শিরোনাম
◈ পদ্মা সেতু প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দিবেন প্রধানমন্ত্রী ◈ সচিব সভায় সম্পদের হিসাব প্রকাশ নিয়ে মতানৈক্য ◈ ঈশ্বরদীতে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৫ জন নিহত ◈ বিএনপির অবস্থান সবসময় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিপরীত মেরুতে: ওবায়দুল কাদের ◈ প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের কর্মবিরতিতে অচল ৩৫ বিশ্ববিদ্যালয় ◈ ব্যয়ের ক্ষেত্রে আবারও কৃচ্ছ সাধনের নীতিতে সরকার ◈ ওমান শিগগিরই বাংলাদেশীদের জন্য ওয়ার্কিং ভিসা চালুর চেষ্টা করছে ◈ ধর্ষণ মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মুশতাক-ফাওজিয়া ◈ সিলেট কাস্টমস কমিশনার এনামুল হকের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ ◈ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসার কিছু নেই: ড. ইউনূস

প্রকাশিত : ০৩ জুলাই, ২০২৪, ০১:২১ রাত
আপডেট : ০৩ জুলাই, ২০২৪, ০১:২১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হোলি-আর্টিজানে জঙ্গি হামলা : ৮বছরে আমরা কতোটা এগিয়েছি?

মুজিব রহমান

মুজিব রহমান: আট বছর আগে ১ জুলাই সারা বিশ্বের মানুষ বাংলাদেশের রাজধানীর গুলশানে হোলি-আর্টিজানে জঙ্গিদের তাণ্ডব দেখেছিল। জঙ্গিরা ১৭জন বিদেশি ও দুজন পুলিশসহ সহ ২২ কে হত্যা করেছিল। দেশ-বিদেশের চাপে সরকার জঙ্গিদের দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেয় এবং জঙ্গিরাও তাদের রূপ বদল করে। ২০১৮ সালের ১১ জুন তারা টার্গেট করে খুন করে প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চু ভাইকে। তাঁর খুনিরাও ক্রস-ফায়ারে মারা পড়েছে। বিশ্বব্যাপীও জঙ্গিদের অবস্থানের পরিবর্তন এসেছে। আফগানিস্তান, নাইজেরিয়া, ইরান, সিরিয়া, পাকিস্তান, ইরাক ইত্যাদি দেশে এখনো মৌলবাদ রয়েছে। তবে তাদের প্রতিও চাপ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। নাইজেরিয়াতে মুসলিম জঙ্গি বোকো-হারাম অহরহই ছাত্রীদের তুলে নিয়ে যৌনদাসী বানাতো। ওদের প্রতিও চাপ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। আল শাদাব ও আল কায়দাও সক্ষমতা হারিয়েছে। এখনো আফগানিস্তানে মৌলবাদী তালেবানরা ক্ষমতা দখল করে মানবতাবিরোধী তাণ্ডব চালাচ্ছে। ইরানেও এক মাশা আমিনী ইস্যুতে বহু মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু মানুষও প্রাণ দিয়ে মৌলবাদের প্রতিবাদ করেছে এবং কথিত নীতি পুলিশের নীতি বদলাতে ভূমিকা রেখেছে। তাই বলবো মানুষের অগ্রগতি হয়েছে। 

মুন্সিগঞ্জে হৃদয় মণ্ডলকে অসম্মান করে বিতাড়িত করতে চেয়েছিল মৌলবাদী ছাত্ররা। নড়াইলে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়েই বিতাড়িত করতে চেয়েছিল। প্রতিবাদে দুজন টিকে যায়। অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরানোর সময় কাছাকাছি ছিলেন এসপি ও ডিসি মহোদয় সাথে আড়াইশ পুলিশ। জুতার মালা পরানোর সময় অধ্যক্ষের দুইপাশেও ছিলেন পুলিশ। মৌলবাদীদের চাওয়া পূরণে তারা ভূমিকা রাখে। তাদের শাস্তি দেয়া না গেলেও সারাদেশে মুক্তচিন্তার মানুষ প্রতিবাদ করতে পেরেছে। তবে বাংলাদেশেও মৌলবাদীরা চাপে পড়েছে। তাদের সেই চইচই আর নেই। তবে ঝুঁকি রয়েছে। প্রশাসনে এখনো বহু মৌলবাদী ঘাপটি মেরে রয়েছে। তবে সাধারণ মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। তারা বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিদের ধরিয়ে দিয়েছে। ওয়াজ মাহফিলেও জঙ্গিদের আস্ফালন কমে এসেছে। সেখানে মাঝেমধ্যেই স্থানীয় মানুষ জঙ্গি বক্তব্যের প্রতিরোধ করে দিয়েছে। তবে ঝুঁকিমুক্ত হয়নি বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে মৌলবাদী গোষ্ঠী স্পষ্টতই রূপ বদলে নিয়েছে। তারা ওয়াজে অনবরতই জিহাদী জোস সৃষ্টি করে আসছিল। এভাবে অসংখ্য তরুণের মধ্যে রোপন করা হয় বিষবৃক্ষের বীজ। আমরা দেখেছি তারা হঠাৎ করেই ভাস্কর্য বিরোধী সহিংস আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। তার আগে সামান্য ফেসবুকের পোস্টকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের উপর হামলা, বাড়ি-মন্দির ভাঙ্গচুর ও পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটছিল। এরপরই তারা হঠাৎই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ সমস্ত ভাস্কর্যবিরোধী জিহাদী সহিংস আন্দোলন গড়ে তোলে। এগুলো স্পষ্টতই ছিল জঙ্গি চেতনার প্রতিফলন। আমরা হলি-আর্টিজানের জঙ্গিদের বলতে শুনেছি, ‘কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা শহীদ হয়ে বেহেস্তে প্রবেশ করবে এবং হুরপরীরা তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।’ কতটা অকাট মূর্খ হলে এমন ধারণার বশবতী হয়ে এভাবে খুনের উৎসব করতে পারে। এমন মতাদর্শ আমরা শাহজাহান বাচ্চু ভাইর খুনিদের কাছ থেকেও শুনেছি। জঙ্গিদের মধ্যে এমন ধারণা দেয়া হতো যে, শাহজাহান বাচ্চুকে হত্যা করতে পারলে, সরাসরি বেহেস্তে চলে যাবে। সেখানে কোন কাজ করতে হবে না এবং ৭০টি হুরপরী তাদের যৌন চাহিদা মেটাবে। কী জঘণ্য ভয়ানক মানসিকতা। ওদের অলস মস্তিষ্ক যে শয়তানের আখড়ায় পরিণত হয়েছে তারই প্রমাণ দিয়েছে। পৃথিবীকে এগিয়ে নিতে হলে, কাজ করে যেতে হবে। ওরা কাজকে ঘৃণা করে কারণ ওরা কাজটাই শিখেনি আর দিনভর সেক্স ভাবনা নিয়েই পড়ে থাকে। ছোট ছোট বালকদের উপরই তা সেক্স প্রাকটিস করে। কী জঘণ্য মানসিকতা।

যারা মৌলবাদ বিরোধী ও বিজ্ঞানমনস্কতার পক্ষে লিখেন ও কথা বলেন তারাও জানেন, দেশে এখনো হাজার হাজার এমন ভাবাদর্শের মানুষ রয়েছে যারা হুরপরীর আশা নিয়ে জিহাদ করার অপেক্ষায় আছে। এদের অনেকেই বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ও প্রশাসনে ঘাপটি মেরেও আছে। প্রগতিশীল চেতনার মানুষদের অহরহই হুমকি দেয়া হয়। ফেসবুকেও এটা অহরহই হয়ে আসছে। প্রগতিশীলরা কখনোই আইসিটি এক্টে ওদের বিরুদ্ধে মামলা করতে যায় না। মৌলবাদীরাই কথায় কথায় এই আইন ব্যবহার করে মুক্তচিন্তার গতি রোধ করতে চায়। এখন হেফাজতের কতিপয় নেতা জেলে আছে। তাদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। তারাও জেল থেকে বেরিয়ে আসছে। তাদের লক্ষ লক্ষ অনুসারী রয়েছে মাঠে। তাদের ভাবাদর্শ বদলানোর জন্য দৃশ্যমান কাজ খুব বেশি হয়নি। যেমন পাঠ্যবই বিজ্ঞানভিত্তিক করা খুবই জরুরী ছিল। হয়েছে উল্টোটা। বিজ্ঞানবিরোধী কোন কিছুই পাঠ্যভূক্ত করা যাবে না- এমন নীতিতেই শিক্ষা চালাতে হবে। রাষ্ট্রীয় আইনও হতে হবে বিজ্ঞানভিত্তিক। মতপ্রকাশের অবাধ স্বাধীনতা থাকা দরকার। মানুষ বিতর্ক করতে করতেই সত্যকে উপলব্ধি করবে। মৌলবাদীরা বিতর্কে অনবরত পরাজিত হতে হতে এক সময় অবশ্যই বিজ্ঞানকেই বেছে নিবে এবং বিজ্ঞান জয়ী হবে। মৌলবাদ আস্তে আস্তে শেষ হয়ে আসবে। তা প্রত্যাশিত গতিতে হচ্ছে না। এজন্য মৌলবাদ বিরোধী রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক তৎপরতা বাড়াতে হবে।

তারা রূপ বদল করে অপেক্ষায় আছে অনুকূল সময়ের। এখন পৃথিবীতে এমন একটিও উন্নত রাষ্ট্র নেই যেখানে মৌলবাদ আধিপত্য বিস্তার করছে। পাশ্চাত্যের দেশগুলো মৌলবাদের অন্ধ গহ্বর থেকে বেরিয়ে এসে বিজ্ঞানমনস্কতার চর্চা করছে, তারা যুক্তিবাদী হচ্ছে। সৌদী আরব পেট্রোডলারে ভাসলেও সেখানকার মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানের আলো পৌঁছেনি। ফলে এদেশগুলো শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আবার পিছনে হটতে থাকবে। মৌলবাদ তাদের আলোর মুখ দেখতে দিবে না। তাই দেশে জঙ্গিবাদকে, উগ্রমৌলবাদকে বা আতঙ্কবাদীদেরকে সমূলে উচ্ছেদ করতে হলে বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এজন্য বহুজনকেই আলো জ্বালাতে হবে। যেদিন এমন সমাজ দেখব সেদিনই বলতে পারবো আমরাও জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়েছি। গত আট বছরে জঙ্গিরা হলি আর্টিজানের চেয়ে ভয়ানক হামলা চালায়নি তবে দেশে মৌলবাদের বিস্তার বেড়েছে। আবার এ সময়ে প্রগতিশীল চেতনার মানুষও বেড়েছে। আমাদের অগ্রগতিও কম নয়। এখন অনেকেই বলেন, ‘আপনারা সমাজকে আলোকিত করছেন’ তখন আশার আলো তৈরি হয়। সম্প্রতি একজন অটো-চালক বলল, ‘আপনার লেখা পড়ি। আপনি অনেক ভাল কাজ করছেন দেশের জন্য। আপনার ভাড়া লাগবে না।’ আমি বিস্মিত হলাম তবে ভাড়াও দিলাম। আট বছরে এই বদলটা চোখে পড়ে। কথা বলার আরো সুযোগ থাকলে যুক্তির ধারে অবশ্যই মৌলবাদের পতন ঘটতো। কিন্তু কথা বললেই ধর্মানুভূতির মামলা হলে, এই অগ্রগতির গতি থেমে যাবে। মিথ্যা মামলায় কোন অগ্রসর মানুষকে হয়রানি করলে তার জন্য দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পাঠ্যবই আরো মৌলবাদ ঘেঁষা হয়েছে। ফলে অগ্রগতি কঠিন করে দেয়া হয়েছে। তবুও সত্য, আলো ও বিজ্ঞানের কথা বলতে হবে। যুক্তিবাদী ও চিন্তাশীল মানুষ গড়ে তুলতে আমাদের কথা বলার বিকল্প নেই। আমাদের কথা বলা একদিকে অন্ধকার দূরে করে আলোকিত সমাজ গড়বে অন্যদিকে মৌলবাদীদের কোণঠাসা করবে। আমরা কোনভাবেই আরেকটি হলি আর্টিজান দেখতে চাই না। অসভ্য-বর্বরদের হাতে আর একজনও আলোকিত মানুষ যেনো হত্যার শিকার না হয়। এজন্যই জ্ঞান ও যুক্তির শিখা জ্বালিয়ে রাখতে হবে। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়