শিরোনাম
◈ ‘ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীনের মুক্তিতে আর কোন বাঁধা থাকছে না’ ◈ বিতর্কিত ভূমিকায় জড়িত পুলিশসহ সবাইকে ধরা হবে, কিছু হয়েছে, ধরার পর আবার এক ওসি পালিয়েও গেছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ প্রধান উপদেষ্টার কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন চারটি সংস্কার কমিশনের প্রধান ◈ মারা গেছেন নারী উদ্যোক্তা তনির স্বামী ◈ সারজিসসহ ৪৫ জনের পাসপোর্ট জব্দের প্রচার, যা জানা গেল ◈ নির্বাচন নিয়ে ফখরুলের বক্তব্যের কড়া জবাব সারজিসের (ভিডিও) ◈ জয়বঞ্চিত ম্যানচেস্টার সিটি, হার এড়ালো লিভারপুল ◈ সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রধান যে পাঁচটি সুপারিশ থাকছে ◈ জাতীয় পার্টির সঙ্গে কথা বলা যৌক্তিক মনে করছি না: উপদেষ্টা মাহফুজ (ভিডিও) ◈ বিএনপি বলছে সম্ভব, জামায়াত বলছে না

প্রকাশিত : ০৯ এপ্রিল, ২০২৪, ০৪:৫১ সকাল
আপডেট : ০৯ এপ্রিল, ২০২৪, ০৪:৫১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

উচিত-অনুচিতে জড়াজড়ি    

সিরাজ ইসলাম

সিরাজ ইসলাম: উচিত-অনুচিতের কোনো মা-বাপ নেই। হয়ত বিশেষ দেশকালপাত্রের অভিজ্ঞতায় যা উচিত, অন্যদেশ অন্যকাল অন্যপাত্রের অভিজ্ঞতায় তা অনুচিত। এক দৃষ্টিকোণ থেকে যেটা উচি, অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে তা অনুচিত। বড়-উচিতের বিচারে ছোট-উচিত এবং ছোট-উচিতের বিচারে বড়-উচিত প্রায়শ অনুচিত। শিশুর কাছে যা উচিত, বয়স্কের কাছে তা অনুচিত। আমার সকালের উচিত আমার সন্ধ্যার অনুচিত। শাস্ত্রের বিবর্তনে দেখা যাচ্ছে, ঋগবেদ, যজুর্বেদ, অথর্ববেদ ও সামবেদ, তারপরও উপনিষদ, ষড়দর্শন ও বেদ-বেদান্তের ভাষ্য এভাবে বেদ থেকে বেদান্তরে কাল থেকে কালান্তরে উচিত-অনুচিত নিয়ে মতান্তর শুধু বেড়েই চলেছে। যেকোনো শাস্ত্রের আলোচনায়ই তা প্রযোজ্য। আবার দাসযুগে বা সামন্তযুগে যা উচিত, ধনবাদী, সমাজবাদী বা সাম্যবাদীযুগে তার অনেক কিছুই অনুচিত। পিতৃতান্ত্রিক আদর্শে বা কৃষিজীবী সমাজে বা এক বিশেষ উৎপাদন ব্যবস্থায় অথবা এক বিশেষ ধর্মচিন্তাপদ্ধতিতে যেসব মূল্যবোধ অভ্রান্ত এমনকি পবিত্র বলে সর্বজনগ্রাহ্য, নারীজাগরণের যুগে বা বণিকসমাজে বা অন্য উৎপাদনব্যবস্থায় কিংবা ভিন্ন ধর্মচিন্তাপদ্ধতিতে সেগুলো প্রায়শ অচল বা পরিত্যাজ্য। দু’একটা উদাহরণ দেওয়া যায়। বৌদ্ধ নৈতিকতায় অহিংসা পরমধর্ম এবং জীবহত্যা মহাপাপ হলেও অনেকের ধারণা, উদরের অনুরোধে প্রাণীহত্যা কিংবা পরীক্ষাগারে গবেষণার্থে প্রাণীব্যবচ্ছেদ খাদ্যশৃঙ্খলগত ভূপ্রাকৃতিক ভারসাম্যসহ মোটের উপর মানবকল্যাণে একান্ত প্রয়োজন।
মনুষ্যদেহে অস্ত্রাঘাত ও অঙ্গচ্ছেদ অনেকের বিচারে অনৈতিক, যদিও শল্যচিকিৎসকের বিবেচনায় স্বাস্থ্যের প্রয়োজনে তা নৈতিক। আবার মানবপ্রজাতির এক বৃহদাংশকে অভুক্ত রেখে মহাকাশ অভিযানে কোটিকোটি টাকা ব্যয় করা একপক্ষের বিচারে অন্যায় অপচয়, অন্যদিকে অন্যপক্ষের বিবেচনায় তা মানবপ্রগতির স্বার্থে অত্যাবশ্যকীয়। বিধাতাপ্রদত্ত পবিত্র মানবজীবনের স্বাভাবিক আয়ুতে ছেদ টানা অনেকের কাছে গর্হিত পাপ, যদিও দুঃসহ কষ্টের ক্ষেত্রে ইউথেনেসিয়া বা স্বেচ্ছামৃত্যুর মাধ্যমে জীবনসমাপন অন্য অনেকের মতে নিরারোগ্য জরাযন্ত্রণাগ্রস্তের  জন্য একপ্রকার মুক্তির আশীর্বাদ। সবকিছুর মতোই উচিত-অনুচিতও বিবর্তনের স্রোতে ভেসে চলেছে। যেখানে অতীতের অনেক উচিতরা কালের পরিক্রমায় অনুচিত এবং অনুচিতরা  উচিত হয়ে উঠেছে, সেখানে আমার আজকের উচিত-অনুচিতও যে চূড়ান্ত উচিত-অনুচিত, অমন নিশ্চিত করে কে বলবে তা। ইতিহাসে দেখা গেছে, এক পর্যায়ের যা সৃষ্টি, হয়ত তা-ই পরবর্তীতে অনাছিষ্টির কারণ হয়েছে। যাকে মানুষ একদা অত মহাসত্য জেনে লক্ষেলক্ষে প্রাণ দিয়েছে নিয়েছে, দেশকালের রূপান্তরে তা-ই অর্ধসত্য বা মিথ্যা হয়ে গেছে। মরিয়া ধরনের আদর্শবাদী একেকটা ধর্ম- কিংবা সমাজ-বিপ্লব যুগান্তরের ভিন্নচেতনার কাছে নিছক গোলযোগ ও অনর্থক রক্তপাত হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে, কখনো হয়ে উঠেছে করুণ কি হাস্যকর। 
অন্যদিকে, বড়বড় অশুভ দৈবদুর্ঘটনাও জটিল ঘটনাচক্রে মাঝেমাঝে সুদূরপ্রসারী সুফল বয়ে এনেছে। কত ভূমিকম্প কত ভূমিধ্বসের ফলে কতবার সৃষ্টিরূপী নদীর উৎসমুখ খুলে গেছে। 
এককালের যা প্লাবন, মহাপ্রলয়, নতুন কালপর্বে হয়ত তা-ই নতুন পলিমাটি এনে ধরণীকে সুজলা-সুফলা করেছে। মরণের সার দিয়ে লকলকিয়ে বেড়ে উঠেছে নবজীবনের তরু। উচিত-অনুচিতের নিত্য-ফাটাফাটিতে চিত উচিতরা যে তলেতলে প্রতিমুহূর্তে এভাবে কতভাবে কত অনুচিতের এবং অনুচিতরা কত উচিতের কার্যকারণ হয়ে চলেছে, তার ইয়ত্তা নেই। মাথামুণ্ডু নেই উচিত-অনুচিতের। জীবননাট্যের গভীর রসটুকু এইযে, সংসারের ঘরে ঘরে যখন সাধুর প্রশ্রয়ে চোর পুষ্ট হচ্ছে, তখনই অন্যত্র চোরের ঐশ্বর্যে তার আশ্রয়ে নিয়ত সাধু বেড়ে উঠছে। এখানে উচিত এসে অনুচিতকে টেনে আনছে, আবার অনুচিতের টানে উচিত এসে পড়ছে। তলেতলে মহাজট পাকিয়ে আছে গর্ডিয়াসের গ্রন্থির মতো ভালো-মন্দ উচিত-অনুচিত। দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতায়ও তো দেখি, ভালো ও মন্দ যেন পয়সার এপিঠ-ওপিঠের ন্যায় পরস্পরের সম্পূরকরূপে একে অপরের ঘাড়ে চড়ে এক প্রকার টিকে আছে। তলেতলে পরস্পরের ছত্রছায়ায় পরস্পর-নির্ভর হয়ে কলহ ও মিলনের সূত্রে জড়িয়ে পেচিয়ে একেবারে অবিচ্ছেদে জগাখিচুড়ি হয়ে আছে। জীবনে কতবার ঐশ্বর্যের সন্ধ্যান করতে করতে ক্রমশ তাকে দুঃখদৈন্যের বোটায় ফুটে উঠতে দেখেছি। কতবার হ্নদয়ে মহাবেদনার সাক্ষাৎ পেয়েছি, যার অন্তরালে মঙ্গল ও কল্যাণকে স্নিগ্ধহাস্যময়ীরূপে প্রত্যক্ষ করেছি।পরস্পর-লুকোচুরি-খেলা ভালোমন্দ সুখ-দুঃখ হাসিকান্নার ন্যায় উচিত-অনুচিতকেও এভাবে যখন তাদের সত্য স্বরূপে উদঘাটন করেছি, তখন তারা সংগোপনে পরস্পরের সঙ্গে জড়াজড়ি করে পরস্পরে পর্যবসিত হয়ে আছে দেখেছি। ৭-৪-২৪। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়