এম মাছুম বিল্লাহ : [২] বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ২০৫০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার এক কোটি ৩৩ লাখ মানুষ বাসস্থান হারাবেন। এই ধকল মোকাবিলায় কোপ-২৬ এ উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে তহবিলের প্রতিশ্রুতি আদায়ে আশাবাদী বাংলাদেশ সরকার।
[৩] বিজ্ঞানীদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সম্প্রতি এক ভার্চুয়াল সেমিনারে বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশের এক কোটি মানুষ এরইমধ্যে জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছেন। সমূদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, নদীর পানির লবণাক্ততা বাড়া, নদী ভাঙ্গন এবং ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যাওয়ার অভিঘাতে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।’’
[৪] বিশ্বব্যাংকের হিসাব জানাচ্ছে, বাংলাদেশে এখন প্রতিবছর চার লাখ মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসছেন স্থায়ীভাবে। এই সংখ্যা প্রতিদিন দুই হাজারের মতো। তাদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ জলবায়ু উদ্বাস্তু।
[৫] বাংলাদেশের দক্ষিণের জেলা বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) আহ্বায়ক নুর আলম শেখ বলেন, ‘‘লবনাক্ততা বাড়ছে। বাড়ছে নদী ভাঙন। যা প্রাণ ও প্রকৃতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কৃষি নির্ভর এলাকার মানুষ কাজ হারিয়ে শহরে যাচ্ছেন কাজের খোঁজে। কেউ যাচ্ছেন একা আবার কেউ সপরিবারে। তারা শুধু ঢাকা নয় অন্য শহরেও যাচ্ছেন কাজের খোঁজে।’’
[৬] জলবায়ূ বিশেষজ্ঞ ড. আতিক রহমান বলেন, তিনি বলেন, ‘শুধু গরিব মানুষ নন, ধনীরাও এর শিকার হচ্ছেন। খাবার পানির সংকট সবাইকে বিপর্যস্ত করছে। লবণ পানির কারণে এই এলাকায় প্রতি তিনজনে একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়ে মানুষ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।’’
[৭] বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন তুলে ধরা হবে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬ এ। তাতে বলা হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থ বছরে জলবায়ু সংশ্লিষ্ট খাতে বাংলাদেশের বরাদ্দের পরিমাণ দুই হাজার ১৮৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। তবে করোনার কারণে আগের চেয়ে এই বরাদ্দ কমেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মেকাবিলায় বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে। জলবায়ু এবং এর তহবিল নিয়ে কাজ করছে ২৫টি মন্ত্রণালয়।
[৮] বাংলাদশে এ পর্যন্ত গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি থেকে ৪৩টি প্রকল্পে ১৬ কোটি মার্কিন ডলার অনুদান পেয়েছে। গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে নয় কোটি ৪৭ লাখ ডলার, ক্লাইমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড থেকে ১১ কোটি ডলার অর্থ পেয়েছে। এর বাইরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উৎস থেকে ১০৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার অনুদান পেয়েছে। আর সরকার প্রতি বছর জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে ১০০ কোটি ডলার ব্যয় করছে রাজস্ব খাত থেকে।
[৯] খ্যাতিমান পরিবেশবিদ ও জলবায়ু গবেষক ড. আতিক রহমান মনে করেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সঠিক পথেই আছে। বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও নিজেদের উদ্যোগে প্রভাব মোকাবিলার চেষ্টা করছে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে,কৃষি উৎপাদন বাড়াচ্ছে। কারিগরি দিকেও কাজ হচ্ছে। বাংলাদেশ তার উৎপাদনের সাথে রপ্তানি বাড়াচ্ছে।
[১০] তিনি বলেন, ‘‘যারা জলবাযুর এই ক্ষতির জন্য দায়ী তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ফান্ড দিতে হবে। এই জায়গায় আমাদের শক্ত অবস্থান নিতে হবে। এটা বাংলাদেশের একার কাজ নয়। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে করতে হবে।’’
[১১] পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কিছু দেশের প্রবৃদ্ধি চার শতাংশ কমে যেতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :