শিরোনাম
◈ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অন্যদের জন্য মডেল: প্রধানমন্ত্রী ◈ টেকনাফ সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে রোহিঙ্গা যুবক নিহত ◈ ১৫ জুলাই ঢাকা-বেইজিং সরাসরি ফ্লাইট চালু হচ্ছে  ◈ খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ: ডা. জাহিদ ◈ এইচএসসির দ্বিতীয় দিনে আট বোর্ডে অনুপস্থিত ১০ হাজার ৪৪০ পরীক্ষার্থী ◈ কোটা বাতিলের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ শিক্ষার্থীদের, বুধবার থেকে অবস্থান কর্মসূচি ◈ টানা ভারী বর্ষণে সাজেকে আটকা ৭ শতাধিক পর্যটক ◈ দুদকের মামলায় সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে চার্জশিট ◈ সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসেব দিতে হবে: হাইকোর্ট  ◈ আগস্টে বন্যার আশঙ্কা, মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

প্রকাশিত : ০১ জুলাই, ২০২৪, ০৩:৫২ রাত
আপডেট : ০১ জুলাই, ২০২৪, ০৩:৫২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সঙ্গীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

কবীর সুমন

কবীর সুমন: সঙ্গীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খানের কাছে নাড়া বেঁধেছিলেন বাংলার গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় গেলো শতকের পাঁচের দশকে। চুনোপুঁটিরাও কিছু বছর যাবৎ নিজেদের নামের আগে যে কথাগুলো ব্যবহার করে চলেছে এবং সেই সঙ্গে বাকি সমাজ, সেই কথাগুলো (হিন্দু পুরুষ হলে পণ্ডিত, মুসলমান পুরুষ হলে ওস্তাদ আর হিন্দু-মুসলমান-খৃস্টান-শিখ-বৌদ্ধ মহিলা হলে বিদূষি) প্রকৃত গুণীদের নামের আগে ব্যবহার করতে পারবো না। প্রবীণ বয়সে গুরুস্থানীয়া সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় HMV (SA RE GA MA) সংস্থাকে ধরে আমায় আজ্ঞা করেছিলেন তাঁর জন্য আধুনিক বাংলা গান লিখতে ও সুর করতে। আমায় বলেছিলেন, ‘সুমন, আমি আর সন্ধ্যা মুখুজ্যে থাকতে চাই না। আমার ডিপার্চার ঘটিয়ে দাও। তোমার আধুনিক গানের স্টাইল আমায় শেখাও, ওই রকমের গান বাঁধো আমার জন্য। 

৬ বছরে মোট ১২টি গান বেঁধেছিলাম তাঁর জন্য, আমার পরিচালনায় তিনি রেকর্ড করেছিলেন। ৬টা বছর কাজ করেছিলাম তাঁর সঙ্গে। দেখেছিলাম সঙ্গীতকে তিনি কোন চোখে দেখেন। তাঁর গুরু আচার্য বড়ে গোলাম আলি খান সাহেবের কথা বলতেন, তাঁর গল্প শোনাতেন। একবারও নিজেকে ‘কাসুর পাতিয়ালা’ ঘরের ধারকবাহক বলেননি। কোনো ঘরের নামই করেননি। বারবার বলেছেন, শিষ্যা হিসেবে নাড়া বাঁধার যজ্ঞের সময়ে ‘বাবা’ (আচার্য বড়ে গোলাম আলি খান) তাঁকে বলেছিলেন, ‘মেয়ে, সঙ্গীতশিক্ষা যদি এক টাকা পরিমান হয় (পাঁচের দশকে চার পয়সায় এক আনা, ষোলো আনায় এক টাকা ছিল), তাহলে গুরুর কাছে নেওয়া তালিম বড়জোর এক আনা থেকে দেড় আনা। বাকি পুরোটাই, মেয়ে, তুমি কী কী শুনেছ, শুনছ, শুনবে।’ - যজ্ঞের আগুনের সামনে পট্টবস্ত্র পরে আহুতি দেওয়ার ভঙ্গিতে বসে দেবী সরস্বতীর বরপুত্র বড়ে গোলাম আলি খান তাঁর মেয়ে সন্ধ্যাকে বলেছিলেন। একবারও কাসুর পাতিয়ালা ঘরানার দিব্যি করে লেকচার দেননি। তিনি বলেছিলন সঙ্গীতের কথা, গানবাজনার কথা।

এই কথাগুলির কোনও রেকর্ডিং আমার কাছে নেই। এই রাজ্যে ক্লাসিকাল মিউজিকের স্বঘোষিত ও সরকার সমর্থিত গার্জেন যারা তারা আমার কথা অবিশ্বাস করতেই পারে। যেটা অস্বীকার করতে পারবে না। সন্ধ্যাদেবীর জন্য আমি ১২টি গান বেঁধেছিলাম, তিনি রেকর্ড করেছিলেন দমদমে ঐগঠর স্টুডিয়োয়। রেকর্ডিংগুলো আছে। সারা জীবন নানান ধান্দাবাজি আর পলিটিক্স করে যে ব্যক্তি শুধু আত্মপ্রচার করে গেল আর নিজেকে এমনকি বড়ে গোলাম আলি খানের শিষ্য বলার উপক্রম করে গেলো তার এবং তার মতো ব্যক্তিদের কথা কাউকে বলতে হবে। নয়তো একটা গোটা প্রজন্ম ভুল জিনিস জানবে। তাছাড়া সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করার বান্দা আমি নই।

যে ছবিটি ইন্টারনেট থেকে এখানে দিলাম, তাতে আচার্য বড়ে গোলাম আলি খানের সঙ্গে  শ্রীমতি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আর আচার্যপুত্র জনাব মুন্নাব্বর আলি খানকে দেখা যাচ্ছে। নামের বানান বেঠিক হলে ক্ষমাপ্রার্থী। আচার্যর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলের কাছেই তালিম নিয়েছিলেন বাংলার গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। শুনেছি, বর্তমানে যিনি কাসুর পাতিয়ালা টিমের ক্যাপ্টেন বলে নিজেকে জাহির করে থাকেন তিনি সন্ধ্যার মৃত্যুর পর বলেছিলেন, ‘উনি আমার গুরুবোন ছিলেন’। চমৎকার। তাহলে, আচার্যপুত্রর কাছে শুধু নয় আচার্য বড়ে গোলাম আলি খানের কাছেও আজকের এই সঙ্গীতজ্ঞটি তালিম নিয়েছিলেন। ঠারেঠোরে ধাপ্পা দিয়ে চালিয়ে দেবে কেউ আর আমরা সবাই ফুলবেলপাতা আর লাড্ডুর প্যাকেট হাতে তার পেছনে লাইন দেবো, কথায় কথায় পেন্নাম ঠুকবো। আমাদের দেশের, জাতির অনেক ত্রুটি থাকতে পারে কিন্তু এতোটা দুরবস্থা আমাদের হয়নি। 

আমি খোলাখুলি জানাচ্ছি। আসুন, ঘরানাহীন এই গানবাজনাদাস কবীরের সঙ্গে মঞ্চে আসুন। বাংলা খেয়ালকে আপনারা স্বীকৃতি দিতে চান না। আসুন, প্রকাশ্যে আপনি আপনারা আপনাদের কাসুর পাতিয়ালার নিশান তুলে হিন্দি বা পাঞ্জাবিতে খেয়াল গেয়ে শোনান সবাইকে। আমি খেয়াল গাইব আমার মা-ভাষা বাংলায়। বন্দিশগুলি আমারই বাঁধা। আমি আপনাদের মতো কসরৎ জানি না, খেয়ালকে athletics, vocal acrobatics-এর সমগোত্রীয় মনে করি না। অসম্ভব দ্রুত তান করে বাজি মাৎ করতে চাই না। ঠিক যেমন আমি মনে করি না আমার প্রেমিকা তাঁকে আমি কতটা বেগে এবং কতরকম কায়দাকসরৎ করে চুমু খেতে বা আদর করতে ও সুখ দিতে পারি তার নিরিখে আমার প্রেম ও কামনার বিচার করেন। আমি গান গাই। খেয়াল গান। আসুন, মঞ্চে আসুন পাশাপাশি হিন্দুস্তানি ও বাংলা সঙ্গীতের এবং শ্রোতাদের সেবা করি। জয় কুমার গন্ধর্ব, যিনি ঘরানা, গুরুকূল এসব মানতেন না, সাধারণ মানুষের জন্য খেয়াল গাইতেন। জয় স্বামী বিবেকানন্দ, যিনি বলেছিলেন, বাংলায় খেয়াল হইবে না কেন। জয় বাংলা। জয় সমকাল। জয় গিটার হাতে ঘুরে বেড়ানো, গিটার নিয়েই খেয়াল ঠুংরি গাইতে চাওয়া আমাদের নবীনদের দল।Ñকবীর। ৩০, ৬, ২৪। লেখক: গীতিকবি ও সংগীতশিল্পী

আচার্য বড়ে গোলাম আলি খানের সঙ্গে  শ্রীমতি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আর আচার্যপুত্র জনাব মুন্নাব্বর আলি খান

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়