শিরোনাম
◈ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তায় হটলাইন ◈ কোন পথে সেভেন সিস্টার্স, ভারতের এত ভয় কেন? ◈ প্যাভিলিয়ন থেকে আজহারউদ্দিনের নাম সরানো: 'বিশ্বের কোনো ক্রিকেটারের সঙ্গে যেন এমন না ঘটে ◈ সাকিব আল হাসা‌নের বিরুদ্ধে দুদকের কমিটি গঠন ◈ বাংলা‌দে‌শের ১৯১ রান শোধ ক‌রে ৮২ রা‌নের লিড নি‌লো জিম্বাবু‌য়ে ◈ আমলযোগ্য অপরাধের ঘটনায় অবশ্যই মামলা নিতে হবে: ডিএমপি কমিশনার ◈ ৩৩ বছরে রাষ্ট্রপতি কতজনকে মাফ করেছেন জানতে চান আদালত ◈ ঢাকা-৫ আসনের সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম গ্রেপ্তার ◈ বিশেষ বিসিএসে দু’হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেবে সরকার ◈ আওয়ামী লীগ নেতার ছেলের বিয়েতে লন্ডনে একসঙ্গে সাবেক চার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী!

প্রকাশিত : ২১ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:৪০ দুপুর
আপডেট : ২১ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:৫৮ রাত

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

ব্রিটিশ আমলের প্রত্যর্পণ চুক্তিতে কি বাংলাদেশও পলাতক আসামিদের ফেরাতে পারবে?

এল আর বাদল: শত বছরের বেশি পুরনো বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় বেলজিয়াম থেকে হীরে ব্যবসায়ী মেহুল চোকসিকে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টা করছে ভারত। আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর পালিয়ে যাওয়া মি. চোকসিকে ভারতের অনুরোধে গ্রেপ্তার করেছিল বেলজিয়ামের পুলিশ।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বেলজিয়ামের সঙ্গে ১৯০১ সাল থেকে এই বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। অর্থাৎ ভারতের স্বাধীনতারও আগে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে করা ওই চুক্তি এখনও বলবৎ আছে। - সূত্র, বি‌বি‌সি বাংলা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন মামলার আসামি ও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা পালিয়ে রয়েছে। পলাতক আসামিদের ফেরাতে বাংলাদেশ বিভিন্ন সময় চেষ্টা চালালেও খুব কম ক্ষেত্রে সফলতা পেয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠেছে, শত বছরের পুরনো ব্রিটিশ চুক্তি অনুযায়ী ভারত যদি পলাতক আসামিদের ফেরাতে চেষ্টা করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশও একই আইনে বিভিন্ন দেশ থেকে পলাতকদের ফিরিয়ে আনতে পারবে কি না?

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রিটিশ-ভারতের সময় যেসব চুক্তি হয়েছিলো, সেগুলোর অধিকাংশই ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর সেগুলো অনুমোদন করে। কিন্তু স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সরকার পাকিস্তানের চুক্তিগুলোকে আর অনুমোদন করেনি।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম বিবিসি বাংলাকে বলেন, "বাংলাদেশের সরকার স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের কোন চুক্তিগুলোকে অ্যাডপ্ট বা স্বাক্ষর করেনি। ফলে পাকিস্তান আমলের বাইরে যেসব চুক্তি রয়েছে সেগুলোর কোনটাই বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

পলাতকদের ফেরাতে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির চাইতেও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বেশি কার্যকর বলে কিছুটা ভিন্ন মত পোষণ করছেন আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী ওমর ফয়সাল।

মি. ফয়সাল বিবিসি বাংলাকে বলেন, " যত শক্ত আইনই থাকুক না কেন এখানে (পলাতক আসামি ফেরাতে) ডিপ্লোমেসিকে জোর দিতে হবে। যদি ভারতের কথাও ধরি এক্ষেত্রে (শেখ হাসিনাকে ফেরানোর পদক্ষেপ) খুব বেশি পদক্ষেপ যে নিয়েছে বাংলাদেশ, সেটাও আমার কাছে মনে হয়নি।

''ফলে আইন থাকলে ভালো হয়, আইন না থাকলেও চলে। আইন বা চুক্তি পরে করলেও চলে। কিন্তু এক্ষেত্রে ডিপ্লোমেটিক প্রচেষ্টাগুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তিনি বলেন।

-- বন্দি প্রত্যর্পণ আইনে যা রয়েছে--

বাংলাদেশের আইন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, পলাতক অপরাধীদের প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত 'বন্দি প্রত্যর্পণ আইন, ১৯৭৪' নামের একটি আইন রয়েছে।

এই আইনানুযায়ী পলাতক অপরাধীদের ফেরাতে প্রত্যর্পণ চুক্তি করতে হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ও কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের মধ্যে প্রত্যর্পণ অপরাধে অভিযুক্ত বা দণ্ডিত কোন ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণের উদ্দেশ্যে চুক্তি করতে হবে।

এতে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত অপরাধী যদি চুক্তিভুক্ত রাষ্ট্রে অবস্থান করছে বা করতে পারে.... এমন প্রেক্ষাপটে সরকার বাংলাদেশে সমর্পণের জন্য আবেদন করতে পারে। কীভাবে বাংলাদেশের সরকার এই আবেদন করতে পারে সে বিষয়েও এই আইনে সুস্পষ্টভাবে বলে দেওয়া আছে।

বাংলাদেশে চুক্তিভুক্ত রাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রতিনিধি অথবা ওই রাষ্ট্রে নিয়োজিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধির মাধ্যমে অপরাধীদের ফেরাতে বাংলাদেশ আবেদন করতে পারে।

এছাড়াও সরকার এবং চুক্তিভুক্ত রাষ্ট্রের সরকারের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে নির্ধারিত অন্য কোন পদ্ধতিতে দ্বিপাক্ষিক সম্মতিতে নির্দিষ্ট যে কোন ব্যবস্থায় অপরাধীদের ফেরাতে পারে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সাথে এখন দুইটি দেশের বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। এর মধ্যে একটি দেশ ভারত এবং অপর দেশটি থাইল্যান্ড।

-- চুক্তির চেয়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা কার্যকর--

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে 'প্রত্যর্পণ-যোগ্য অপরাধের মামলা'য় অভিযুক্ত বা পলাতক আসামি বা সেদেশের কারাগারে থাকা বন্দিদের একে অপরের কাছে হস্তান্তরের জন্য ২০১৩ সালে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।

এই চুক্তির একটি ধারায় বলা হয়েছে, যার হস্তান্তরের জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগটা যদি 'রাজনৈতিক প্রকৃতি' র হয় তাহলে সেই অনুরোধ খারিজ করা যাবে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার একাধিকবার জানিয়েছে, তারা ভারতে আশ্রয় নেয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছে। কিন্তু চুক্তি থাকার পরেও তাকে ফেরাতে পারেনি বাংলাদেশ। কোন কোন অপরাধের অভিযোগকে 'রাজনৈতিক' বলা যাবে না, সেই তালিকাও বেশ লম্বা।

এর মধ্যে হত্যা, গুম, অনিচ্ছাকৃত হত্যা ঘটানো, বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো ও সন্ত্রাসবাদের মতো নানা অপরাধ আছে।
চুক্তি ২০১৬ সালে সংশোধন করে এমন একটি ধারা যুক্ত করা হয় যাতে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়।

সংশোধিত এই ধারায় বলা হয়েছে, কোনও অভিযুক্তের হস্তান্তর চাওয়ার সময় অনুরোধকারী দেশকে সেই সব অভিযোগের পক্ষে কোনও সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ না করলেও চলবে। শুধু সংশ্লিষ্ট আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা পেশ করলেই সেটিকে বৈধ অনুরোধ হিসেবে ধরা হবে।

তবে, প্রত্যর্পণযোগ্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অভিযোগের প্রেক্ষাপটে চুক্তিভুক্ত রাষ্ট্র সেই অনুরোধ খারিজ করে দিতে পারে, চুক্তির এমন বিধানের কারণে জটিলতা তৈরি হয়।

আইন বিশেষজ্ঞ মি. ফয়সাল বিবিসি বাংলাকে বলেন, " বাংলাদেশ ও ভারতের যে প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে এক্ষেত্রে বড় সমস্যা হচ্ছে যে এখানে কোন ডিসপিউট রেজোলিউশন (বিরোধ নিষ্পত্তির উপায়) নেই।

মানে ভারত ও বাংলাদেশ যদি এক বিষয়ে দ্বিমত করে এটা রিজলভ (সমাধান) করার কোন মেকানিজম (পদ্ধতি) নাই। এটা খুব বড় একটা প্রবলেম এখানে। এইজন্য পলিটিক্যালি (রাজনৈতিকভাবে) এটা সলভ করতে হয়" বলেন মি. ফয়সাল।

আর ২০০৯ সালে থাইল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তিটি করে। এছাড়া বিভিন্ন সময় দেখা গেছে আরও বেশ কয়েকটি দেশ যেমন কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য থেকে বিভিন্ন সময়ে অপরাধীদের ফেরাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়েছে সরকার।

তবে বাংলাদেশের এসব দেশের সাথে কোন প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই বলে জানা গেছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য 'ইউরোপীয়ান কনভেনশন অব হিউম্যান রাইটস' এর সদস্য।

এই কনভেনশনের সদস্য দেশগুলো অপরাধের দণ্ড হিসেবে মৃত্যুদণ্ড ইতোমধ্যেই বিলোপ করেছে। ফলে যেসব দেশে এই বিধান রয়েছে সেখানে তারা কোন ব্যক্তিকে ফেরত পাঠায় না।

ফলে সেখান থেকে দণ্ডিত বা অভিযুক্ত পলাতক আসামিদের ফেরাতে হলে বাংলাদেশকে মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

কানাডার সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, যে দেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে সে দেশে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ফেরত পাঠানো যাবে না।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম জানান, শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার এক আসামিকে এই কারণে কানাডা থেকে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি।
যেহেতু তারা নিজেদের আইনে ফাঁসির বিধান বন্ধ করে দিয়েছে সুতরাং তারা যেসব দেশে এই বিধান রয়েছে সেখানে ওই নাগরিককে হস্তান্তর করে না।

এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গত বছরের অক্টোবরে মালদ্বীপ ও কাতারের সাথে প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদ নীতিগতভাবে চুক্তির খসড়াও অনুমোদন দিয়েছে, তবে এখনো চুক্তিটি হয়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়