শিরোনাম
◈ বিএনপির বিশৃঙ্খলা রোধে তারেক রহমানের যত ‘স্মার্ট অ্যাকশন’ ◈ ভারতে শেখ হাসিনা আশ্রয় পেতে যাচ্ছেন দালাই লামার মতোই! ◈ কর্মীদের হত্যাকাণ্ডের নিউজ কোথায়, প্রশ্ন আওয়ামী লীগের ◈ শাহবাগে বিক্ষোভ: আগামী ৭২ ঘণ্টায় পার্বত্য তিন জেলায় অবরোধের ঘোষণা  ◈ পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষ : রাঙ্গামাটিতে ১৪৪ ধারা জারি ◈ বাইতুল মোকাররমে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত বেশ কয়েকজন, সতর্ক অবস্থানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ (ভিডিও) ◈ আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা : পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ◈ দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর আজ স্বাভাবিক দীঘিনালার পরিস্থিতি ◈ জাতিসংঘ অধিবেশনে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে মুহাম্মদ ইউনূসের ◈ অস্বস্তিকর গরম: অবসান হবে কবে? জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

প্রকাশিত : ২০ অক্টোবর, ২০২২, ০৩:৫৪ রাত
আপডেট : ২০ অক্টোবর, ২০২২, ১২:৩৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন কমায় বাড়ছে লোডশেডিং

ফাইল ছবি

বণিক বার্তা: দেশে অব্যাহত লোডশেডিংয়ের মধ্যেই ৪ অক্টোবর ঘটে গ্রিড বিপর্যয়। এর পর থেকে লোডশেডিং আরো তীব্র আকার নিয়েছে। তবে গ্রিড লাইন ঠিক হলেও জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বাড়াতে না পারায় নিয়ন্ত্রণে আসছে না লোডশেডিং। এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও বিদ্যুৎ বিভাগ-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাদের ভাষ্যে, বিশ্ববাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও জ্বালানি তেলের বাজার দুটোই এখন ঊর্ধ্বমুখী। অথচ আগে গ্যাস কিংবা তেল যেকোনো একটির দাম বেশি থাকলেও অন্যটির কম থাকত। সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমন্বয় করা যেত। এখন পাল্লা দিয়ে দুটোরই দাম বাড়ায় সেটি আর সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জ্বালানি সংকট থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না চাহিদা অনুযায়ী। কোনো কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনেই যেতে পারছে না।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রায় সাত হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার জ্বালানি তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক ৫ হাজার ৯০০ ও ডিজেলভিত্তিক ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের মতো। তবে উৎপাদনচিত্র বলছে, বর্তমানে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে বিপিডিবি। ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অবশ্য পুরোদমেই উৎপাদনে রয়েছে। আর ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে রয়েছে ২ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটের মতো। সেই হিসাব বিবেচনায় নিলে অন্তত তিন হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বসিয়ে রাখতে হচ্ছে জ্বালানি সংকটের কারণে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুতের চাহিদায় বরাবরই প্রাধান্য পায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। কিন্তু গ্যাস সংকট থাকায় ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো দিয়ে সরবরাহ ব্যবস্থাপনা স্বাভাবিক রাখা হয়েছিল। এখন সেগুলোর জ্বালানি সরবরাহেও ঘাটতি তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে প্রচুর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ায় সংকট তৈরি হয়েছে জ্বালানি আমদানিতে। তাই চাইলেও কেন্দ্রগুলো থেকে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সিংহভাগ মালিকানায় বেসরকারি উদ্যোক্তারা। জ্বালানি তেলের বিল পেমেন্ট জটিলতায় অনেকগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন সংকটে পড়েছে। ফলে এগুলো থেকে বিদ্যুৎ কেনা কঠিন হচ্ছে বিপিডিবির।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্যোক্তারা বলছেন, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিল পরিশোধ করতে পারছে না সরকার। বর্তমানে বিপিডিবির কাছে বকেয়া ১৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলার সংকট ও ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি। সে কারণেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে তৈরি হয়েছে সংকট।

চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকায় মফস্বল থেকে শুরু করে রাজধানীতেও এখন লোডশেডিংয়ের সময় দীর্ঘ হচ্ছে। শুরু থেকে ২ ঘণ্টা লোডশেডিং করার কথা থাকলেও সেটি এখন ৭-৮ ঘণ্টায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হচ্ছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। পিজিসিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, দেশে দৈনিক যে পরিমাণ চাহিদা তৈরি হচ্ছে তাতে অন্তত দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তবে কখনো কখনো এ সময়সীমা দীর্ঘও হচ্ছে।

চাহিদা ও প্রাধান্যের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহে বরাবরই রাজধানীকে অগ্রাধিকার দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। সেখানে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো)। সংস্থা দুটি বিদ্যুৎ বিতরণে এখন সবচেয়ে বেশি হিমশিম খাচ্ছে। বিতরণকারী অন্য চারটি প্রতিষ্ঠানের লোডশেডিংয়ের শিডিউল কমে এলেও ডিপিডিসি ও ডেসকো কোনোভাবেই কমাতে পারছে না। লোডশেডিংয়ের কারণে রাজধানীর অফিস-আদালত, ব্যাংক পাড়া থেকে শুরু করে সর্বত্র অস্বস্তি নেমে এসেছে। অনিয়ন্ত্রিত লোডশেডিংয়ের কারণে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়গুলোতে স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিক আওয়ারে রাজধানীতে চাহিদা ও উৎপাদনে ২৫০-৩০০ মেগাওয়াট ঘাটতি থাকায় এ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না পাওয়ায় আজকের এ পরিস্থিতি। বিশেষ করে পিক আওয়ারে সংকটটা বেশি দেখা দেয়। তবে আমাদের পক্ষ থেকে শিডিউল অনুযায়ী লোডশেডিং ঠিক রাখার চেষ্টা চলছে।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) বিদ্যুৎ চাহিদার পূর্বাভাস থেকে জানা গিয়েছে, গতকাল সারা দেশে দিনের বেলায় সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা দেখানো হয় সাড়ে ১১ হাজার মেগাওয়াট এবং রাতের বেলায় সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। পিজিসিবির ঘণ্টাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যুৎ চাহিদা ও উৎপাদনে ঘাটতি থাকছে দেড় থেকে প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট। জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনচিত্র বলছে, জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সবচেয়ে বেশি কমেছে। বিশেষ করে ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন কমে গিয়েছে ব্যাপক হারে। অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকা এ সংকট সামনে আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ও তেল সরবরাহ না বাড়ায় বিদ্যুৎ বিভাগ আছে শীতের অপেক্ষায়। চাহিদা কমে আসায় ওই মৌসুমে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে মনে করছে তারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়