মনজুর এ আজিজ: আসন্ন বাজেটের পর জ্বালানির দাম সমন্বয় করার চিন্তা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এজন্য বাজেটে জ্বালানির উপর ডিউটি কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সোমবার (২৯ মে) বিদ্যুৎ ভবনে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন ধরনের জ্বালানিতে ভিন্ন পরিমাণের ডিউটি রয়েছে। এই ডিউটি ইউনিক করার প্রস্তাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, কোভিডের কারণে বিশ্বজুড়ে জ্বালানির সংকট চলছে, আমরাও এই সংকটের বাইরে না। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশও চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যে কয়লার দাম ৬০ ডলার ছিল তা এখন ৪০০ ডলার, তেলের দাম বেড়ে হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ ডলার, স্পর্ট মার্কেটে গ্যাসের দাম বেড়ে প্রায় ডাবল হয়ে গেলো। এসব কারণে আমরা বড় ধরনের ভর্তুকি দিয়ে এসেছি, নিম্ন আয়ের লোকজন যেনো আক্রান্ত না হয়। সব মিলিয়ে একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ শুধু আমাদের একার না, এরমধ্যে অনেক ধনী দেশও রয়েছে। তারাও লোডশেডিং করেছে।
তিনি বলেন, ৫টি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দিয়েছিলাম, কয়লার দাম ও ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে তারা উৎপাদনে আসতে পারেনি, তাই বাধ্য হয়েই বেশি খরচের তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাতে হয়েছে।
তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের ধীরগতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বছরে ১০টি কূপ খনন করতে গেলে কমপক্ষে ২০০ মিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হয়। এতো টাকা নেই। তাছাড়া আমাদের বাপেক্সের মাত্র ৩টি রিগ রয়েছে, এগুলো দিয়ে কতদূর যাওয়া সম্ভব!
সৌর বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করতে হলে ৬ হাজার একর জমি প্রয়োজন। জমি পাওয়াটা বড় বিষয়, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতেই ১৮০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন। ভোলায় বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে, এখানকার গ্যাস খুলনা পর্যন্ত নিতে হবে।
ডিতনি বলেন, আমাদের সামনে বড় তিনটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিরবিচ্ছিন্ন, মানসম্মত ও সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি নিশ্চিত করা। সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ চলছে, শিগগিরই আসবে নেপালের বিদ্যুৎ।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, আমরা কিন্তু সোলারের বিষয়ে এখন খুব সিরিয়াস, এখন দিনের বেলা সোলার থেকে ৫৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। আগামী দুই বছরের মাথায় ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, যেখানে সৌরবিদ্যুৎ থাকার সুযোগ ছিল, সেখানে লোডশেডিং হচ্ছে। বছরে কমপক্ষে ১০ অনুসন্ধান কূপ খনন করা দরকার। এটি করা গেলে কমপক্ষে ৫টি গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কার করা সম্ভব। যদি ২০০ বিসিএফ করে গ্যাস পাওয়া যায় তাহলে ১ টিসিএফ, যা এক বছরের চাহিদার সমান।
বিইআরসির সাবেক সদস্য মকবুল ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, বিদ্যুতের যত সমস্যা এনার্জি কেন্দ্রীক। যতদিন জ্বালানিকে গুরুত্ব দেওয়া না যাবে ততদিন এই সংকট দূর করা কঠিন। আবিস্কৃত গ্যাস ফিল্ডে উচ্চ লেভেল তো দূরের কথা, সর্বনিম্ন লেভেলে উত্তোলন করা হচ্ছে না। আমাদের সিলেট গ্যাস ফিল্ডের তুলনায় অনেক কম রিজার্ভ বিবিয়ানাতে, তারা অনেক বেশি গ্যাস তুলতে পারলেও আমরা কেনো অনেক কম করছি। রশিদপুর-৯ নম্বর কূপ থেকে মাত্র সাড়ে ৩ কিলোমিটার লাইনের অভাবে পড়ে রয়েছে। সেখান থেকে ১৭-২০ মিলিয়ন গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। বিভিন্ন জায়গায় শুধু ঘষামাজা করলে ১৫০ থেকে ২০০ মিলিয়ন গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব।
এফইআরবির চেয়ারম্যান শামীম জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন, এফইআরবির ইডি রিসান নসরুল্লাহ। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিপপার প্রেসিডেন্ট ফয়সাল খান।
এমএ/এসবি২
আপনার মতামত লিখুন :