শিরোনাম
◈ কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙনে জাতীয় গ্রিডের টাওয়ার নদীতে বিলীন ◈ ভারতে থাকার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, কোন আইনের বলে ভারতে থাকবেন শেখ হাসিনা? ◈ (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার ◈ স্থিতিশীল ডলারের দর, ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও ◈ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘গ্যারান্টিতে’ নগদ টাকার সংকট কাটছে যে ৫ ব্যাংকের ◈ হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপপ্রচার চলছে, জাবিতে কোন কমিটিই নেই : ছাত্রদল ◈ গণপিটুনিতে মৃত্যু: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দুঃখপ্রকাশ, বৈষম্যবিরোধীদের নিন্দা, ফেসবুকে নানা সমালোচনা ◈ ভারতের গোলা যাচ্ছে ইউক্রেনে, ক্ষুব্ধ রাশিয়া ◈ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সুনামগঞ্জে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার গ্রেফতার ◈ মব জাস্টিস শুধু সহিংসতা ও অন্যায় সৃষ্টি করে: সমন্বয়ক হাসনাত

প্রকাশিত : ০২ মে, ২০২২, ০৩:২৩ দুপুর
আপডেট : ০২ মে, ২০২২, ০৩:২৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দীপক চৌধুরী : ‘সরকার পতনের আন্দোলন’ শব্দগুলো বিএনপি যেভাবে হাস্যকর করে তুলল

দীপক চৌধুরী : নভেম্বর ১৮, ২০১০-এর কথা। সেদিন  ‘সর্বশক্তিতে’ সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল বিএনপি। ফখরুল দলের যুগ্ম-মহাসচিব ছিলেন তখন। 
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকার কতো দিন ক্ষমতায় আছে  সে হিসেব না কষে সর্বশক্তি নিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করবে বিএনপি।’

ঈদের পরদিন ছিল সেদিন। গুলশানে বিএনপি  চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদেও সঙ্গে তিনি একথা বলেন। এর আগে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। এই বাড়িটি সেনাবাহিনীর জায়গা ছিল। 
সেদিন মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, ‘সরকার জনপ্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ। একদলীয় শাসন কায়েম করে  দেশকে দুমড়ে-মুচড়ে  ফেলেছে। গুম, খুন, নির্যাতন ও বিএনপি  নেতাকর্মীদের নামে একের পর এক মিথ্যা মামলার পর তারা বিএনপি  চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও বাড়ি  থেকে উচ্ছেদ করেছে।’
কথাটা কতদিন আগের? এগারো বছর আগের।

২০১৩-এর ৭ মার্চ। সেদিন বিএনপি বলেছিল, ‘আজ থেকে সরকার পতনের একদফা।’ এর আগের দিন ১৮ দলীয় জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হরতালের ডাক দেয়। লাগাতার ৪ দিন হরতাল ছিল। প্রচণ্ড দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। তখন বিরোধী দলীয়ন চিফ হুইফ ছিলেন জয়নুল আবদীন ফারুক। বিএনপি নেতা ফারুক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, ‘আজ  বৃহস্পতিবার  থেকে বিরোধী দল সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন শুরু করেছে। বুধবার রাতে আঠারো দলীয়  জোটের এক সভায় সরকার পতনের আন্দোলন সূচনার এ সিদ্ধান্ত  নেয়া হয়।’ 

এই হরতাল নিয়ে চলতি সপ্তাহে বিরোধী বিএনপি ও জামায়াত  মোট চারদিন হরতাল কর্মসূচী পালন করায় পুরো সপ্তাহ জুড়েই কার্যত বাংলাদেশে অচলাবস্থা বিরাজ করছিল। অবশ্য সরকার এতে  মোটেই কাবু হয়নি।  মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছিল চরমে। 
হরতাল চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও  বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে রাতেই ঢাকায় বিজিবি  মোতায়েন করা হয়। কিন্তু সরকার পতনের আন্দোলনে অবশেষে শূন্য হাতেই ঘরে ফিরে বিাএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের জোট।

এর আগে বিরোধী  জোট আগামী নির্বাচন (২০১৪-এর ৫ জানুয়ারি) একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করবার দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে আসছিল। সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই বিধানটি বাতিল করে আওয়ামীলীগ  নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার।

এরপর বহুবার, বহু রমজান মাসে, বহু ঈদের পর বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগ সরকার পতনের হুমকি দিয়েছে। হুঙ্কার দিয়ে বলেছে, এবার আর একদফার ফসল ঘরে না তুলে তারা ফিরবে না।

২০ নভেম্বর, ২০২১। রাজধানীর নয়াপল্টনের পার্টি অফিসের সামনে দিয়ে আসছিলাম। চোখে পড়ল বিএনপির বড় ব্যানার। এতে লেখা ছিল, বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে গণ-অনশন। 

সেদিন “আজ  থেকে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হলো বলে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি তখন  বলেছিলেন,  বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে তাকে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। আর তা না হলে গণঅনশনের মধ্য দিয়ে আজকে আন্দোলন শুরু হলো, সরকার পতনের।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি  সেদিন বলেছিলেন, “আসুন দুই হাত তুলে শপথ গ্রহণ করি,  দেশনেত্রীকে তার চিকিৎসার জন্য বিদেশে  প্রেরণ না করা পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না।’’

দাঁড়িয়ে পুরো সমাবেশটি পর্যবেক্ষণ করলাম, শুনলাম বক্তাদের কথা। ‘তোষামোদি বক্তৃতা’ এমন কমই দেখেছিও শুনেছি।  বিএনপি নেতা প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন  চৌধুরী অ্যানীর সঞ্চালনায় খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে অনশন কর্মসূচিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্ব করেন। বক্তৃতা করেন  দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার  মোশাররফ  হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু,  বেগম  সেলিমা রহমান, ভাইস  চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল  নোমান, আহমেদ আযম খান, শামসুজ্জামান দুদু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু,  জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন  খোকন, বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু,  স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি  মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের আহ্বায়ক হাসান জাফির তুহিন সদস্য সচিব শহীদুল ইসলাম বাবুল, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুল হক  খোকন সাধারণ সম্পাদক ইকবাল  হোসেন শ্যামলসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের  নেতাকর্মী।

২২ এপ্রিল, ২০২২। 
জুনের মধ্যেই সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন বলে  বিএনপি ঘোষণা করলো। এদিন এ ঘোষণা দেন বিএনপির সাবেক মেয়র ও মন্ত্রী মির্জা আব্বাস। 
রাজধানীর ইস্কাটন এলাকায়  লেডিস ক্লাবে আয়োজিত ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠান ছিল।  জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
“কোন ঈদের পর বিএনপি আন্দোলন শুরু করবে’ তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের  এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপি নেতা আব্বাস বলেন, আন্দোলন শুরু করতে দিন-তারিখ দিতে হয় না। বুঝতে পারবেন আন্দোলন শুরু হলেই। যখন শুরু হবে বুঝতে পারবেন,  কোন ঈদের পর আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলন শুরু হয়ে  গেছে এটা মাথায় রাখতে হবে।  রোজার জন্য খানিকটা স্থগিত আছে।  রোজা  গেলে বুঝতে পারবেন।” 
আমরা দেখেছি, বিএনপি-জামায়াত  আন্দোলন কর্মসূচিতে হরতাল-অবরোধ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ হয়েছে। কঠোর কর্মসূচি দিয়েছে। 

প্রায়  দেড় দশকেরও  বেশি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। পুরোটা সময় জুড়ে নানা ইস্যুতে আন্দোলনের ডাক দিয়েও ফল ঘরে তুলতে পারেনি দলটি। দলটির আন্দোলনের সীমাহীন ব্যর্থতা দেখেছে বাংলার জনগণ।  

গেল বছরের প্রায় পুরোটা  খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে আন্দোলন করলেও তাতেও সফল হয়নি দলটি। আদৌ কী সহজ বা সম্ভব? আর কত হাস্যকর হবে  সরকার পতনের সেসব ঘোষণা।  

লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়