মহসিন কবির: রাজধানীর প্রধান সড়কসহ পাড়া-মহল্লার অলিগলি সবখানেই দাপিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার। তাদেরে বেপরোয়া চলাচলে অতিষ্ঠ নগরবাসী। এরা মানছে না কোন শৃঙ্খলা। যেখানে সুযোগ পাচ্ছে সেখান দিয়েই তারা গাড়ি চালাচ্ছে, ফলে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে যানজটের সৃষ্ঠি হচ্ছে। রাজধানীর প্রধান সড়ক দিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিষেধ থাকলে তারা মানছে না। তাছাড়া তাদের বেপরোয়া গাতির কারণে অনেক দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে রাজধানীতে প্রায় ১০ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে। ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা কত তার হিসাব নেই সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে। এসব রিকশার দৈনিক জমার ক্ষেত্রেও রয়েছে ভিন্নতা। পুরনো পেডাল রিকশায় ব্যাটারি যুক্ত হলে দৈনিক জমা ৩০০ টাকা। কিছুটা ভালো রিকশার ক্ষেত্রে জমা ৩৫০ টাকা। নতুন রিকশার (আকারে কিছুটা বড়) ক্ষেত্রে দৈনিক জমা ৪০০ টাকা।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও ব্যাটারিচালিত রিকশা দেখা গেছে। সন্ধ্যা পার হলেই মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা বাড়তে থাকে। রাজধানীসহ দেশজুড়ে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা কত তার হিসাব নেই সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে। তাই এসব যান নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া যাচ্ছে না। এসব যান চলাচলে প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরির কথা আগে বলা হয়েছিল। কিন্তু এখনো করা হয়নি।
নগরবাসীরা বলছেন, যত্রতত্র পার্কিং, উল্টোপথে গাড়ি চালানো ও সিগন্যাল অমান্য করে আগে যেতে চাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে নিয়ম ভঙ্গ করছেন এ চালকেরা। যে কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেছেন, ‘প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করতে ডিএনসিসি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) যৌথভাবে কাজ করছে।
ডিএনসিসি প্রশাসক আরও বলেছেন, ঢাকা শহরের ভেতরে অটোরিকশা তৈরির ওয়ার্কশপ ও চার্জিং স্টেশন বন্ধে শিগগিরই অভিযান শুরু হবে। ডিএমপি ইতোমধ্যে অটোরিকশা তৈরির ওয়ার্কশপ ও চার্জিং স্টেশনের তালিকা করেছে। শিগগিরই রাতে অভিযান করে এগুলো বন্ধ করে দেবো।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধের জন্য সরব হয়েছেন অনেকেই। নেমেছেন রাজপথে। সরকারের পক্ষ থেকেও নেওয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ। সেই দলে এবার নাম লিখালেন জনপ্রিয় গায়ক আসিফ আকবর।
রোববার দুপুরে এক ফেসবুক পোস্টে আসিফ লিখেছেন, ‘টেসলা খ্যাত ব্যাটারিচালিত রিকশায় জনজীবন দুঃসহ, সরকার আত্মসমর্পণ করেছে, এদের প্রতিরোধের সময় চলে এসেছে।’
আসিফ আকবরের এমন মন্তব্যে সহমত দিয়েছেন অনেকেই। আবার দু’একজন জানিয়েছেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের আগে চালকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা দরকার। অবশ্য আসিফও এর উত্তর দিয়েছেন। লিখেছেন, ‘এর আগে তাদের কী কর্ম ছিল?’
ট্রাফিকের দায়িত্ব থাকা একাধিক পুলিশ সদস্য বলছেন, আইন মানতে চান না অটোরিকশার চালকরা। এদিকে এই কারণে রাজধানীর শাহবাগ, গুলিস্তান, মতিঝিল, টিকাটুলি ও গেন্ডারিয়াসহ অধিকাংশ এলাকায় দিনে কিংবা রাতে সড়কের যানজট কমছে না। আবার কোথাও কোথাও একবার যানজট লেগে গেলে তা ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও কমছে না। এ অবস্থায় ঢাকার সড়কে চলাচলকারীদের রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠছে।
যানজট নিয়ন্ত্রণ করে সড়কপথে গণমানুষের ভোগান্তি কমাতে ১১ দফা সুপারিশ প্রস্তাব করেছে যাত্রী অধিকার আন্দোলন। সংগঠনের আহ্বায়ক কেফায়েত উল্লাহ শাকিল ও যুগ্ম আহ্বায়ক অন্তু মুজাহিদ স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতিতে এ সুপারিশ জানানো হয়।
এই সুপারিশে প্রথম দফাতেই বলা হয়েছে, রাজধানীর প্রধান সড়কে রিকশা, অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে। বিশেষ করে সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও কম গতির এসব বাহন প্রধান সড়ক অতিক্রম করবে না। তারা এলাকাভিত্তিক বাইপাস সড়ক, সাইড সড়ক, গলিপথ ও যেসব সড়কে বাস চলাচল করে না সেখানে চলাচল করবে। তবে এক্ষেত্রে রিকশা বা অটোরিকশার চালকরা নিজেদের মধ্যে যাত্রী ভাড়ার টাকা শেয়ারিং করতে পারেন। দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নেবেন।
রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের দাবি এবং সম্প্রতি বনানীর ১১ নম্বর সড়কে মোটরসাইকেলচালকদের ওপর রিকশাচালকদের হামলার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন মোটরসাইকেলচালকেরা।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে মোটরসাইকেলচালকদের প্ল্যাটফর্ম ‘মটো ক্লাব ৯৮’–এর ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
অবস্থান কর্মসূচি থেকে প্রধান সড়কগুলোতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল একেবারে বন্ধ করা, শুধু প্রতিবন্ধী ও বৃদ্ধদের এই রিকশা চালানোর অনুমতি দেওয়া এবং উল্টো পথে অটোরিকশা চলাচল বন্ধের দাবি জানান মোটরসাইকেলচালকেরা। অন্যথায় আইন পাস করে মোটরসাইকেলের মতো এই পরিবহন ও চালকদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, মূল সড়কে অনুমোদনহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণের সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। আইন না মানলে জরিমানা করা হচ্ছে। রিকশায় জরিমানা করার সুযোগ নেই। তাই তাদের মূল সড়কে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না।