শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৫ জুলাই, ২০২৪, ০১:৫৯ রাত
আপডেট : ০৫ জুলাই, ২০২৪, ০১:৫৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিএনপি হয়ে উঠেছে একদল ধর্মীয় উগ্রবাদী  

গুলজার হোসেন উজ্জ্বল

গুলজার হোসেন উজ্জ্বল: একটি স্বীকৃত ও বহুল পরিচিত,  খ্যাতিমান মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য একজন নারী মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে ট্রল করতে নেমেছে একদল রাজাকার শাবক। গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য, বীরপ্রতীক হাবিবুল আলম এমন একজন মুক্তিযোদ্ধা যার পরিবারের প্রতিটি সদস্য সক্রিয়ভাবে এই জনযুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। হাবিবুল আলম বীরপ্রতীক ছিলেন রুমী, বদি, কাজী কামাল, জুয়েল, আজাদ, গাজী, চুলুদের ঘনিষ্ট বন্ধু ও সহযোদ্ধা। যুদ্ধের সময় তিনি বেঁচে গেছেন অলৌকিকভাবে। এই চরিত্র গুলোর সাথে আমরা পরিচিত হই একাত্তরের দিন গুলি, মা প্রভৃতি বইয়ের মাধ্যমে। যারা এই দুইটি বই পড়েছেন তারা আলম চরিত্রটির সাথে পরিচিত। হাবিবুল আলমরা দিলু রোডের আদি বাসিন্দা। পাশেই ইস্কাটনে ছিল আজাদদের বাড়ি। মগবাজারে ছিল তাদের আরেক বন্ধুর বাড়ি। সম্ভবত কাজী কামালদের বাড়ি। এই বাড়িগুলির গল্প আছে একাত্তরের দিনগুলিতে। এই বন্ধুচক্রটি ছিল একটি সোনালী প্রজন্ম। যারা প্রায় সবাই ছিলেন অবস্থাপন্ন পরিবারের সদস্য, সেই আমলে গাড়িতে চড়তেন, পশ্চিমা আর্ট কালচারের সাথে পরিচিত ছিলেন, এলভিস প্রিসলি, জর্জ হ্যারিসনদের মতো স্মার্ট আর আধুনিক ছিলেন। সেই সাথে দেশের জন্য নিজের জীবনবাজি রাখতে তারা এক বিন্দু পেছনে তাকাননি।

একাত্তর সালে হাবিবুল আলমদের দিলু রোডের বাড়িটি হয়ে উঠেছিল একটা ছোটখাট দূর্গ। হাবিবুল আলমের পিতা হাফিজুল আলম মুক্তিযোদ্ধাদের সক্রিয় সহযোগিতা করতেন। তার ১/৩ দিলু রোডের বাড়িটি ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সেইফ হাউস। এ বাড়িতে হাফিজুল আলম একটি ভূগর্ভস্থ অস্ত্রাগার নির্মাণ করিয়েছিলেন।  হাবিবুল আলম ঢাকার গেরিলা যোদ্ধাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন।  মে থেকে আগস্ট তিনি ঢাকায় ছিলেন। অনেকগুলো গেরিলা অপারেশন সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করেছেন। সন্তানদের এই বীরোচিত যুদ্ধে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন বাবা হাফিজুল আলম। জুনের শুরুর দিকে অপারেশন হোটেল ইন্টার-কন্টিনেন্টাল এর পর হাফিজুল আলম নিজেই মুক্তিযোদ্ধাদের তার হেরাল্ড ট্রায়াম্ফ গাড়িতে করে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ নিয়ে গিয়েছিলেন। এই হাফিজুল আলমের তিনকন্যা মানে হাবিবুল আলমের তিন বোন, আসমা, রেশমা ও শাহনাজ (সায়মা খান) আশ্রয়প্রার্থী আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করতেন, এবং তাদের অস্ত্র পরিষ্কার করে শূন্য ম্যাগাজিনে গুলি ভরে অস্ত্রাগারে গুছিয়ে রাখতেন। এ কাজে তারা তিনজনই পারদর্শী হয়ে ওঠেন। (উইকিপিডিয়া)। শূন্য ম্যাগাজিনে গুলি ভরানোর কাজটা তারা শিখেছিলেন দিলুরোডের বাড়িতে। এই উঠানেরই এককোনে মাটির নিচে থাকতো অস্ত্র।  এই বাড়িটিকে একটা ট্রেনিং সেন্টার বললে কি ভুল হবে? 

হাবিবুল আলম বীরপ্রতীক বা তার পরিবার স্বাধীন বাংলাদেশের কাছ থেকে কোনো বাড়তি সুবিধা নিয়েছেন বলে শুনিনি। নিজের কাজ নিয়েই ব্যাস্ত থাকেন। ব্যবসায়ী পরিবার, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে থাকেন। ১৯৯৪ সালে জাতীয় স্কাউট জাম্বুরিতে আলম স্যারকে পেয়েছিলাম ন্যাশনাল কমিশনার (প্রোগ্রাম) হিসেবে। জীবনের একটা বড় অংশ আলম স্যার ব্যয় করেছেন স্কাউট আন্দোলনে। স্কুল জীবনে আমি স্কাউট আন্দোলনের  একজন একনিষ্ট কর্মী ছিলাম। ১৯৯৪ সালে আমি প্রেসিডেন্ট পদকের জন্য নির্বাচিত হই। সে সময় আমার মতো বয়স্কাউটদের কাছে আলম স্যার ছিলেন একজন হিরো। সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাঁকে বিশেষ সম্মান করেন বলে শুনতাম। এমন একটি আলোকিত পরিবারের সদস্য সায়মা খান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার একটি ছবি দিয়েছেন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক, ইনফরমাল একটি ফেসবুক গ্রুপে যেখানে বাংলাদেশ, বিশেষ করে ঢাকা শহরের পুরনো স্মৃতিবহুল ও ঐতিহাসিক ছবিই পোস্ট করা হয়। ছবিটা একটা ফটোশ্যুটই ছিল। উনি দাবি করেননি যে গেরিলা অপারেশনে যাবার মুহূর্তে তোলা ছবি। উনি দিলু রোডে ট্রেইনিং এর সময়কার ছবি বলেছেন। একদম পাঁড় পাকিস্তানপ্রেমিক ছাড়া বাংলাদেশের প্রায় সবাই জানে ১৯৭১ সালে হাফিজুল আলমের দিলু রোডের বাড়ির মত অসংখ্য বাড়ি এক একটা গোপন ট্রেইনিং সেন্টার হয়ে উঠেছিল।  

বীর মুক্তিযোদ্ধা সায়মা খান কিংবা তার পরিবারের বাকি সদস্যরা কখনোই মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান নিয়ে খুব একটা সরব ছিলেন না। সম্ভবত শেষ বয়সে এসে কিছুটা নস্টালজিয়া (যা এই বয়সে খুব কমন), কিছুটা আশেপাশের অনেক অমুক্তিযোদ্ধাদের আস্ফালন দেখে ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে সরব হতে দেখছি এবং এটাই হওয়া উচিত। যারা তাঁকে নিয়ে ট্রল করছেন তারা খুব অনুচিত কাজ করছেন।  আর যদি মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে অপমান করাই তাদের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে বলব এটা আপনাদের সাথেই যায়, এন্ড ইটস ওকে। এই অপশক্তির মোকাবেলা আমাদেরকেই করতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা সায়মা খানকে প্রথম ট্রল করেছেন ওয়াহিদুজ্জামান এপোলো। যিনি একজন বিএনপির এক্টিভিস্ট। ট্রল করেছেন ফাহাম আব্দুস সালাম। তাকেও সবাই চেনেন। উনাদের দেখাদেখি,  আগপিছ না ভেবে বিএনপির অসংখ্য সমর্থক এই ট্রল উৎসবে মেতে উঠেছে। জামায়াত বা শিবির সমর্থকরা এরকম করলে আমি সেটাকে স্বাভাবিক বলেই ধরে নিই। তারা মুক্তিযুদ্ধ সমর্থন করেনি। তারা পরাজিত শক্তি। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের তারা ট্রল করেছে অতীতে, ভবিষ্যতেও করবে। আমরাও তাদের সেভাবেই দেখবো। তারা অন্তত অন্তরে-বাইরে একই আছেন। একদিক থেকে এটা ভালোই। কিন্তু বিএনপি দলটি গড়ে উঠেছে মাঠের মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে। এই দাবি তারা নিজেরাই করে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তিযুদ্ধের দোহাই দিয়ে তরুণ প্রজন্মদের কাছে ভোট চায়। কিন্তু তাদের মনোজগত নিয়ন্ত্রণ করে কারা? বিএনপির এই পরস্পরবিরোধী আচরণের কারণেই তারা তরুণ প্রজন্মের কাছে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। একই সাথে দেশপ্রেমিক ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এই দলটির নেতা শান্তিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনে একটা শুভেচ্ছা বার্তাও দিতে পারেন না তারই সমর্থকদের বিরোধিতার কারণে। এই দলের সমর্থক বুদ্ধিজীবী ফেসবুকে তাদের স্ত্রী কন্যাদের ছবি আপলোড করেও রাখতে পারেন না বেশিক্ষণ। বিএনপি হয়ে উঠেছে একদল ধর্মীয় উগ্রবাদী আর মুক্তিযুদ্ধ বিদ্বেষী জনগণকে নিয়ে গড়ে তোলা লিবারেল, ডেমোক্রেটিক, মুক্তিযোদ্ধাদের দল। লেখক: চিকিৎসক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়