শিরোনাম
◈ গণহত্যা মামলা: কারাগারে পুলিশ কর্মকর্তা জসিম ◈ খাগড়াছড়িতে প্রতিপক্ষের গুলিতে ৩ ইউপিডিএফ কর্মী নিহত, অবরোধের ডাক ◈ ঠাকুরগাঁওয়ে মন্দিরে ১৪৪ ধারা জারি ◈ গ্রাহকরা টাকা না পেয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকে দিলেন তালা  ◈ হাসিনার আমলে বাংলাদেশে ঢুকলে ফিরিয়ে দিত, এই সরকার কঠোর আচরণ করছে : ভারতীয় জেলেদের সংবাদ সম্মেলন ◈ ৩৫ প্রত্যাশীরা ফের আন্দোলনে, পুলিশের লাঠিচার্জ-জলকামানে ছত্রভঙ্গ ◈ দুইটি হজ প্যাকেজের খরচ এর বিষয় যা জানাগেল ◈ রাজনীতিবিদ ছাড়া সংস্কার সফল হতে পারে না : মির্জা ফখরুল ◈ অন্তর্বর্তী সরকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের প্রভাব : ডয়চে ভেলে প্রতিবেদন ◈ প্রধান উপদেষ্টাকে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ

প্রকাশিত : ১৪ জুন, ২০২৪, ০২:১৮ রাত
আপডেট : ১৪ জুন, ২০২৪, ০২:১৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

লেখকের সরকারি জমি!

আহসান হাবিব

আহসান হাবিব: [১] একজন লেখককে সরকারের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যে জমি বরাদ্দ নিতে হবে কেন? লেখক কি কোনো সরকারি উর্ধ্বতন কর্মচারী যে তাকে সেবা করার বিনিময়ে জমি নামক একটি ঘুষ নিয়ে কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ থেকে আমরণ দাস হয়ে থাকতে হবে? বরং লেখক নিজেই একেকটা রাষ্ট্র। কারণ তারা যে সমাজের রূপকল্পের স্বপ্ন দেখেন, তা কোনো রাজা-বাদশাহ বা প্রধানমন্ত্রী শাসিত কোনো রাষ্ট্র বা সমাজ নয়। সে সমাজ স্বশাসিত, স্বাধীন এবং সার্বভৌম। যে লেখক তার সৃজিত শিল্পের বিনিময়ে রাষ্ট্রের কাছে হাত পাতে, বিনিময় প্রত্যাশা করে, সে লেখক নয়, সে একটা লুম্পেন, একটা ভিক্ষুক। সে রাষ্ট্রকে কোনো প্রশ্ন করা তো দূরের কথা, সামান্য প্রতিবাদও করতে ভয় পায়। রাষ্ট্র যদি লেখককে ভয় না পায়, তাহলে জানতে হবে সে লেখক একটা ঢোঁড়া সাপ কিংবা দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নন্দলাল। এমন লেখকেই ভরা বাংলাদেশ। 

[২] আমি পর্যবেক্ষণ করছি সেই লেখকরা খুবই তৎপর নিজেদের সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করার, সাহিত্য সভায় বাখোয়াজি করার যারা রাষ্ট্রের গণবিরোধী কোনো কাজের বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দটি করে না। এদের ভাব দেখলে মনে হয় দেশের সবচেয়ে বড় সাহিত্যিক কেউকেটা। প্রকৃতপ্রস্তাবে এরা এক একটা রাজানুকম্পাশ্রিত দাস। এরা সরকারি অনুষ্ঠান কিংবা প্রতিষ্ঠানগুলিতে মাতব্বরি করে, মধু খায়, পুরস্কার নামের ঘুষ বাগিয়ে নির্লজ্জের মতো প্রচার করে বেড়ায়। এরা লেখক নয়, এক একটি কলুর বলদ। 

[৩] বাংলাদেশের লেখকরা এক একটা খাঁটি পেটিবুর্জোয়া। এদের সাহিত্য নয়, দরকার সাহিত্যের কাগজ। কেন, তোর কাগজ লাগবে কেন? তোকে কাগজের মালিক হতে হবে কেন? কাগজের মালিক হবে টাকাওয়ালাার, তুই কি টাকাওয়ালা? তুই তো ফকির। তোর একটাই পণ্য- সাহিত্য মানে লেখা। এই লেখা তুই বিক্রি করবি টাকাওয়ালা প্রকাশকের কাছে, বিনিময়ে নিয়ে নিবি বিনিময়মূল্য। শেষ তোর কাজ। তোকে কাগজের মালিক হয়ে বিক্রির দায়িত্ব নিতে হবে কেন? এই যে লেখকদের মালিকসত্তা, এই লোভ আসে কোথা থেকে? ঐ পেটিবুর্জোয়া চরিত্র থেকে। অথচ একজন লেখকের লড়াই হচ্ছে ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিরুদ্ধে। যে লেখক এই সত্তা ধারণ করতে পারে না, সে চিরদিন বুর্জোয়ার দাস হয়ে থেকে যাবে। তার লেখা যতই উঁচু মার্গের হোক, সে সব পড়ে থাকবে ভাগাড়ে। 
[৪] মুফতে পাওয়া প্রকৃতিকে নিজের বলে দখল করে নিয়েছে পুঁজিপতিরা। আমাদের রাষ্ট্রটির যত আয়তন, সরকারী ভূমি ছাড়া অন্যগুলির মালিক কে? পুঁজিপতিরা। তাদের কাজই হলো জমি দখল করা। জমি থেকে উচ্ছেদ করাই পুঁজিপতিদের কাজ। উচ্ছেদ হওয়া লোকগুলি সব হারিয়ে কোথায় যাবে? ওদের কারখানায়। শ্রম বিক্রি করে বেঁচে থাকবে। আর যারা নিজেদের সামান্য নিয়ে আঁকড়ে থাকবে, সামান্য উৎপাদন করে বেঁচে থাকবে, তারাই পেটিবুর্জোয়া। এরা না হতে চাইবে শ্রমিক, না হতে পারবে বুর্জোয়া। কিন্তু এরা পুঁজিপতিদের রাজত্বকালকে বৃদ্ধি করতেই থাকবে। তাই এরা প্রতিক্রিয়াশীল। ছোট কাগজের মালিক আর এই ক্ষুদে মালিকরা চরিত্রের দিক থেকে একই। তাই এইসব তথাকথিত লিটল ম্যাগাজিনওয়ালারা এক একটা প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি হিসেবে সমাজে টিমটিম করে জ্বলে। এরাই সরকারের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যে জমি হাতিয়ে নিয়ে নিজের একটি বাড়ির স্বপ্ন পূরণ করে। একজন শ্রমিক সে স্বপ্ন কোনো দিন দেখার কল্পনাও করে না। অথচ এরা আবার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা বলে। এই দ্বিচারিতা সমাজ প্রগতির লড়াইয়ে কোনো ভূমিকা রাখে না। লেখক: কথাসাহিত্যিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়