মনজুর-এ আজিজ: জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উপদেষ্টা অধ্যাপক এম. শামসুল আলম বলেছেন, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি খাতে সরকারের অনেক গুরুত্ব প্রদানের কথা থাকলেও এখাতের সরকারি সংস্থাগুলির সাথে সরাসরি আলোচনা ও তাদের প্রদত্ত তথ্য মোতাবেক অনেক জায়গায় গড়মিল পরিলক্ষিত হচ্ছে। যা দেশের শিল্প, কলকারখানা ও উৎপাদনে নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করবে। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে নগরীর পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, এলপিজি ও জ্বালানি তেলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ পরবর্তী বিষয়গুলি নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।

এম. শামসুল আলম বলেন, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় অবকাঠামো তৈরি করা হয়ে আছে। কিন্তু উৎসস্থলে সরববরাহ ও বিতরণের ক্ষেত্রে সক্ষমতা তৈরি হয়নি। এটা এ সমস্ত সেবার ক্ষেত্রে বড় হুমকি। একটা সময় এসমস্ত খাতে ভোক্তাদের মধ্যে অসন্তুষ্ঠি দানাবেঁধে উঠবে। বিতরণের ক্ষেত্র তৈরির পাশাপাশি সরবরাহের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। একই সাথে বিভিন্ন অজুহাতে দাম বাড়ানোর যে প্রক্রিয়া চলমান আছে তা সামগ্রিক জ্বালানি খাতের জন্য শুভকর নয়। 

কারণ ভোক্তাদের মাঝে মানসম্মত ও গুনগত সেবা পৌঁছানো, অধিকতর কমসামর্থবানদের কাছে সেবা নিশ্চিত করা না গেলে বৈষম্যের মাত্রা সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করবে। উন্নয়ন প্রকল্পে নাগরিক পরীবিক্ষণ না থাকায় সুশাসনের ঘাটতির কারণে অনিয়ম ও দুর্নীতির মতো বিষয়গুলো স্থায়ী বাসা বাঁধছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, সরকার ও প্রশাসনে সকল পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষমতা ও প্রভাব এত বেশী হয়ে আছে, যেখানে সবকিছু তারা নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছেন। সেখানে জেলা পর্যায়ে সরকারী কর্মকর্তাদের পক্ষে ব্যবসায়ীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করা কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। তাই এখন প্রয়োজন অনিয়ম ও ভোগান্তির বিরুদ্ধে তৃণমূলে জনগণের সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা। 

জানা যায়, গত রমজানের ঈদের পর ৫ মে দেশে সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ৩৮ টাকা রেকর্ড পরিমাণ বাড়িয়ে পুনর্র্নিধারণ করেছিল সরকার। 

এরপর বিগত ৯ জুন কোন প্রকার কারণ ছাড়াই মিল পর্যায়ে ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম মিলগেটে ১৮০ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৮২ টাকা ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম মিলগেটে ১৯৫ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৯৯ ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এক লিটারের খোলা পাম অয়েলের (সুপার) দাম মিলগেটে ১৫৩ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৫৫ ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৫৮ টাকা করা হয়। 

আর্ন্তজাতিক বাজারে তিন মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ২০০-৪৯০ ডলার কমলেও দেশে তার বিপরীতে ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে এক মাসে দুদফায় লিটারপ্রতি সয়াবিনের দাম বাড়িয়েছেন ৫১ টাকা। 

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের গড় মূল্য ছিল টনপ্রতি ৭৬৫ ডলার। ২০২০ সালে দাম ছিল ৮৩৮ ডলার এবং ২০২১ সালে সয়াবিনের টনপ্রতি দাম ছিল ১৩৮৫ ডলার। কিন্তু চলতি বছরের মার্চে একপর্যায়ে তা বেড়ে যায়। মার্চে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম হয় ১৯৫৬ ডলার। সর্বশেষ ১৩ জুলাই পাম অয়েলের টনপ্রতি দাম কমতে কমতে ৯৪১ ডলার এবং সয়াবিনের দাম নেমে আসে ১ হাজার ৩৫৩ ডলারে। এরপরও দেশে সয়াবিনের দাম না কমায় সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।