বাসস।। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, সাংবাদিকদের জন্য সুরক্ষা আইনের পাশাপাশি সাংবাদিকতার দায়িত্ব ও নৈতিকতা-বিষয়ক আইন হওয়া প্রয়োজন। কোনো সাংবাদিক দায়িত্বশীল ও পেশাদার না হলে তিনি আইনি সুরক্ষা পেতে পারেন না।
আজ সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ফ্যাসিবাদের ১৫ বছরে গণমাধ্যমের বাস্তবতা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সাথে আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, পাঁচ আগস্টের পরে পুলিশ প্রথম অ্যাকশনে গেছে প্রথম আলো পত্রিকার অফিস রক্ষা করতে। পুলিশ হামলাকারীদের প্রতিহত করতে লাঠি চার্জ করেছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের সময় সংবাদপত্রে ব্যাপক কোনো পরিবর্তন হয়নি। বিগত আওয়ামী সরকারের শাসনামলে অনেক সাংবাদিককে চাকরি হারাতে হয়েছিল। অনেক পক্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তখন সাংবাদিকদের একটি গোষ্ঠী আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার তথা শেখ পরিবারকে রক্ষা করতে কাজ করেছে। সাংবাদিকদের বেতন ও তাদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি এবং সাংবাদিকদের জন্য ওয়েজবোর্ড গঠনের বিষয়ে কাজ করবেন বলে জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে গণহত্যা চালিয়েছিল, এটি দেশবাসী দেখেছে। দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদের মধ্যে থাকার ফলে অনেক সাংবাদিকের মাঝে এক ধরনের সেলফ-সেন্সরশিপ কাজ করছে। এই অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের অনেক সতর্ক থাকা প্রয়োজন। অসত্য সংবাদ প্রকাশের ফলে অনেকের জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।
মাহফুজ আলম বলেন,গণমাধ্যমে বিদ্যমান সংকট সমাধানে সরকার কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া গণমাধ্যমের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি গণমাধ্যমে ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টিতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিশেষ করে ‘মব’ আগের তুলনায় কমেছে। বর্তমান সরকার দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করছে।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ-যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ আল মামুন।
মূল প্রবন্ধে তিনি বিগত সরকারের আমলে গণমাধ্যমের অপেশাদার আচরণের চিত্র তুলে ধরেন। শিকারি সাংবাদিকতার সমালোচনা করে বলেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সময় শিকারি সাংবাদিকতার মাধ্যমে মানুষকে অপরাধী বানিয়ে শাস্তি দেওয়া হতো। এক ধরনের ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করাই ছিল শিকারি সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য।
মামুন বলেন, সাংবাদিকদের একটি প্লাটফরম শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন আপনাকে ক্ষমতায় রাখতে যা যা প্রয়োজন আমরা করবো। তারা সরকারের পক্ষে সংবাদ প্রকাশ করেন।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, তথ্য মন্ত্রণালয় শিকারী সাংবাদিকতা নিয়ে যে বইটি প্রকাশ করতে যাচ্ছে, সেটি একটি শ্বেতপত্রের মতো কাজ করবে। বইটির মাধ্যমে আত্মসমালোচনার একটি জায়গা তৈরি হবে।
তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর কে, কীভাবে বিভিন্ন নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, নানান অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে তাদের সময় অতিবাহিত হয়েছে, সেগুলো নিয়েও তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি সংকলন হতে পারে।
সভায় বক্তারা বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নেয়ার জন্য সাংবাদিকদের একটি অংশ গত ১৫ বছরে তৎকালীন সরকারের পক্ষে সংবাদ প্রকাশ করেছেন।
তারা সরকারকে খুশি করার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠি কথা বললে তাদের চরিত্র হননের সংবাদ প্রকাশ করেছেন। বিগত ১৫ বছর বিভিন্ন সংবাদপত্রের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হয়েছিল। চাকরি হারানোর ভয়ে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে লিখতে পারেনি। অনেক সংবাদ পত্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সরকার বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার এটি করেছিল।
আলোচনা সভায় সিনিয়র সাংবাদিক ও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, প্রথম আলোর প্রধান বার্তা সম্পাদক লাজ্জাত এনাব মহসি, সমকাল সহকারী সম্পাদক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাষ্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, নয়াদিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলি, বাংলাভিশনের প্রধান সম্পাদক ও হেড অব নিউজ আবদুল হাই সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক খোরশেদ আলম, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. কাউসার আহাম্মদ, আমার দেশের ডেপুটি এডিটর সুলতান মাহমুদ, সিনিয়র সাংবাদিক শারমিন রিনভী, কলামিস্ট হাসান মামুন, কলামিস্ট ও ইউটিউবার ড. জাহেদুর রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক ইফতেখার মাহমুদ ও খাজা মঈনুদ্দীন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।