ভূঁইয়া আশিক রহমান: কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেছেন, আমি বঙ্গবন্ধুর একজন অনুসারী হিসেবে চা-শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবো। রাজপথে নামবো, যদি চা-শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরি যদি না মানা হয়। একইসঙ্গে সকল কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীকে আহ্বান জানাবো, শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির প্রতি সমর্থন দিয়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
তিনি বলেন, চা-শ্রমিকদের খুব কম টাকা মজুরি দেওয়া হয়, এটা খুবই অস্বাভাবিক। আপত্তিজনক। একজন মানুষ সারাদিন কাজ করে পাবেন মাত্র ১২০ টাকা। এমনটি কোনোভাবেই হতে পারে না। এটা মেনে নেওয়া যায় না। শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ন্যূনতম ৩০০ টাকা হতে হবে। দেশে কোনো খাতের শ্রমিকের মজুরিই দৈনিক ৪০০-৫০০ টাকার নিচে নয়। গ্রাম-গঞ্জের মজুররাও দিনে ৪০০-৫০০ টাকার নিচে মজুরি পান না।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কি আপনার যোগাযোগ হয়েছে, কোনোভাবে? জানতে চাইলে নির্মলেন্দু গুণ বলেন, আন্দোলনের শুরুর দিকে আন্দোলনকারীদের একজন আমাকে অনুরোধ করেছিলেন শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির প্রতি সমর্থনে একটা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করার জন্য। আমি তাকে বলেছিলাম, অবশ্যই, অবশ্যই, অবশ্যই আমি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করবো।
চা-শ্রমিকদের দুর্দশার চিত্র সম্পর্কে কেন সরকার অবগত নয়- এমন প্রশ্ন রেখে প্রতিথযশা এই কবি বলেন, দেখি সরকার চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে কোনো বক্তব্য রাখে কিনা। সংকট থেকে উত্তরণে প্রধানমন্ত্রীর পরিষ্কার বক্তব্যও আমরা পাচ্ছি না। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে ফিরে বলেছিলেন, এ দেশের জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্যই তিনি ফিরে এসেছেন। শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে তিনি কাজ করবেন। আমার প্রশ্ন, চা-শ্রমিকরা কি শোষিত-বঞ্চিত নন? এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রত্যাশা করছি। একইসঙ্গে বলবো, বঙ্গবন্ধুকন্যা, দর্শকের ভূমিকায় আপনাকে মানায় না।
চা-বাগানের মালিকেরা ব্রিটিশ আমলে তাদের শোষণ করার জন্য দক্ষিণ ভারত থেকে নিয়ে এসেছিলেন। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে কোনো সুযোগ কোনো সরকারই তৈরি করেনি। পাকিস্তান আমলেও না, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও সেটা করা হয়নি- এমন অভিযোগ করে নির্মলেন্দু গুণ বলেন, শ্রমিকেরা চা বাগানের ভেতরেই থাকেন। সেখানেই সন্তান জন্ম দেন। তাদের জন্য মদ নিষিদ্ধ করা হয় না। কেন? কারণ যাতে চা-শ্রমিকেরা দীর্ঘ জীবন লাভ না করেন। শ্রমিকদের বঞ্চিত করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়। এটা অমানবিকতা। এই অমানবিকতার বিরুদ্ধেই তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিলো। চা বাগানের শ্রমিকদের শ্রমের অবমূল্যায়ন মুক্তিযুদ্ধের মূল স্পিরিটের বিরুদ্ধে। বঙ্গবন্ধুকন্যা এতোদিন ক্ষমতায় আছেন, আপনার চোখে একবারও পড়েনি এতো বড় একটা অসংগতি?
চা-বাগানের মালিকদের প্রতি গভীর উষ্মা প্রকাশ করে কবি বলেন, মানুষ ধ্বংস করে শিল্প গড়ার কোনো দরকার নেই। মানুষই সবচেয়ে বড়। মানুষকে ধ্বংস করবেন, শিল্পকে রক্ষা করবেন- এই শিল্প আমার দরকার নেই। গার্মেন্টস মালিকেরাও এ ধরনের কথা বলতেন। গার্মেন্টসশিল্প শ্রমিকদের তো বেতনভাতা বহুবার বৃদ্ধি করা হয়েছে। গার্মেন্টসশিল্প কিন্তু ধ্বংস হয়নি। বরং এতে গার্মেন্টসশিল্প লাভবান হয়েছে।
বেতন বৃদ্ধি করলে চা-শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে- এমন কথা বলে শ্রমিকদের বঞ্চিত করা হয়েছে। এটা ঠিক নয়। চা শ্রমিকেরা যুগ যুগ ধরে একই কাজ করে আসছেন। মূল ধারার আন্দোলনের সঙ্গে তারা পরিচিত নয়। যুক্তও নয়। একটা বড় অন্যায় আমাদের সমাজে চলমান। এই অন্যায় বিরুদ্ধে অবশ্যই আমাদের সোচ্চার হতে হবে। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব
আপনার মতামত লিখুন :