শিরোনাম
◈ ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ: জানালেন আইন উপদেষ্টা ◈ জাহাঙ্গীরনগরে ‘গণপিটুনিতে’ সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু ঘিরে রহস্য ◈ তমা মির্জার সঙ্গে সম্পর্ক ফাটলের গুঞ্জন, যা বললেন রাফি (ভিডিও) ◈ ‘মারছে, ভাত খাওয়াইছে, এরপর আবার মারছে, ভাত খাওয়াইছে : তোফাজ্জলের মামাতো বোন (ভিডিও) ◈ ঢাবিতে পিটিয়ে যুবক হত্যার ঘটনায় ৪ শিক্ষার্থী আটক ◈ শামীম ওসমানের পুরোনো ভিডিওটি ভাইরাল : ‘ফিরব কি না জানি না’ ◈ জাদেজা-অশ্বিনের জুটিতে টেস্টের নিয়ন্ত্রণ হারালো বাংলাদেশ ◈ দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, ঘুরতে দেখা গেছে পার্কে : ফিনান্সিয়াল টাইমসের রিপোর্ট ◈ ফের নেতাকর্মীদের জন্য আওয়ামী লীগের জরুরি নির্দেশনা ◈ মণিপুরের সহিংসতায় মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতার বসাচ্ছে ভারত

প্রকাশিত : ২৬ জুলাই, ২০২২, ০৮:১৪ রাত
আপডেট : ২৬ জুলাই, ২০২২, ০৮:৩৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

লোডশেডিং থেকে সহসা মুক্তি পাচ্ছেনা বাংলাদেশ, মফস্বলে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং

লোডশেডিং

মনজুর এ আজিজ: সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথম ধাপে সারাদেশে ১ ঘণ্টা করে লোডশেডিং করার কথা থাকলেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ২ ঘন্টা করে লোডশেডিং  দেওয়া হচ্ছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। আর মফস্বলে ঘন্টায় ঘন্টায় লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানা গেছে। এদিকে সরকারের ভুল আমদানি নীতির কারণে সহসা লোডশেডিং থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পাচ্ছেনা মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। পিডিবি জানিয়েছে, মঙ্গলবার সারাদেশে বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল ২০৪০ মেগাওয়াট। যা গত কয়েকদিনের চেয়ে বেশি। 

পিডিবির হিসেবে মঙ্গলবার সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৮৫০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ১১ হাজার ৮১০ মেগাওয়াট। এতে মঙ্হলবার সারদেশে বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল ২০৪০ মেগাওয়াট। সরকারের লোডশেডিং দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর এদিন সবচেয়ে বেশি ঘাটতি পড়ায় খোদ রাজধানীতেই কোথাও কোথাও ২ ঘন্টা কওে লোডশেডিং করতে হয়েছে। তবে বিদ্যুতের লোডশেডিং দিয়ে বতর্মান জ্বালানি সংকটের খুব বেশি সমাধান হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। 

এদিকে লোডশেডিংয়ের শিডিউল ঢাকায় মোটামুটি মানা হলেও অন্য কোথাও মানা হচ্ছে না। বেশি অভিযোগ গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণকারী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিরুদ্ধে। সরকারের তরফ থেকে একঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের কথা বলা হলেও কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকছে না। সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও ময়মনসিংহের নেত্রকোনায় ২৪ ঘন্টায় ৪-৫ ঘন্টা লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। লোড বরাদ্দ আরও কম পাওয়ায় লোডশেডিং বাড়িয়ে দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন ও বিতরণ বিভাগ সিলেট। এখানে ঘন্টায় ঘন্টায় বিদ্যুৎ থাকছেনা বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন।  

আরইবি সূত্র জানিয়েছে, চাহিদার ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ কম পাচ্ছে আরইবি। এতে দিনে ২ ঘন্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ আরও কম দেওয়া হচ্ছে। ফলে রাতে অন্তত আরও ২ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। 

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১০টি ডিজেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রাখায় ১ হাজার ৬১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হয়েছে। পাশাপাশি এলএনজি আমদানি বন্ধ রাখায় আরও প্রায় ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হওয়ায় আপাতত লোডশেডিং করে জ্বালানি সাশ্রয় করার চেষ্টা করছে সরকার।

এদিকে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি জানিয়েছে, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে বর্তমান সরকারের ভুলনীতি ও দুর্নীতি এই সংকট তৈরি করেছে। এতে কমিশনভোগী এজেন্ট ও কিছু দেশি-বিদেশি গোষ্ঠী লাভবান হয়েছে বলে মনে করছে সংগঠনটি। 

সংগঠনটির নেতারা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও এলএনজির মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় খরচ সাশ্রয়ের জন্য পরিকল্পিতভাবেই এই লোডশেডিং করতে হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এক দশকের বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে উন্নয়নের নামে সরকার বিশেষ জ্বালানি আইনের দায়মুক্তির বিধানের আশ্রয়ে দেশি-বিদেশি বেসরকারি মালিকানায় তেল-কয়লা-এলএনজির মতো আমদানিনির্ভর জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির কারণেই এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সহসা লোডশেডিং থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পাবে না বলে মনে করছে সংগঠনটির নেতারা।

এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম তামিম বলেন, বর্তমানে দেশে নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছে। দেশে যেকোনো সময় উৎপাদন কমে যেতে পারে। তাছাড়া প্রাথমিক জ্বালানির জোগান না বাড়িয়ে পুরোপুরি আমদানিনির্ভর হওয়ার কারণেই বর্তমানে বিদ্যুৎ সংকট সৃস্টি হয়েছে। তাই সহসা এ সংকট কাটছে না। 

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উপদেষ্টা অধ্যাপক এম. শামসুল আলম বলেন, দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ২২ হাজার ৩৪৮ মেগাওয়াট, যার প্রায় অর্ধেক বেসরকারি মালিকানার রেন্টাল, কুইক রেন্টাল ও আইপিপি মডেলের। বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের নামে কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়াই বিশেষ জ্বালানি আইনের দায়মুক্তির বিধানের আওতায় এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি এমনভাবে করা হয়েছে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও বসিয়ে রাখা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য মালিকদের ক্যাপাসিটি চার্জ বা ভাড়া দিতে হয়। ক্যাপাসিটি চার্জের নামে গত তিন বছর বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের পকেটে গেছে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। 

তিনি বলেন, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি খাতে সরকারের অনেক গুরুত্ব প্রদানের কথা থাকলেও এখাতের সরকারি সংস্থাগুলির সাথে সরাসরি আলোচনা ও তাদের প্রদত্ত তথ্য মোতাবেক অনেক জায়গায় গড়মিল থাকায় দেশের শিল্প, কলকারখানা ও উৎপাদনে নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃস্টি হচ্ছে। তাছাড়া সঠিক হিসাব না থাকলে লোডশেডিংয়ের এ চলমান অবস্থা দীর্ঘায়ু হওয়ার আশঙ্কার কথা জানান তিনি।  

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়