শ্রমিকদের জন্য জাতীয়ভাবে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ এবং তা প্রতি তিন বছর পরপর পুনঃনির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে শ্রম সংস্কার কমিশন।
আজ সোমবার (২১ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়ে কমিশন শ্রমিকদের নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র দেওয়ার মাধ্যমে তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করার আহ্বান জানায়।
প্রতিবেদনে দেশের সব শ্রমিকের জন্য পূর্ণাঙ্গ আইনগত সুরক্ষা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সব নারী শ্রমিককে ছয় মাসের সম্পূর্ণ বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন।
এছাড়া, গত জুলাই মাসে আন্দোলনের সময় যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের 'শহীদ' হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাবও জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক ও কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ জানান, শ্রমিকদের ক্ষেত্রে মরণোত্তর ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিকে।
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'আমরা ক্ষতিপূরণের পরিমাণ শ্রমিকের জীবনচক্রভিত্তিক নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছি।'
তিনি জানান, দেশের সামগ্রিক শ্রম বাস্তবতা বিবেচনা করে কমিশন ২৫টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
কমিশন প্রধান বলেন, শ্রমিকদের কর্মসংস্থান নিরাপত্তা এবং কর্মস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একাধিক পদক্ষেপ প্রস্তাব করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে সম্মানজনক জাতীয় ও খাতভিত্তিক মজুরি নির্ধারণ, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের আইন সহজ করে শ্রমিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, সংগঠিত শিল্প সম্পর্ক ও সামাজিক সংলাপের প্রসার, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও পেশাগত স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং শ্রম সংক্রান্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও প্রবেশগম্যতা বৃদ্ধি করা।
কমিশন শ্রমিক কল্যাণে একটি জরুরি তহবিল গঠনেরও সুপারিশ করেছে।
এছাড়া, বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে কমিশন জানিয়েছে, এসব সুপারিশের আলোকে ২০২৬ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থায় (আইএলও) হালনাগাদ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
শ্রম খাতের জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা বিবেচনা করে একটি স্থায়ী শ্রম কমিশন গঠনের প্রস্তাবও রাখা হয়েছে।
বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে শ্রম কমিশন আরও কয়েকটি সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শ্রম আইনে লিঙ্গবাচক পরিভাষার পরিবর্তে উপযুক্ত বিকল্প শব্দ ব্যবহার এবং কর্মক্ষেত্রে 'তুমি/তুই'-এর মতো অনানুষ্ঠানিক সম্বোধন নিরুৎসাহিত করার সুপারিশ।
গত ১৭ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে অন্তর্বর্তী সরকার সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে ১০ সদস্যের শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করে।