখন সীমিত। কিন্তু তারপরও আমাদের দলের খেলোয়াড়দের নামে নানা অভিযোগ গণমাধ্যমে লিক হয়ে যায়। কেউ গৃহকর্মীকে পেটায়, কেউ স্ত্রী বা প্রমিকাকে নিয়ে কাজিয়ায় থানা-হাজত করেন, কেউ নিয়ন্ত্রণহীন কথা বলে পুরো দলকে বিতর্কে ফেলে দেন। সাম্প্রতিক ঘুমকাণ্ড তেমনই একটা উদাহরণ।
আসলে যেমন ম্যানেজমেন্ট তেমনই খেলোয়াড়। আমাদের ম্যানেজারেরা গরম ভাতের খোঁজে ক্যাসিনোতে যায়, কোচেরা ছুটি ছাড়াই যখন খুশি আসে-যায়, সিলেক্টরেরা খেলা না দেখে ইশারার দিকে তাকিয়ে থাকে, আর বোর্ড ডিরেক্টরদের কথা যত কম বলা যায় ততো ভালো। যাই হোক, খুব সহসাই টাইগার ক্যাম্পে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা পাবেÑ এমনটা কেউই আশা করেন না। নিজের ও দেশের মান-সম্মানের কথা বিবেচনা করে সবাই যে যার অবস্থানে একটু সংযত হলে বিদেশের মাটিতে নেতিবাচক সংবাদ হতে হয় না, আমরাও বেইজ্জতি থেকে রক্ষা পাই। ৩-৭-২৪। যঃঃঢ়ং://িি.িভধপবনড়ড়শ.পড়স/ুরধধৎবভরহ.ধুধফ
আপনার মতামত লিখুন :