আব্দুল বাছিত বাচ্চু, মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজার চা শ্রমিকদের আন্দোলন চরম অস্থিরতায় ফেলে দিয়েছে সরকারকে। সরকার তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। রোববার সিলেটে দফায় দফায় মিটিং করেছেন জেলা প্রশাসক মজিবুর রহমান ও জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। গভীর রাত পর্যন্ত দ্বিপক্ষীয় এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আগের দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি নিয়ে কাজে যোগ দিতে রাজি হয়েছে শ্রমিকরা। তবুও ১৪৫ টাকা মজুরি নেবে না তারা। তবে দুর্গাপূজার আগে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলতে চান চা শ্রমিক নেতারা।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা আমাদের নতুন সময় কে বলেন, সরকারের অনুরোধে আমরা কাজে যোগ দিতে রাজি হয়েছি। কিন্তু শ্রমিকরা ১৪৫ টাকা মজুরি নেবে না। তারা আগের ১২০ টাকায় কাজ করতে রাজি হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে আসন্ন দুর্গাপূজার আগেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স হবে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের কথা শুনবেন। আমরা উনার মুখ থেকে মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি শুনতে চাই। সোমবার ( ২২ আগস্ট) সকাল ৮ টায় চা শ্রমিকদের এই নেতা মুঠো ফোনে আমাদের নতুন সময়কে জানান, আমাদের চা শ্রমিকেরা কাজের জন্য বের হয়েছে।
কোনো চাপে পড়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বিজয় হাজরা বলেন, না আমরা কোনো চাপে পড়ে এই সিদ্ধান্ত নেই নি। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু দুর্গাপূজার আগে আমাদের কথা শুনবেন তাই আমরা তা মেনে নিয়েছি।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পাঠানো যৌথ বিবৃতি সুত্রে জানা যায়, রোববার গভীর রাতে মৌলভীবাজার প্রশাসনের সাথে চা শ্রমিক নেতাদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া,শ্রম অধিদপ্তরের উপ পরিচালক নাহিদ ইসলাম ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গতকাল রাত ৯ টায় সভা শুরু হয়ে চলে গভীর রাত পর্যন্ত। দ্বিপক্ষীয় ওই সভায় যৌথ বিবৃতি স্বাক্ষরিত হয়। চা শ্রমিকদের পক্ষে স্বাক্ষর করেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দী, কমল চন্দ্র বুনার্জী, নির্মল দাস পাইনকা ও শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।
দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে ৭৩ টি ফাঁড়ি বাগানসহ দেশের ২৪০ টি চা বাগানে চা শ্রমিকদের এই আন্দোলন শুরু হয়। প্রথমে ৪ দিন চা শ্রমিকরা ২ ঘন্টা করে কর্মবিরতি পালন করে। পরে মালিকপক্ষ ১২০ টাকা থেকে ১৪ টাকা বাড়িয়ে মাত্র ১৩৪ টাকা মজুরী দেওয়ার প্রস্তাব দিলে আন্দোলন লাগাতার ধর্মঘটে রুপ নেয়।এই পরিস্থিতিতে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলে বিভাগীয় শ্রম দপ্তরে ছুটে আসেন। কিন্তু দিনব্যাপী দফায় দফায় বৈঠক করেও কোনো সুরহা করতে না পারায় সমঝোতা ভেস্তে যায়। পরে ঢাকায় আবারও ত্রিপক্ষীয় সভা কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়া শেষ হ্য।
সর্বশেষ গত শনিবার শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী শ্রীমঙ্গল বিভাগীয় শ্রম দপ্তরে এসে আবারও সভা করে ১৪৫ টাকা মজুরী নির্ধারণ করা হয়। এতে রাজি হয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। কিন্তু বিভিন্ন ভ্যালির শ্রমিকরা তা মেনে নেয়নি। ফলে মাত্র ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে তা প্রত্যাহার করে নেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। রোববার হবিগঞ্জ ও সিলেটে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন জোরদার করে সাধারণ চা শ্রমিকেরা। ‘৩০০ টাকা মজুরি দে,নইলে বুকে গুলি দে’ এমন স্লোগান শুরু করলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা বেড়ে যায়। সম্পাদনা: মাজহার মাহবুব
আপনার মতামত লিখুন :