সুজন কৈরী: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। আইএস নাম দিয়ে বাংলাদেশকে অচল করার চেষ্টা হয়েছে। শোলাকিয়া ঈদগাহে হামলা করা হলো। ক্রমাগতভাবে হামলা হতে থাকলো। এর মধ্যেই হলি আর্টিজানে হামলা হলো। তিনি বলেন, সারা পৃথিবীর মানুষ বিশেষ করে আমেরিকা বলেছিল বাংলাদেশ শেষ হয়েছে গেছে। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এ দেশে উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই।
রোববার রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) সংকলিত ‘ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা কথা বলেন তিনি।
এটিইউ প্রধান কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে দেখানো ও প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে তাদের সে চেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্কতার সঙ্গে তা মোকাবেলা করছে। বিশ্বব্যাপী ইসলামকে উগ্রবাদ সন্ত্রাসবাদের ধর্ম হিসেবে আখ্যা দেয়ার চেষ্টা চলছে। তবে সেটি বাংলাদেশে সম্ভব হয়নি। যেখানে সিরিয়াসহ বেশ কয়েকটি ধর্মপ্রাণ মুসলমান দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের স্থান নেই। এটা বিদেশ থেকে ভাড়া করা জিনিস। এদেশের কৃষক-শ্রমিক, সাধারণ জনগণ, আলেম-ওলামা, মসজিদের ঈমাম, শিক্ষকদের সহযোগিতায় সমর্থনে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সাধারণ মাদ্রাসা, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও বুকে ব্যানার লাগিয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বলেছে, আমরা জঙ্গিবাদ চাই না। কোনো সময়ই ইসলাম জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেয়নি উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। ইসলামে বিনা কারণে গাছের ডাল ভাঙ্গারও বিধান নেই। সেখানে মানুষ হত্যার তো প্রশ্নই আসে না। কিন্তু জিহাদের নামে যারা মানুষ হত্যা করছে তাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।
জঙ্গিবাদের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিটিটিসি এবং পরে এন্টি টেররিজম ইউনিট গঠন করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে ধর্মান্ধ রাষ্ট্র নয়, তা সারা পৃথিবীতে প্রমাণ করতে সক্ষম বাংলাদেশ। যে কারণে বাংলাদেশ সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানে পরিণত হয়নি। যদিও উস্কানি নিয়ে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চলেছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ শীর্ষক গ্রন্থটি সব ভাষাতেই অনুবাদ করার আহবান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাহলে সবাই বুঝতে পারবে ইসলাম শান্তির ধর্ম; এখানে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের কোন স্থান নেই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিট হিসেবে এন্টি টেররিজ ইউনিট পেশাদারিত্বের সাথে জঙ্গি, চরমপন্থী দমনে কাজ করছে।
তিনি বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে সন্ত্রাস বা কারো ওপর আক্রমণের কোন স্থান নেই। অথচ কোরআন হাদিসের অপব্যাখ্যা দিয়ে উগ্রবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি কোরআন হাদিসের অপব্যাখ্যার বিরুদ্ধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কাজ করার আহবান জানান।
এটিইউ প্রধান অতিরিক্তি আইজি মো. কামরুল আহসান বলেন, এন্টি টেররিজম ইউনিট একটি নবগঠিত সংস্থা। জঙ্গিবাদ দমনের পাশাপাশি জঙ্গিবাদ বিরোধী সচেতনামূলক কাজও করে থাকে এ ইউনিট। জঙ্গিবাদ বিরোধী জনসচেতনতামূলক কাজের অংশ হিসেবে কোরআন হাদিসের সঠিক তথ্য তুলে ধরে ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ গ্রন্থটি সংকলন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ গ্রন্থের সম্পাদনা পরিষদের সম্পাদক মন্ডলী সভাপতি শোলাকিয়া ঈদগাম ময়দানের প্রধান ইমাম শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ গ্রন্থে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। তিনি গ্রন্থটি পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা এবং ইংরেজি ও আরবি ভাষায় অনুবাদ করে এর বহুল প্রচার করার আহবান জানান।
পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অন্যান্য অতিথিদের সাথে নিয়ে অনুষ্ঠানিকভাবে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন।
‘ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ গ্রন্থে ইসলামের পরিচিতি থেকে শুরু করে জিহাদসহ বহুল আলোচিত ও চর্চিত ৪৪টি বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। দেশবরেণ্য ১৫ জন আলেম, গবেষক, অধ্যাপক ও খতিব বইটির সম্পাদনা পরিষদে যুক্ত ছিলেন। প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। গ্রন্থটি গ্রন্থনা, রচনা ও সংকলন করেছেন মুফতি সদরুদ্দীন মাকনুন এবং মাওলানা মিরাজ রহমান।
আপনার মতামত লিখুন :