শিরোনাম
◈ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অন্যদের জন্য মডেল: প্রধানমন্ত্রী ◈ টেকনাফ সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে রোহিঙ্গা যুবক নিহত ◈ ১৫ জুলাই ঢাকা-বেইজিং সরাসরি ফ্লাইট চালু হচ্ছে  ◈ খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ: ডা. জাহিদ ◈ এইচএসসির দ্বিতীয় দিনে আট বোর্ডে অনুপস্থিত ১০ হাজার ৪৪০ পরীক্ষার্থী ◈ কোটা বাতিলের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ শিক্ষার্থীদের, বুধবার থেকে অবস্থান কর্মসূচি ◈ টানা ভারী বর্ষণে সাজেকে আটকা ৭ শতাধিক পর্যটক ◈ দুদকের মামলায় সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে চার্জশিট ◈ সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসেব দিতে হবে: হাইকোর্ট  ◈ আগস্টে বন্যার আশঙ্কা, মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

প্রকাশিত : ০১ জুলাই, ২০২৪, ০৩:৫০ রাত
আপডেট : ০১ জুলাই, ২০২৪, ০৩:৫০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

টক্সিক মানুষের অন্তঃস্থ ঘা যেন কাউকে আক্রান্ত না করে!

হাসনাত এ কালাম

হাসনাত এ কালাম: আমাদের জীবনে যেসব মানুষ আচমকা রূঢ় ও অসহনীয় আচরণ করে, তাদের অধিকাংশই মূলত একটা কমন বৈশিষ্ট্য শেয়ার করে। সেটা হচ্ছে তারা ভিতরে ভিতরে নিজেদের নিজেদের নিয়ে প্রচণ্ড ইনসিকিউরিটিতে ভুগে। আমি এটারে বলি, ‘Losers Tantrums’ হয়তো তার নিজের মধ্যকার অন্তঃস্থ কোনো ক্ষত, যা আর সারেনি। তাই তার এক গোপন, অথচ অসহনীয় ব্যর্থতার যন্ত্রণা সে অন্য মানুষের উপর চ্যানেল করে। এই টক্সিক মানুষদের এই যাতনা যেকোনো কিছু হইতে পারে। কিন্তু ভিক্টিম হয় কিছু মানুষ যাদের সারাজীবন ট্রমা বয়ে বেড়াতে হয়। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে এখন অবধি যত রূঢ় ও টক্সিক মানুষ পেয়েছি, তার সবার মধ্যেই এই একটা কমন বৈশিষ্ট্য পেয়েছি। সেটা হচ্ছে, উপরে উপরে নিজেদের বড় ভাবে এরা। কিন্তু খেয়াল করলেই দেখবেনÑ এদের মধ্যে একধরনের সাটল ইনসিকিউরিটি এরা বয়ে বেড়ায়।

পাকিস্তানি ব্রিটিশ লেখক মোহসিন হামিদ-এর লেখা, ‘How to be Filthy Rich in Rising Asia’- উপন্যাসের একটা দৃশ্য আছে। প্রোটাগনিস্ট ছেলেটা স্কুলে গিয়ে প্রচন্ড মার খায় একদিন। ওর অপরাধ? একটা গ্রামের ক্লাসরুম। ওই দৃশ্যে, একজন শিক্ষক ১২-এর নামতা পড়ানোর সময় বলে- বারো বারো একশো চৌত্রিশ। ক্লাসভর্তি ছেলেরাও তাই আউড়ায়। কিন্তু পুরো ক্লাসে একটাই মনোযোগী ছাত্র, ওই প্রোটাগনিস্ট। সে শুধরে দিয়ে বলে, এটা একশ চুয়াল্লিশ হবে স্যার।

আর এতেই তেতে উঠে ওই টিচারের রাগ। সে  ক্লাসভর্তি বাচ্চাদের সামনে বলে, আমি তো তাই বললাম। তুই না ভুল বলছিস! এবং ওই টক্সিক টিচার প্রোটাগনিস্টকে কানমলা দিতে যায়। কিন্তু হাতে বালু দিয়ে দীর্ঘসময় কানমলা দেয়াতেই তো রাগ থামে না। কেননা মোহসিন হামিদের ভাষ্যে, রাগ তো কেবল নামতার জন্য না।

এই কানমলা তো নিজের অপ্রাপ্তি আর ইনসিকিউরিটি ঘুচানোর মোক্ষম হাতিয়ার। এই কানমলা দিতে দিতে শিক্ষকের চোখে ভাসে সে কখনোই স্কুল টিচার হতে চায়নি। সে হতে চেয়েছিল, পল্লী বিদ্যুতের মিটার রিডার। যেই ড্রিম জব তার হয় নাই ঘুষ দিয়েও। তাই ব্যর্থ ম্লান একজন মানুষ, তার উজ্জ্বল ছাত্রকে শাস্তি দেওয়ার সময় কল্পনা করে, তার দুর্নীতিবাজ মিটার রিডার বড় ভাইয়ের মুখ। সেই বড়ভাই, ঘুষখোর হওয়ার স্বপ্ন যার পূরণ হয়েছে। যে অনায়াসে বড়লোক হয়ে যাচ্ছে, যার সুখী জীবন ও সুন্দরী স্ত্রী-পরিবার আছে। আর এই লুজার স্কুল টিচার পড়াতে ভালোবাসে না। কিংবা পড়াতে জানেই না। সেটা সে জেনে গেছে ততোদিনে...। ঘুষ দিয়ে পাওয়া এই সান্ত্বনার চাকরিটাও যে চলে যাবে, তার ভয়েই এই শাস্তি। এই ঠাটবাট দিয়ে গোপন রাখতে চায়, তার নিজের লুজারপনাকে, নিজস্ব ইনসিকিউরিটিকে। 

মোহসিন হামিদের ভাষায়, ‘And this fear, augmented by his sense of abiding disappointment and his not unfounded conviction that the world is profoundly unfair, manifests itself in the steadz dose of violence he visits upon his charges With each blow, he tells himself, he helps education penetrate another thick skull’ জীবনে যতবার কেউ সম্পূর্ণ অনাকাক্সিক্ষতভাবে রূঢ় আচরণ করেছে। অপ্রত্যাশিতভাবে টক্সিক আচরণ করেছে। আমি মনে মনে ধরে নিয়েছিÑ ওই ব্যক্তির জীবনে একটা অপ্রাপ্তির ঘা আছে। আর সেই যাতনা ছুপা রাখতেই সে এমন এটিচুড দেখিয়েছে। হয়তো উপরে উপরে সফল ও সুখী একজন মানুষ। কিন্তু খোদার দেওয়া এক গোপন যন্ত্রণা সীল-ছাপ্পর, সে বয়ে বেড়াচ্ছে। এজন্যই বলি, টক্সিক মানুষদের জন্য শাস্তির চেয়ে বেশি দরকার হিলিং। আর সবার আগে দূর করা দরকার তার অন্তঃস্থ ইনসিকিউরিটি। কিন্তু এই এগুলো তো ওই মানুষের কর্তব্য। ভিক্টিম আসলে কী করতে পারে? সে পারে দোয়া কিংবা ক্ষমা। কিংবা দু’টোই। ক্ষমা মহত্তম গুণ। কিন্তু দোয়াটাই সম্ভবত কাজের। ওই টক্সিক মানুষের অন্তঃস্থ ঘা যেন আর কাউকে আক্রান্ত না করে, সেই কামনায় দোয়া। আর ক্ষমাটা আপনাকে হিলিংয়ে সাহায্য করবে। ওদের চেয়ে আপনি যে ভালো একজন মানুষ আপনিÑএই সেলফ এশিউরসেন্সের জন্যই ক্ষমার চাদরে নিজেকে জড়ায়ে রাখতে হবে। ২৯-৬-২৪। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়