সঞ্চয় বিশ্বাস : ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয়, ব্যয় ও সম্পদের তথ্য নির্ধারিত ফরমে উপস্থাপন করার মাধ্যম হচ্ছে আয়কর রিটার্ন। আয়কর আইন অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্ধারিত ফরমে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। ঢাকা পোস্ট, ইনকিলাব
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) সারাদেশে আয়কর রিটার্ন দাখিল গত অর্থবছরের (২০২১-২২) তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে দেশব্যাপী আয়কর রিটার্ন দাখিলের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন লাখে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, বাধ্যতামূলক রিটার্ন জমা দেওয়ার ফলে রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মাধ্যমে কর জিডিপির অনুপাত বাড়াবে বলেও মত তাদের।
অনলাইনে রিটার্ন জমার সেবাটি গত বছরের অক্টোবরে শুরু হয়েছিল এবং প্রায় ৭২ হাজার করদাতা অনলাইনে তাদের রিটার্ন জমা দিয়েছেন।
কর্মকর্তারা জানান, সিস্টেমটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় হওয়ায় কর্মকর্তাদের রিটার্ন জমা দেওয়ার বিষয়ে আপডেট করা যেতে পারে এবং ট্যাক্স নেট বাড়ানোর জন্য জোন এবং সার্কেল কর্মকর্তাদের মনিটর করতে পারে।
গত মঙ্গলবার পর্যন্ত দুই লাখ ৯২ হাজার ১৮৬ জন অনলাইন এবং অফলাইন উভয় মাধ্যমেই তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন। যেখানে এর আগের অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে তা ছিল ১ লাখেরও কম। এনবিআরের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ২৫ আগস্ট পরিষেবা শুরু হওয়ার পর একমাসে অনলাইন রিটার্ন জমা দিয়েছেন ১৬ হাজার ১৮৬ জন করদাতা।
চলতি অর্থবছরের এই সময়ের মধ্যে আরও ১৮ হাজার ২৮০ জন অনলাইনে তাদের রিটার্ন প্রস্তুত করেছেন এবং প্রতি মুহুর্তেই রিটার্ন জমা বাড়ছে। এছাড়া ২ লাখ ৭৬ হাজার সরাসরি আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন।
আয়কর নির্দেশিকা ও পরিপত্র ২০২২-২০২৩ অনুযায়ী ৪০ ধরনের সেবায় রিটার্ন দাখিল শুধু বাধ্যতামূলকই নয়, আয়কর রিটার্ন দাখিলেন প্রমাণ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিল না করলেও চলবে। অর্থাৎ রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক নয়।
রিটার্ন দাখিল যেসব ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নয় সেগুলো হলো- যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওর আওতায় সরকারি সুবিধাপ্রাপ্ত সেক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করলেও চলবে। ইংরেজি ভার্সন কারিকুলাম নেই এমন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক নয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এই সুবিধা পাবে।
এছাড়া স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিল, অনুমোদিত গ্র্যাচুইটি তহবিল, পেনশন তহবিল ও অনুমোদিত বার্ধক্য তহবিল বাধ্যতামূলক রিটার্ন দাখিলের বাইরে থাকছে। বাংলাদেশে ফিক্সড বেজ নেই এমন অনিবাসী স্বাভাবিক ব্যক্তিকে আয়কর রিটার্ন দিতে হবে না।
কোনো ব্যক্তি শ্রেণি যাদের বোর্ড অফিসিয়াল গেজেটে প্রকাশিত আদেশের মধ্যমে রিটার্ন দাখিল থেকে অব্যাহতি দেওয়া তাদেরও রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক নয়।
সাধারণত কোনো ব্যক্তি-করদাতার আয় যদি বছরে ৩ লাখ টাকার বেশি হয়; তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি, নারী ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের করদাতার আয় যদি বছরে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি হয়, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় যদি বছরে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি হয় এবং প্রতিবন্ধী করদাতার আয় সাড়ে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে তার রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক।
এছাড়া আরো অনেক কারণে ব্যক্তিকে আবশ্যিকভাবে রিটার্ন দাখিল করতে হয়। চলতি অর্থবছর থেকে শুধু রিটার্ন দাখিল করলেই হবে না। সরকারি সেবা পেতে হলে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্রও দেখাতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :