শিরোনাম
◈ হারিয়ে যাওয়া ৫৩ টি মোবাইল উদ্ধার করে  মালিকদেরকে বুঝিয়ে দিলো ডিএমপি ◈ নবম শ্রেণীর পাঠ্যবই ’মেয়ে’ গল্প নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন ও যে তথ্য দিলেন আসিফ মাহতাব (ভিডিও) ◈ আমি ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস মানি না: আসাদুজ্জামান ফুয়াদ (ভিডিও) ◈ যদি শেখ হাসিনা টিকে যেত এই সেমিনার কি হতো, প্রশ্ন আন্দালিব রহমান পার্থের (ভিডিও) ◈ নারী পুলিশের দিকে তাকিয়ে আসামির হাসি, নেট দুনিয়ায় তোলপাড়, ভিডিও নিয়ে যা জানা গেল ◈ সাকিব-তামিম চাইলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে পারবেন: বিসিবি সভাপতি ◈ নারী এশিয়া কাপের ফাইনালে রোববার ভারত ও বাংলাদেশ মুখোমুখি ◈ ঢাকা মেট্রোকে হারিয়ে এনসিএল ক্রিকেটের ফাইনালে রংপুর বিভাগ ◈ আইসিসির কাছে বিশপের সুপারিশ, শামীম-জাকেরকে ‘স্পিরিট অব ক্রিকেট’ পুরস্কার দেয়া হোক  ◈ ‘জনশক্তি’ নামে কোনো রাজনৈতিক দল গঠনের আলোচনা হয়নি, জানালো জাতীয় নাগরিক কমিটি

প্রকাশিত : ২৬ মে, ২০২৪, ০১:২৯ রাত
আপডেট : ২৬ মে, ২০২৪, ০১:২৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গ্লোবাল পলিটিক্স এবং আমাদের বুদ্ধিজীবীগণ

কাকন রেজা 

কাকন রেজা: চিন্তা করতে অদ্ভুত লাগে, কত বিচিত্র চিন্তাই না আমাদের দেশে প্রচলিত রয়েছে। এসব চিন্তার চিন্তকরা আবার নিজেদের বুদ্ধিজীবী বলে দাবি করেন। এমনি একজন ফিলিস্তিন ও মানবাধিকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুললেন সামাজিকমাধ্যমে। এই তিনিই আবার আমাদের নিজস্ব প্রেক্ষাপটে ভারতকে বন্ধুদেশ দাবি করে দেশটির অন্ধ সমর্থক। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ভারত হচ্ছে এশিয়ায় ইসরায়েলের একমাত্র পরীক্ষিত এবং চুক্তিবদ্ধ বন্ধু। চুক্তির কথাটা পরে বলি, কদিন আগে ইসরায়েলের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া অস্ত্রবাহী ভারতীয় জাহাজের আটকে দেওয়ার গল্পটা শোনা যাক। ‘আমাদের সময় ডটকম’ থেকে উদ্ধৃত করি, ‘গোপনে ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠাচ্ছে ভারত, জাহাজ আটকে দিয়েছে স্পেন’, এই শিরোনামে খবর করেছিলো গণমাধ্যমটি। খবরটি শুরু হয়েছিলো এভাবে, ‘গাজায় হামলা চালানো ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠাচ্ছে ভারত। এই অভিযোগ করেছে স্পেন।’ সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রকে নিষিদ্ধ করার দাবিদার ভারতের সমর্থক বুদ্ধিজীবী ভাইটি বোধহয় গ্লোবাল পলিটিক্স সম্পর্কে অতটা ওয়াকিবহাল নন। অথবা ‘ঠেলায়, ঘুরতে, খুশিতে’ কথাটা বলে ফেলেছেন। 

ভারত ইসরায়েলের সম্পর্কে নিয়ে আরো খানিকটা বলি, ইসরায়েলের সাথে ভারতের প্রেম শুরু হয় ১৯৫০ থেকে। সহজবোধ্য করার জন্য উইকিপিডিয়ার India-Israel relations থেকে সরাসরি তুলে দিই। ‘Since the 1990s, the Republic of India and the State of Israel have had a comprehensive economic, military, and political relationship. In 1947, India voted against the United Nations Partition Plan for Palestine, but nonetheless recognized Israeli sovereignty in 1950. Israel opened a consulate in Bombay in 1953. Collaboration gradually increased as Israel became a key Indian ally amidst the India–Pakistan conflict; Israel supplied India with armaments, ammunition, and intelligence during the Indo-Pakistani War of 1971 and the Indo-Pakistani War of 1999. Full diplomatic relations were established in 1992, when India opened an embassy in Tel Aviv and Israel opened an embassy in New Delhi. Both countries are members of the I2U2 Group, formed in October 2021’ -উইকিপিডিয়াতে ঠিক এভাবেই ভারত ইসরায়েলের সম্পর্ক বর্ণিত হয়েছে। 

উইকিপিডিয়াই যা বলার বলে দিয়েছে, সম্পর্কের ব্যাপারে আমি আর কিছু নাই বললাম। তবে সংক্ষেপে উইকিপিডিয়ার ইংরেজিটাকে নিজের ভাষা তথা সরল বাংলায় বলে দিই যে, ‘১৯৫০ থেকে ইসরায়েলের সাথে ভারতের সম্পর্কের শুরু এবং ১৯৫৩ সালে তখনকার বোম্বে এখন বিজেপির কল্যাণে যা মুম্বই সেখানে ইসরায়েল কনস্যুলেট খোলে। তবে নব্বইয়ের দশক থেকে ভারত ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি ব্যাপক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর আগে ওহফড়-চধশরংঃধহর ডধৎ ড়ভ ১৯৭১ (এটুকুর আর বাংলা করলাম না)-এ ইসরায়েল ভারতকে অস্ত্র-গোলাবারুদ এবং গোয়েন্দা সহায়তা দিয়েছিলো। যা তারা করেছিলো ১৯৯৯ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ও। ইসরায়েল ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক পরিপূর্ণ হয়েছিলো ১৯৯২-এ, যখন ভারত ও ইসরায়েল পরস্পরের দেশে দূতাবাস খোলে। আর উভয় দেশই ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ও২ট২ গ্রুপের সদস্য।’ উইকিপিডিয়ার এসব তথ্য নিয়ে এ লেখায় অ্যানালিসিস না করলেও এটুকু শুধু নোটে রাখলাম এই ভেবে যে, এসব তথ্যের মধ্যে সত্যিকার বুদ্ধিজীবীদের জন্য চিন্তার যথেষ্ট খোরাক রয়েছে। 

এখন আসি গ্লোবাল পলিটিক্সের আরেকটি ক্রিটিক্যাল জায়গায়। ইরানের কথা বলি। ইরান ফিলিস্তিনি গ্রুপ হিজবুল্লাহ ও হামাসকে সহায়তা করছে, এটা ওপেন সিক্রেট। অথচ এই ইরানের সাথেই ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। যার ফলে ইরানের একটি বন্দর দেখাশোনার দায়িত্ব পেয়েছে ভারত। আর তা নিয়েই টানাপোড়েন চলছে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের। যুক্তরাষ্ট্র যে কারণে ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে। আবার আমাদের দেশের কোনো কোনো বুদ্ধিজীবীর ধারণা দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে ডিঙিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কিছু করবে না। অবস্থাদৃষ্টে অনেকটা তাই মনে হয়। কিন্তু ইরান ও রাশিয়া প্রেমকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ভাঙনের সুর ক্রমেই পরিষ্কার হচ্ছে। আর এদিকে ভারত ও চীনের মধ্যে পুরানো শত্রুতা সত্ত্বেও রাশিয়ার মধ্যস্থতায় একধরনের স্থিতাবস্থা বিরাজ করছে। এই স্থিতাবস্থা অস্বস্থি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের। সুতরাং গ্লোবাল পলিটিক্স ক্ষণে ক্ষণে বদলায়। যার হিসেব হুটহাট মেলানো সহজ নয়। মেলানোও যায় না। যায় কি? ইরান দিচ্ছে অস্ত্র হিজবুল্লাহ ও হামাসকে আর ভারতের অস্ত্র যাচ্ছে ইসরায়েলে। আবার ভারত ও ইরান কঠিনতম বন্ধু। হিসেব মিলছে কি? 

ভাই, এটাই গ্লোবাল পলিটিক্স, যার হিসেব মেলাতে গেলে প্রতিটি ঘটনার উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হয়। যে নজরে আপাত যে শত্রু, সে মিত্র হিসেবেও ধরা দিতে পারে, আবার যে মিত্র সেও হয়ে উঠতে পারে কঠিনতম শত্রু। সুতরাং নিজেদের ক্ষেত্রে কোন দেশ কার শত্রু সেটা হিসেব করে লাভ নেই। কোন দেশ আমার দেশ ও মানুষের মিত্র সেটা হিসেব করাই বুদ্ধিমানের কাজ। অথচ আমাদের সিংহভাগ বুদ্ধিজীবীরাই কাজের কাজটা কখনো ঠিকমত করতে পারেননি। আমাদের দুঃখটা এ জায়গাতেই। লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়