শিরোনাম

প্রকাশিত : ১১ জুন, ২০২৪, ০৫:১০ সকাল
আপডেট : ১১ জুন, ২০২৪, ০৫:১০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পিটার দ্য গ্রেট : আধুনিক রাশিয়ার অন্যতম স্থপতি 

আলিম আল রশিদ : আধুনিক রাশিয়ার অন্যতম স্থপতি পিটার দ্য গ্রেট। ১৬৭২ সালের ৯ জুন মস্কোয় জন্মগ্রহণ করেন পিটার দ্য গ্রেট। বাবা ছিলেন জার আলেক্সিস এবং মা ছিলেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী নাতালিয়া নারিশকিনা। তাদের একমাত্র সন্তান পিটার। তার চার বছর বয়সের সময় বাবা মারা যান। আগের স্ত্রীর তেরো সন্তান ছিল আলেক্সিসের। ফলে ক্ষমতায় বসা নিয়ে তাদের মধ্যে চরম সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে থাকতে হয় পিটারকে। সেই সময় দেশের অন্তরবর্তীকালীন শাসক ছিলেন তার সৎ বোন সোফিয়া। ১৬৮৯ সালে সোফিয়া খমতাচ্যুত হলে পিটারের ক্ষমতায় বসার পথ পরিষ্কার হয়ে যায়। রাশিয়ান জারদের মধ্যে পিটার দ্য গ্রেটকে সবচেয়ে বিশিষ্ট মনে করা হয়। তার পশ্চিমাকরণের নীতির ফলেই রাশিয়া একসময় বৃহৎ শক্তিতে পরিণত হয়। রাশিয়া সেই সময় সবকিছুতে পশ্চিমাদের চেয়ে কয়েক শতাব্দী পিছিয়ে ছিল। শহর ছিল খুব অল্প। কৃষকরা ছিল ক্রীতদাসের মতো, আইনের অধিকার বলে কিছুই ছিল না মানুষের। ধর্ম বলেও প্রায় কিছুই ছিল না দেশে। রাশিয়ার  শিক্ষা দীক্ষার অবস্থাও তাই। পশ্চিমে নিউটন যখন তার প্রিন্সিপিয়া লেখেন, সেই সময়ও মধ্যযুগীয় অজ্ঞানতার অন্ধকারে ডুবেছিল রাশিয়া।

১৬৯৭-৯৮ খ্রিস্টাব্দে পিটার দীর্ঘ সফরে পশ্চিম ইউরোপ যান। তার সঙ্গে ছিল ‘গ্র্যান্ড অ্যাম্বাসির আড়াইশ সদস্য। সেই সফরের সময় হল্যান্ডের ডাচ-ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জাহাজে কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। এমনকি  ইংল্যান্ডের নেভি ডকইয়ার্ডেও কাজ করেন পিটার। প্রম্নশিয়ায় গানারির ওপর পড়াশোনা করেন। ফ্যাক্টরি, স্কুল, জাদুঘর পরিদর্শন করেন, এমনকি ইংল্যান্ডের এক পার্লামেন্ট অধিবেশনেও যোগ দেন। এ সময় পশ্চিমা সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, কলকারখানা ও প্রশাসনিক নিয়ম-কানুন দেখে প্রভাবিত হন পিটার। ১৬৯৮ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফিরে আসেন তিনি এবং দেশকে পশ্চিমের ধাঁচে আধুনিক করে গড়ে তোলার দীর্ঘ কার্যক্রমে হাত দেন। এসবের কারণে ফল হয় অবিশ্বাস্য। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই উন্নতি ঘটতে থাকে রাশিয়ার। তিনিই প্রথম জুলিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন সে দেশে এবং রাশিয়ার প্রথম সংবাদপত্র তার সময়ই প্রকাশিত হয়। পিটারের সময় তুরস্ক ও সুইডেনের সঙ্গে যুদ্ধ বাধে রাশিয়ার। ১৭০৯ সালে পলটাভায় সুইডিশরা পরাজিত হয়, ফলে এসত্মোনিয়া, লাটভিয়াসহ ফিনল্যান্ডের কাছের বড় এক অংশ রাশিয়ার দখলে চলে যায়।

শেষের অংশটিতে বড় এক নদী নেভার তীরে, নতুন শহর গড়ে তোলেন পিটার, যেটির নাম বর্তমানে সেইন্ট পিটার্সবার্গ। রাশিয়ার নতুন রাজধানী হয় শহরটা। ১৭১২ খ্রিস্টাব্দে অবশ্য রাজধানী আবার মস্কোতে স্থানানত্মরিত হয়। পিটারের প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ফলে অনেক বেশি করের বোঝা বইতে হয় দেশবাসীকে। একটা সময়  এর বিরুদ্ধে অসন্তোষ ও বেশকিছু বিদ্রোহের ঘটনাও ঘটে। সেসব কঠোর হাতে দমন করেন পিটার। তার আমলে তার অনেকে বিরুদ্ধে থাকলেও বর্তমানে রাশিয়া ও পশ্চিমা ঐতিহাসিকদের সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন যে,জারদের মধ্যে পিটারই ছিলেন সবার সেরা। ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার প্রকান্ড-দেহী মানুষ ছিলেন পিটার। শক্তিশালী, সুদর্শন, সুপুরুষ ছিলেন। রাজনৈতিক ও সামরিক বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা ছাড়াও কার্পেন্ট্রি, পেইন্টিং, নেভিগেশন, জাহাজ নির্মাণ প্রভৃতি সম্পর্কে ভালো পড়াশোনা ছিল তার। দুই বিয়ে করেন পিটার। সতেরো বছর বয়সে প্রথম বিয়ে করেন ইউডোক্সিয়া নামের এক তরম্নণীকে। মাত্র এক সপ্তাহ একসঙ্গে ছিলেন তারা। 

১৭১২ সালে ইউডোক্সিয়ার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে যায়। এরপর ক্যাথেরিন নামে এক লিথুয়ানিয়ান মেয়েকে বিয়ে করেন। ইউডোক্সিয়ার গর্ভে তার এক ছেলের জন্ম হয়। তার নাম আলেক্সিস। কিন্তু বাপ-ছেলের সম্পর্ক ভালো ছিল না। ১৭১৮ সালে আলেক্সিস ও পিটারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে নির্যাতনের ফলে কারাগারে তার মৃত্যু ঘটে। ১৭২৫ খ্রিস্টাব্দে ৫২ বছর বয়সে সেইন্ট পিটার্সবার্গে মারা যান পিটার দ্য গ্রেট। তার স্থলাভিষিক্ত হন দ্বিতীয় স্ত্রী ক্যাথেরিন। পিটার এমন এক শাসক ছিলেন, যিনি জ্ঞানে-বুদ্ধিতে তার সময়ের চেয়ে অনেক আধুনিক মনের, অনেক অগ্রগামী ছিলেন। তার সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই পশ্চিমাদের মতো রাশিয়ানদের দ্রুত উন্নতি সাধন সম্ভব হয়। আধুনিক রাশিয়ার অন্যতম স্থপতি পিটার দ্য গ্রেট এর জন্মদিন। আজকের এই দিনে উনাকে গভীর শ্রদ্ধা। ৯-৬-২৪। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়