এবারের পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে, ভিন্ন আমেজে। থাকছে বেশকিছু নতুন বিষয়। অতীতে পালন করা হতো এমন কিছু বিষয় আবার বাদ পড়েছে। সরকারের কাছে পুলিশের দাবি-দাওয়া উপস্থাপনেও আসছে ভিন্নতা। এবার নির্দিষ্ট ছয়টি দাবি জানানো হবে পুলিশের পক্ষ থেকে।
আগামী ২৯ এপ্রিল রাজাররাগ পুলিশ লাইনস অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ‘পুলিশ সপ্তাহ’। অর্ন্তবর্তী সরকারের আমলের প্রথম এ পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হবে তিনদিনব্যাপী। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। বিশেষ দরবার অনুষ্ঠিত হওয়ার পর পুলিশ ও রাষ্ট্রপতি পদক পরিয়ে দেবেন তিনি।
বিগত বছরগুলোতে সরকারের কাছে পুলিশ সদস্যরা তাদের একাধিক দাবি-দাওয়া উপস্থাপন করতেন। কিন্তু সরকার পুলিশের সেসব দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী ছিল না। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। এবার সেখান থেকে বেরিয়ে পুলিশ সদস্যরা বর্তমান সরকারের কাছে নির্দিষ্ট করে ছয়টি দাবি উত্থাপন করবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যেসব দাবি উত্থাপিত হবে তার মধ্যে যৌক্তিক হলে সবগুলো দাবি মেনে নিয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন করবে অর্ন্তবর্তী সরকার।
পুলিশ সদর দপ্তরের দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দাবির বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন। সদর দপ্তরের একাধিক সূত্র জানায়, প্রথমে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১২টি দাবি জানানো হয়েছিল। কয়েক দফা বৈঠক শেষে তার মধ্য থেকে ছয়টি দাবি চূড়ান্ত করা হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, পুলিশের পক্ষ থেকে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করে জনসাধারণের জন্য কমপ্লেইন সেল ও পুলিশের জন্য অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি এবং এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ভাতা, স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট গঠনসহ ছয়টি দাবি তুলে ধরা হবে।
যে ছয় দফা দাবি পেশ করবে পুলিশ
>> স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করে জনসাধারণের জন্য কমপ্লেইন সেল ও পুলিশের জন্য অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি গঠন।
>> এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ভাতা।
>> স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট গঠন।
>> পুলিশের বিভাগীয় হাসপাতালে জনবল বৃদ্ধি ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সরবরাহসহ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা।
বিজ্ঞাপন
>> একই পদে দীর্ঘদিন চাকরি করার পর অবসরকালে সুপারনিউমারারি পদোন্নতি দেওয়া (কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত)।
>> মৃতদেহ দাফন/সৎকারের সুবিধার্থে পুলিশের অনুকূলে আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে পুলিশকে স্পষ্ট ও কঠোর বার্তা দেওয়া হবে এবারের পুলিশ সপ্তাহে। তবে এবার কোনো প্যারেড থাকছে না।
আরও জানা যায়, এবার শিল্ড প্যারেডসহ অন্য প্রতিযোগিতা থাকছে না পুলিশ সপ্তাহে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে না। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়েও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্মিলন বসছে না। থাকছে না প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কোনো সেশন। তবে প্রথমবারের মতো এবার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে বাহিনীর নীতিনির্ধারকদের মতবিনিয়ম সভা হবে। সেখানে উঠে আসা মতামত গুরুত্ব পাবে। ‘কেমন পুলিশ দেখতে চান’ এমন বিষয় ওই সভায় উঠে আসবে। ১ মে দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা।
কমছে বিপিএম-পিপিএম পদকের সংখ্যা
অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ সদস্যদের বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) দেওয়া হয়। বছরজুড়ে ভালো কাজ, গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণ, সাহসকিতাপূর্ণ কাজের জন্য চারটি ক্যাটাগরিতে (বাংলাদেশ পুলিশ পদক- বিপিএম সাহসিকতা ও সেবা এবং প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক- পিপিএম সাহসিকতা ও সেবা) পদক দেওয়া হয়। বিগত বছরগুলোতে শতাধিক, এমনকি ২০১৯ সালে রেকর্ড সংখ্যক ৩৪৯ জন পুলিশ সদস্যকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। তবে সেখান থেকে বেরিয়ে এবার মাত্র অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্যকে দেওয়া হচ্ছে বিপিএম-পিপিএম পদক।
পদক নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কেউ সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘পদক কমিটি তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ করছে। গেজেট প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত চূড়ান্ত করে কিছু বলা যাবে না।’
তবে পদকের বিষয়ে জানা যায়, এখন থেকে সারা বছরই সাহসিকতা ও পেশাদারি কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ সদস্যদের পদক দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে এবং নগদ আর্থিক প্রণোদনাও দেওয়া হবে। পুলিশ সপ্তাহে শুধু পদক পরিয়ে সম্মানিত করা হবে।
আগামী নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে থাকবে নির্দেশনা
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহের কার্যক্রম শুরু হবে। এবারের পুলিশ সপ্তাহ থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা ও কাজ কী হবে, তার নির্দেশনা পাওয়া যাবে। তাছাড়া পুলিশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া, মাঠপর্যায়ের পুলিশের সমস্যাগুলো বিশদভাবে আলোচনার সুযোগ তৈরি হবে।
তিন দিনে পুলিশ সপ্তাহের যত আয়োজন
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, আগামী ২৯ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় রাজারবাগ পুলিশ অডিটরিয়ামে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিশেষ দরবার অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা পুলিশের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন। এ অনুষ্ঠানে ইউনিটপ্রধানরা ভার্চুয়ালি শুভেচ্ছা জানাবেন প্রধান উপদেষ্টাকে। দুপুর ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে দরবার শেষ হবে। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টায় আইজিপি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেবেন।
৩০ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টায় পুলিশ অডিটরিয়ামে এসবি, সকাল সোয়া ১০টায় সিআইডি, বেলা ১১টায় র্যাবের প্রেজেন্টেশন হবে। দুপুর ১২টায় পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র সচিবের সম্মেলন হবে। দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ট্যুরিস্ট পুলিশ, পিবিআই ও অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) প্রেজেন্টেশন হবে। সন্ধ্যা ৭টায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাদের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তারা বৈঠক করবেন।
১ মে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা পৌনে ১২টা পর্যন্ত এপিবিএন, রেলওয়ে পুলিশ ও নৌ-পুলিশের প্রেজেন্টেশন থাকবে। এরই মধ্যে সকাল ১০টায় পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির স্টল পরিদর্শন ও বার্ষিক পুনাক সমাবেশ হবে। দুপুর ১২টায় হবে বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে পুলিশের মতবিনিময় সভা। বিকেল ৩টায় শিল্পাঞ্চল পুলিশের প্রেজেন্টেশন হবে। বিকেল পৌনে ৪টায় পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভা, সন্ধ্যা ৭টায় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে বর্তমান পুলিশ কর্মকর্তাদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান এবং রাতে ডিনারের মাধ্যমে পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠান শেষ হবে বলে জানা যায়।
পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর জাগো নিউজকে বলেন, ২৯ এপ্রিল থেকে তিন দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ উদযাপিত হবে। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। আমরা আশা করছি সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে একটি সফল পুলিশ সপ্তাহ উদযাপিত হবে। উৎস: জাগোনিউজ২৪