শিরোনাম
◈ প্রধানমন্ত্রী আজ চীন যাচ্ছেন, সই হতে পারে ২০টি সমঝোতা স্মারক  ◈ কোটা বাতিলের দাবিতে দেশজুড়ে বাংলা ব্লকেড  ◈ চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংবিধান পরিপন্থী: জি এম কাদের ◈ কোটাবিরোধী আন্দোলনে তীব্র যানজট, ভোগান্তিতে ঢাকাবাসী ◈ বিদায়ী অর্থবছরে প্রবাসিরা পাঠিয়েছেন ২ হাজার ৩৯১ কোটি ৫৩ লাখ ডলার ◈ কোটা নিয়ে মন্তব্য করা আদালত অবমাননার শামিল: শিক্ষামন্ত্রী ◈ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠানো সরকারের প্রধান লক্ষ্য: মির্জা ফখরুল ◈ বগুড়ায় রথযাত্রায় বিদ্যুতায়িত হয়ে নিহত ৬, আহত ৩০ ◈ রেলের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে দক্ষিণ কোরিয়াকে বিনিযোগের আহ্বান রেলমন্ত্রীর  ◈ র‌্যাংক ব্যাজ পরলেন বিমানবাহিনী প্রধান

প্রকাশিত : ০৩ জুলাই, ২০২৪, ০২:৫৮ রাত
আপডেট : ০৩ জুলাই, ২০২৪, ০২:৫৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মায়াবন বিহারিণী হরিনী, গহন-স্বপন-সঞ্চারিণী

আহসান হাবিব

আহসান হাবিব: [১] শৈশব থেকে আজ অবধি কত গান শুনলাম। সব গানের অন্তর্নিহিত ভাব বা ব্যঞ্জনা কি বুঝি? বুঝি না। যদি রবীন্দ্রসংগীতের কথাই বলি, তবে এটা খুব সত্যি যে অজস্র গান আমরা কেবল শুনি, কিন্তু এর ভেতরের ভাবসম্পদ উপলব্ধি করি না। এর একটা প্রধান কারণ গানের সুর। গানের প্রধান আকর্ষণ এর সুর। এরপর কথা। কখনো কখনো কথার সৌন্দর্য এবং গভীরতা সুরকে ছাড়িয়ে যায়। তবে সেই গানটি সবচেয়ে সেরা যা কথা আর সুরের মালায় সুগ্রথিত। রবীন্দ্রসংগীতের বেলায় কথা এবং সুরের যে যুথবদ্ধতা তা একদিকে সংগীত অন্যদিকে সাহিত্যের নান্দনিকতাকে শিল্পমণ্ডিত করে তোলে। আজকে সেরকম একটি গানের কথা বলছি। আমার মনে হয় গানটি বহুশ্রুতর তালিকায় প্রথমের দিকে থাকবে। গানটি হলো: মায়াবনবিহারিণী হরিণী/গহনস্বপনসঞ্চারিণী/কেন তারে ধরিবারে করি পণ অকারণ। 

নিখাদ প্রেমের একটি গান। কিন্তু প্রেমবোধের কী অপার মহিমা। প্রেমাস্পদকে কি অসাধারণ এক প্রতীকের মাধ্যমে তুলে ধরছেন। বলছেন সে এক হরিণ যে এমন এক বনে ঘুরে বেড়ায় তার নাম মায়াবন। প্রেমিকের হৃদয় যেন মায়া দিয়ে নির্মিত এক বন। কিন্তু প্রমিকের মন তাকে কোথায় স্থান দিয়েছে? স্বপ্নের গহন তলে। সেখানে সে যেন ছুটোছুটি করছে। এমন এক অধরা প্রেমাস্পদ যাকে পাওয়ার জন্য মানুষ, এখানে প্রেমিক উতলা হবে, কেননা এ যে মানুষের মন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বলছেন তাকে পাওয়ার জন্য যে চেষ্টা বা পণ করছেন তা আসলে অকারণ। কেন? কারণ যে বাস করে স্বাধীন এক মায়াবনে, তাকে ধরতে যাওয়া বৃথা। এরপরেই তিনি প্রেমের সুমহান সৌন্দর্য নির্মাণ করছেন। বলছেন:

থাক থাক নিজ-মনে দূরেতে/আমি শুধু বাঁশরীর সুরেতে/পরশ করিব ওর প্রাণমণ। যে স্বাধীন, আপনমনে ঘুরে বেড়ায় বনে, তাকে ভালোবাসা যায় কিন্তু একান্ত আপন করে পাওয়া চলে না। বরং ও থাকুক যেমন আছে, আমি শুধু বাঁশির সুরে তাকে স্পর্শ করবো। কোথা থেকে? দূর থেকে। এই যে প্রেমাস্পদকে দূর থেকে ভালোবাসা, এটাই প্রকৃত প্রেম। প্রেম যে না পাওয়ার বেদনা রবীন্দ্রনাথ এই গানটিতে কত আগে চমৎকার করে বলে গেছেন। প্রেম যদি স্থুল হয়, তবে তাকে পাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চলে। হয়তো সে তাকে পায়, কিন্তু পাওয়ার ঠিক পরেই তাকে হারিয়ে ফেলে। শেষের কবিতায় যোগমায়া অমিতকে বলেছিলেন: ধর, তুমি লাবণ্যকে পেয়ে গেছো, কিন্তু পাওয়ার পর যদি তাকে পাওয়ার আকাক্সক্ষা না কর তাহলে তাকে কখনোই পাবে না। লাবণ্যকে অমিত দৈহিকভাবে পায়নি বলেই সে তাকে আজীবন পূর্ণভাবে পেয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ প্রেমের যে দর্শন আমাদের কাছে হাজির করছেন, তার তুলনা হয় না। হেলাল হাফিজ বলেছিলেন: 

মিলনে প্রেম মলিন হয় এই গানের শেষ চার লাইনে তিনি প্রকৃত প্রেমের ধ্বজা উড়িয়েছেন: দূর হতে আমি তারে সাধিব/গোপনে বিরহডোরে বাঁধিব/বাঁধনবিহীন সেই যে বাঁধন। প্রেমের শ্রেষ্ঠ সৌন্দর্য যে বিরহ, রবীন্দ্রনাথ তা ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত হলেন না, বরং তার প্রেমাস্পদকে গোপনে এই বিরহ ডোরেই বাঁধলেন যা সত্যিকারের বাঁধনবিহীন কিন্তু সে বাঁধন কেউ কখনো ছিঁড়তে পারবে না। [২] গানটিতে প্রেমের যে ছবি অঙ্কিত হয়েছে, তা এক কথায় অতুলনীয়। বহুশ্রুত এই গান যেন এতোকাল পরে সত্যিকারভাবে আমার মননে ধরা দিল। আমি নতুন করে এই গানের প্রেমে মজ্জিত হলাম। লেখক: কথাসাহিত্যিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়