শিরোনাম
◈ কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙনে জাতীয় গ্রিডের টাওয়ার নদীতে বিলীন ◈ ভারতে থাকার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, কোন আইনের বলে ভারতে থাকবেন শেখ হাসিনা? ◈ (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার ◈ স্থিতিশীল ডলারের দর, ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও ◈ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘গ্যারান্টিতে’ নগদ টাকার সংকট কাটছে যে ৫ ব্যাংকের ◈ হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপপ্রচার চলছে, জাবিতে কোন কমিটিই নেই : ছাত্রদল ◈ গণপিটুনিতে মৃত্যু: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দুঃখপ্রকাশ, বৈষম্যবিরোধীদের নিন্দা, ফেসবুকে নানা সমালোচনা ◈ ভারতের গোলা যাচ্ছে ইউক্রেনে, ক্ষুব্ধ রাশিয়া ◈ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সুনামগঞ্জে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার গ্রেফতার ◈ মব জাস্টিস শুধু সহিংসতা ও অন্যায় সৃষ্টি করে: সমন্বয়ক হাসনাত

প্রকাশিত : ০৩ আগস্ট, ২০২২, ০৩:৫৩ রাত
আপডেট : ০৩ আগস্ট, ২০২২, ০৩:৫৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আদেশেই সীমাবদ্ধ কৃচ্ছ্রসাধন

ছবি: সংগৃহীত

যায়যায়দিন: কোভিড-পরবর্তী অর্থনৈতিক অভিঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলশ্রম্নতিতে বিশ্বব্যাপী জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট সংকটময় পরিস্থিতিতে সরকার কৃচ্ছ্রসাধনে নানা উদ্যোগ নিলেও তার কোনো উলেস্নখযোগ্য প্রভাব এখনও দেখা যায়নি। উলটো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় সবখানে সাশ্রয়ী তৎপরতা না বেড়ে বিভিন্ন পর্যায়ের অপচয়ের ফিরিস্তি তুলে ধরার প্রতিযোগিতা বেড়েছে।

প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে কৃচ্ছ্রসাধনে সরকারি নির্দেশনা দেখভালের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। নির্দেশনা অমান্য করলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে ব্যাপারে পরিপত্রে কিছুই বলা হয়নি। এমনকি কৃচ্ছ্রসাধনের সুনির্দিষ্ট রূপরেখাও নেই।

সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদু্যৎ ব্যবহারে কতটা সাশ্রয়ী হতে হবে তা উলেস্নখ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্রে বলা হয়, বাজেটে বরাদ্দ থাকলেও এখন থেকে সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ২০-২৫ শতাংশ কম জ্বালানি তেল ও বিদু্যৎ ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ, রাষ্ট্র মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের ক্ষেত্রে এ পরিপত্র প্রযোজ্য। পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট এবং গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে।

চলতি অর্থবছরের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্টের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। এ খাতে সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা হলে ১ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এতে সাশ্রয় হবে ৪৮৯ কোটি টাকা।

গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের ২৫ শতাংশ সাশ্রয় করতে বলা হলেও বরাদ্দের পরিমাণ বাজেটে অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে উলেস্নখ না থাকায় বরাদ্দ ও সাশ্রয়ের পরিমাণ নিরূপণ সম্ভব হয়নি।

অন্যদিকে অনিবার্য না হলে শারীরিক উপস্থিতিতে সভা পরিহার, অধিকাংশ সভা অনলাইনে আয়োজন এবং অত্যাবশ্যক না হলে বিদেশ ভ্রমণ যথাসম্ভব পরিহার করতে বলা হলেও এর কোনো রূপরেখা নেই। সরকারি কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তা গাড়ি ব্যবহার কীভাবে কতটা কমিয়ে আনবেন এর দিক নির্দেশনা এখনও তৈরি হয়নি। এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও পূর্বঘোষিত শ্রেণিবিন্যাস বরাবরের মতো উপেক্ষিত রয়ে গেছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ, রাষ্ট্রমালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এসি-বৈদু্যতিক বাতির ব্যবহার অনেকটা আগের মতোই রয়ে গেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী একজন সচিব ও অতিরিক্ত সচিব প্রয়োজন অনুযায়ী শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র পাবেন, যুগ্ম সচিব, উপসচিব এবং সিনিয়র সহকারী সচিব ও সহকারী সচিব একটি করে এসি ব্যবহার করতে পারবেন,

\হসেখানে তা মানা হচ্ছে না। রাজধানীর বাইরে বিভাগীয় শহর-জেলা ও উপজেলা শহরে প্রশাসনের কর্মকর্তারা সরকারি প্রাপ্যতার প্রাধিকার মানছে না। অনেক ডিসি-ইউএনও এবং সহকারী কমিশনার দুইটি এসি ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ বর্তমান সরকার ২০২০ সালে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রাপ্যতার প্রাধিকার পরিপত্র জারি করে।

এদিকে সরকারি গাড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার আগের মতোই চলছে। বাড়ির বাজার, ছেলেমেয়েদের স্কুলে আনা-নেওয়াসহ পারিবারিক যেকোনো কাজে হরদম পুড়ছে সরকারি টাকায় কেনা জ্বালানি তেল। এরই মধ্যে বিদু্যৎ বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বিভাগের গাড়ি নিয়ে কাওরান বাজারে কাঁচাবাজার করতে আসা এবং গাড়িতে এসি চালিয়ে চালকদের বিশ্রামের ভিডিও বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিকারুননিসা নূন, মতিঝিল আইডিয়াল ও সিদ্ধেশ্বরী গালর্স স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তানদের আনা-নেওয়ার দৃশ্যও অহরহ চোখে পড়ছে। অথচ ব্যক্তিগত কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহার বন্ধে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বারবার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ডক্টর এম শামসুল আলম বলেন, প্রত্যেকটা সরকারি অফিসের গাড়ি বন্ধ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গণপরিবহণে আসা-যাওয়া করতে বলা হলে রাতারাতি অর্ধেক জ্বালানি বেঁচে যাবে। গণপরিবহণ খাত ছাড়া ব্যক্তিগত পরিবহণ খাত ও সরকারের পরিবহণ খাতে যদি কৃচ্ছ্রসাধনের সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে জ্বালানি ব্যয় অনায়াসে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ কমে আসবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, বিদু্যৎ ও জ্বালানি তেল সাশ্রয়ের জন্য সরকার নানা নির্দেশনা দিয়েছে। এ নির্দেশনা যেন শুধুমাত্র কাগজে না হয়। সরকারি কর্মকর্তাদের উচিত হবে নিজেরা সর্বপ্রথম বাস্তবায়ন করে সাধারণ মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত তৈরি করা।

এদিকে রাত ৮টার পর দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি তা অমান্যকারীদের বিদু্যৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ এখনও যথেষ্ট দুর্বল। পাড়া-মহলস্না, বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকার বিপুল সংখ্যক দোকানপাট রাত ১০-১১টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। বিদু্যৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের এ বিষয়টি তদারকির নির্দেশ দেওয়া হলেও তাদের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। রাত ৮টার পর দোকানপাট খোলা রাখার কারণে বৈদু্যতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কোনো নজিরও এ ক'দিনে সৃষ্টি হয়নি।

এদিকে দেশে ডলার সংকট নিরসনে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে সরকার নানাভাবে কৃচ্ছ্রসাধনের চেষ্টা চালালেও এরই মধ্যে ফাঁকফোকর গলিয়ে বৈদেশিক প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ সফরের আয়োজনের প্রতিযোগিতা আগের মতোই চলছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়