শিরোনাম
◈ তিন পার্বত্য জেলার পরিস্থিতি নিয়ে আইএসপিআর যা জানালো ◈ বিএনপির বিশৃঙ্খলা রোধে তারেক রহমানের যত ‘স্মার্ট অ্যাকশন’ ◈ ভারতে শেখ হাসিনা আশ্রয় পেতে যাচ্ছেন দালাই লামার মতোই! ◈ কর্মীদের হত্যাকাণ্ডের নিউজ কোথায়, প্রশ্ন আওয়ামী লীগের ◈ শাহবাগে বিক্ষোভ: আগামী ৭২ ঘণ্টায় পার্বত্য তিন জেলায় অবরোধের ঘোষণা  ◈ পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষ : রাঙ্গামাটিতে ১৪৪ ধারা জারি ◈ বাইতুল মোকাররমে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত বেশ কয়েকজন, সতর্ক অবস্থানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ (ভিডিও) ◈ আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা : পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ◈ দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর আজ স্বাভাবিক দীঘিনালার পরিস্থিতি ◈ জাতিসংঘ অধিবেশনে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে মুহাম্মদ ইউনূসের

প্রকাশিত : ২২ অক্টোবর, ২০২২, ০৩:৩৩ রাত
আপডেট : ২৩ অক্টোবর, ২০২২, ১২:৫৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রেকর্ড লোডশেডিংয়ের নেপথ্যে

ফাইল ছবি

মানবজমিন: বিদ্যুতের ভালো খবরের জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে গ্রাহকদের। বর্তমান লোডশেডিং পরিস্থিতি শিগগিরই কাটছে না। গ্যাস সংকটের কারণে কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের সময় বন্ধ হয়ে যাওয়া কয়েকটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি গ্যাস কেনা যাচ্ছে না। সবমিলিয়ে বেড়েছে অনিয়ন্ত্রিত লোডশেডিং। রাত-দিনে সমান তালে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে। গভীর রাতেও বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে ভোগান্তি বাড়ছে গ্রাহকদের। 

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার কার্যদিবসে ঢাকায় লোডশেডিং ধরা হয়েছে ২৮৩ মেগাওয়াট। যা প্রাক্কলতি চাহিদার ৬ শতাংশ লোডশেডিং করতে হয়েছে।

সারা দেশে ২০শে অক্টোবর ৯৫৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। বিদ্যুৎ শতভাগ লোডশেডিংমুক্ত বলে উৎসব হয়েছে চলতি বছরের মার্চে। অথচ এখন গ্রামে থেকে শহরে ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দিনে সর্বোচ্চ ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হয়। এখন তা বেড়ে হয়েছে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত, যা গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। কোথাও কোথাও দিনে পাঁচবার লোডশেডিং করতে হচ্ছে। ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. কাওসার আমীর আলী বলেন, গভীর রাতেও লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তাদের চাহিদা ৯৭০ মেগাওয়াট। কিন্তু এটা পাওয়া যায় না। ১০০ থেকে ১৭০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়। কোনো কোনো ফিডারে (নির্দিষ্ট গ্রাহক এলাকা) দিনে চারবার পর্যন্ত লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
গত ১০ই অক্টোবর সচিবালয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, গ্যাস আনতে না পারায় নভেম্বরের আগে লোডশেডিং পরিস্থিতির উন্নতির আশা নেই। লোডের কারণে আমরা দিনের বেলা কিছু পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ রাখছি। আবার দিনে যেগুলো চালাচ্ছি সেগুলো রাতে বন্ধ রাখছি। এজন্য লোডশেডিংয়ের জায়গাটা একটু বড় হয়ে গেছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা চেয়েছিলাম অক্টোবর থেকে কোনো লোডশেডিংই থাকবে না। কিন্তু সেটা আমরা করতে পারলাম না। কারণ আমরা গ্যাস আনতে পারিনি। সমস্যাটা সাময়িক হতে পারে। তবে আমি মনে করি, বললেই এটা সাময়িক হচ্ছে না। কারণ বিশ্ব পরিস্থিতি আবার অন্যরকম করে ফেলে। নভেম্বর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অক্টোবর থেকে ভালো পরিস্থিতি হয়ে যাবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু শিল্পে চাহিদা বেড়ে গেছে। তাই আমরা বিদ্যুতে গ্যাস কমিয়ে দিয়েছি।

বিদ্যুতের ঘাটতি মোকাবিলায় গত ১৯শে জুলাই থেকে দিনে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তখন থেকেই রাজধানীতে দুই থেকে চার ঘণ্টা এবং ঢাকার বাইরে ছয় থেকে আট ঘণ্টা লোডশেডিং করা হয়। তখন বলা হয়েছিল, সেপ্টেম্বরের শেষদিকে লোডশেডিং থাকবে না। অক্টোবর থেকে পুরোপুরি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের কথা বলেছিল বিদ্যুৎ বিভাগ। উল্টো সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে লোডশেডিং আরও বেড়ে গেছে। রাজধানী ঢাকায় ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা এবং জেলাগুলোতে ১০ ঘণ্টারও অধিক সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। 

বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন গড়ে ৯৫০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করছে পেট্রোবাংলা। গ্যাস দিয়ে ১১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা থাকলেও ৫০০০ মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে বন্ধ থাকা ডিজেলচালিত (ছয়টি) কেন্দ্র দিয়ে উৎপাদন শুরু করায় খরচ বেড়ে গেছে। পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এতদিন কাতার থেকে গড়ে প্রতি মাসে পাঁচটি করে এলএনজির কার্গো আসতো। কিন্তু চলতি অক্টোবর ও আগামী নভেম্বরে আসবে চারটি করে। ফলে জাতীয় গ্রিডে ১০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ কমে যাবে। গ্যাস সাশ্রয়ের জন্য আরও দুই ঘণ্টা সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে সিএনজি স্টেশন ওনার্স এসোসিয়েশনের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পর ঘোড়াশাল, আশুগঞ্জ, হরিপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একাধিক ইউনিট বন্ধ রয়েছে।

বিদ্যুতের লোডশেডিং বাড়ার কারণ কি জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন সম্প্রতি বলেন, গ্যাস দিয়ে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্যাপাসিটি ১১ হাজার মেগাওয়াট। আমরা ৫০০০-এর বেশি উৎপাদন করতে পারছি না বা ৫০০০-এর কম। অর্ধেকের কম উৎপাদন করতে হচ্ছে। ডিজেলের সব কেন্দ্র চালু হয়েছে, একান্ত প্রয়োজন না হলে চালানো হয় না। শুধু পিক আওয়ারে চালানো হয়। কারণ খরচ অনেক বেশি। তিনি বলেন, তেলে ৬ হাজার  মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। সেখানে ৪ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করা হয়েছে। এক হাজার এমএমসিএফডি গ্যাস দিয়ে ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। এটা হলে প্রতিদিন এক ঘণ্টা লোডশেডিং করলেই হয়। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে এক হাজার এমএমসিএফডির কম গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। গ্যাস দিয়ে পাঁচ হাজার মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। ডিজেল এবং ফার্নেস অয়েল দিয়েও সক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। সরবরাহ ঘাটতির জন্য উৎপাদন কমানো হয়েছে। এজন্য লোডশেডিং বেড়ে গেছে। জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পর কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনে আসতে সময় লাগছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০শে অক্টোবর কর্মদিবসে সারা দেশে সন্ধ্যায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয় ১৩ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। এই সময়ে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন ধরা হয়েছিল ১২ হাজার ৭৬১ মেগাওয়াট। তাতে লোডশেডিং ধরা হয় ৯৫৮ মেগাওয়াট। প্রাক্কলিত সর্বনিম্ন উৎপাদন ধরা হয় ৯ হাজার ৩৪৬ মেগাওয়াট বিদ্যুতের। পিডিবি’র ওয়েব সাইটে উল্লিখিত বিদ্যুতের লোডশেডিং পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ওইদিন সন্ধ্যায় ঢাকায় লোডশেডিং ধরা হয়েছে ২৮৩ মেগাওয়াট এবং চাহিদা ৪ হাজার ৪১৯ মেগাওয়াট, চট্টগ্রাম এলাকায় লোডশেডিং ১৪৫ মেগাওয়াট এবং চাহিদা ১ হাজার ২৫২ মেগাওয়াট, খুলনা চাহিদা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৫২ মেগাওয়াট এবং কোনো লোডশেডিং নেই, রাজশাহী এলাকায় চাহিদা ১ হাজার ৪৬৬ মেগাওয়াট এবং লোডশেডিং শূন্য, কুমিল্লা এলাকায় ১৯০ মেগাওয়াট লোডশেডিং এবং চাহিদা ১ হাজার ২৪৮ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহে ১৮৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং এবং চাহিদা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩১ মেগাওয়াট, সিলেটে ৮০ মেগাওয়াট লোডশেডিং এবং চাহিদা ৪৬১ মেগাওয়াট, বরিশাল অঞ্চলে লোডশেডিং শূন্য এবং চাহিদা ৩৭৬ মেগাওয়াট, রংপুর অঞ্চলে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিং এবং চাহিদা ৮১৪ মেগাওয়াট। যদিও দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে সাড়ে ২৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। সরকারি হিসাব মতে, গত বছরের নভেম্বরের শুরুতে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১১ হাজার মেগাওয়াট। ওই সময় উৎপাদন ধরা হয়েছিল ১৪ হাজারের বেশি। বেশিটুকুও রিজার্ভ হিসেবে দেখানো হয় হিসাবে।

দেশে গত ১৯শে জুলাই থেকে বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় দেশজুড়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া রাত ৮টার পর শপিং মলসহ দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত কার্যকর এবং উপাসনালয়ে প্রার্থনার সময় ছাড়া এসি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বানো জানানো হয় সরকারের তরফে। রাত ৮টার পর দোকানপাট, মার্কেট, শপিং মল খোলা থাকলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। রাত ৮টা থেকে কোনো রকম দোকানপাট, শপিং মল, আলোকসজ্জা-সব বন্ধ থাকবে। 

স্বাধীনতার পর ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের জনগোষ্ঠীর ৪৭ শতাংশ বিদ্যুতের সুবিধা পেয়েছিল। এরপর গত এক যুগে বাকি ৫৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় এসেছে। দেশে বর্তমানে ৪ কোটি ২১ লাখের বেশি বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে, যার আওতায় জনগণ শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন। এক যুগ আগে বিদ্যুৎ গ্রাহকসংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮ লাখ। এই সময়ে ২ কোটি ১৩ লাখ বিদ্যুৎ সংযোগ বেড়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ২৭টি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৮টিতে। দেশে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াটে। এক যুগে দৈনিক ২০ হাজার ৫৭২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে। ১৩ হাজার ২১৩ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন এবং ৬ লাখ ২১ হাজার কিলোমিটারের বিতরণ লাইনের মাধ্যমে দেশজুড়ে এ বিদ্যুৎসেবা পরিচালিত হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়