শাহীন খন্দকার: [২] বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটির প্রকল্প পরিচালক হেপাটুব্লিয়ার এন্ড পেনক্রিয়েটিক সার্জারি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জুলফিকার রহমান খান জানান, হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। শুধু বাইরের ল্যান্ডস্কেপিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। আশা করি জুনের মধ্যেই এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে। জুনের মধ্যেই চিকিৎসা সরঞ্জামাদির ৮০ ভাগ চলে আসবে। যেসব বাকি থাকবে, তা জুনের পরে চলে আসবে।
[৩]এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, হাসপাতালটিতে এখনো জনবল নিয়োগ শুরু হয়নি, তবে প্রক্রিয়া চলছে। হাসপাতালটিতে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ প্রায় ১৫-১৭শত জনবল নিয়োগ করা হবে। অবশ্যই দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে চিকিৎসক,নার্স টেকনিশিয়ান এবং অন্যান্য সহযোগী কর্মচারীসহ হাসপাতাল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোরিয়ায় উচ্চতর ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে ১৩৯ জনের। ইতোমধ্যে ৪৩ জন ট্রেনিং করে এসেছেন। আরো ৩০-৩২ জন মে মাসের ৫ তারিখে যাবেন ট্রেনিংয়ের জন্য। পরে একটি গ্রুপ যাবে আগস্ট মাসে। আর শেষ গ্রুপ যাবে নভেম্বরে। সব যদি ঠিকঠাক থাকে হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হবে জুনের শেষ সপ্তাহে। তবে ঈদের পরে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
[৪] প্রকল্প পরিচালক বলেন, এই প্রকল্পে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের স্কোপ রয়েছে। হাসপাতাল চালুর পরে কোরিয়ান নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম যারা সরবরাহ করেছেন,তারা হাসপাতালটি দুই বছর রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। সেইসঙ্গে কোরিয়া থেকে ৫৬ জন বিভিন্নস্তরের চিকিৎসক কনসালট্যান্ট বাংলাদেশে আসবেন। তারা হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেবেন। তবে তারা বেশিদিন থাকবেন না, খুব বেশি হলে এক থেকে দেড় মাস অবস্থান করবেন।
[৫] ডা.জুলফিকার রহমান খান বলেন, স্পেশালাইজড হাসপাতালটি খুবই উন্নত মানের। তাই একদম ফ্রি করা যাবে না। চিকিৎসাব্যয় স্বাভাবিক সহনশীল পর্যায় রাখা হবে। তবে কিছুটা ব্যয় ধরা না হলে হাসপাতালটি রক্ষণাবেক্ষণ করা যাবে না। হাসপাতালটিতে রেফারেন্সের রোগী আসবেন। হাসপাতালের আউটডোরের মত রোগী আসবেন না। এখানে সেইসব রোগী আসবেন, যাদের রেফার করে পাঠানো হবে, তাদের চিকিৎসা দেওয়া হবে। তবে এই হাসপাতাল সবার জন্যই উন্মুক্ত থাকবে বলেও জানান তিনি। হাসপাতালটি নির্মাণের ব্যাপারে ২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি হয়। প্রকল্পটি একনেকে পাস হয় ২ ফেরুয়ারি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ২০১৮ সালে। ইচডিসি,স্যামসাংসহ সানজিন এই তিনটি কোরিয়ান কোম্পানী যৌথভাবে এই হাসপাতালটি নির্মাণ করেছে।
[৬] তিনি বলেন, হাসপাতালটি প্রায় ৪ একর জমির ওপর অবস্থিত। হাসপাতালটি উদ্বোধনের পর থেকে দুই বছর কোরিয়ার ২৫ জন ইঞ্জিনিয়ার এবং ৫০ জন চিকিৎসক এখানে থাকবেন। হাসপাতালের তত্ত্বাবধান করবে হুন্দাই কোম্পানি। এখানে আন্তর্জাতিক মানের মডিউলার অপারেশন থিয়েটার থাকবে ১৪টি। মোট ৩০০ গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেন্টার বেইজড হাসপাতাল, পেশেন্ট ম্যানেজমেন্টের আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। থাকবে বিভিন্ন বিভাগ, ডিসিপ্লিন নিয়ে কমপক্ষে বিশ্বমানের পাঁচটি সেন্টার। তিনটি বেইজমেন্ট থাকবে। ৭৫০ বেডের মধ্যে সেন্টার বেইজমেন্ট হাসপাতাল।
[৭] ৫টি সেন্টারের মধ্যে জরুরি বিভাগ, মাদার এন্ড চাইল্ড, কিডনি ডিজিজ এবং কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট,অনকোলজি, হেপাটোলজি লিভার ট্রান্সপ্যান্ট এবং ১০০ বেডের আইসিইউ,৬৪টি কেবিন থাকবে ৬টা ভি ভি আই পি কেবিন, ২৩টি ভিআইপি কেবিন। বাকিগুলো ডিলাক্স কেবিন থাকবে এবং অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিতে সজ্জিত থাকবে। অত্যাধুনিক সিটিস্ক্যান, এমআরআই থেকে শুরু করে সকল পরীক্ষা হবে অত্যাধুনিক সম্পন্ন ডিজিটালাইজড হাসপাতালে। এখানে রোগীর রেকর্ডিং থেকে চিকিৎসাপ্ল্যান পর্যন্ত ডিজিটাল পদ্ধতিতে করা হচ্ছে। হাসপাতালের ম্যানেজমেন্টের জন্য যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা, মৌলিক গবেষণার সুযোগসহ গবেষণার জন্য আলাদা সেন্টার,রোগীদের সুবিধার্থে নতুন সংযোজন যেমন বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন, জিন থেরাপি চালু,আনন্দদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।
[৮] হাসপাতালে উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ দেশের প্রথম বিশ্বমানের মডেল হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ডাক্তার,নার্স, টেকনিশিয়ান এখানে চাকরি করবেন, তারা এখানেই প্রাইভেট প্র্যাকটিসও করতে পারবেন। সেই ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
[৯] তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিএসএমএমইউ। এই হাসপাতালটির অর্থায়নে সহযোগিতা করছে কোরিয়ান সরকারের ইডিসিএফ কর্তৃপক্ষ। তারা খুবই স্বল্পসুদে ঋণ ১ হাজার ১শত ৩০ মিলিয়ন ডলার ঋণসহায়তা দিয়েছে। ঋণের সুদের হার হলো পয়েন্ট জিরো ১ ভাগ, যা ৪০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। বাকি অর্থ সরকারের নিজস্ব কিছু ফান্ড আছে যেটা আমরা ভ্যাট এবং ট্যাক্সের জন্য দেই। তবে মূল টাকা কোরিয়ান সরকারের। সম্পাদনা: হাসান হাফিজ
আপনার মতামত লিখুন :