তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের নতুন রাষ্ট্র গঠনের দিকে নেয়নি।গণঅভ্যুত্থানের শেষে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান বহাল রাখা হয়েছে। তা ঠিক বলে মনে করি না। এই সংবিধানের অধীনের সরকারকে বৈধ মনে করি না। আমি জনগণের পক্ষে কথা বলি। এ সরকারের পক্ষে সবসময় থাকার প্রশ্নই আসে না। সব প্রকার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে।
আগামীর বাংলাদেশের জন্য নতুন সংবিধান নয়; নতুন গঠনতন্ত্রের প্রয়োজন বলে মনে করছেন লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার।
শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে ইমাজিনেক্সট ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘জাতীয় সংস্কৃতি: প্রেক্ষিতে নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
ফরহাদ মজহার বলেন, আপনারা অনেকেই বলছেন বিপ্লব, তবে এটা কিন্তু বিপ্লব না। এটা গণঅভ্যুত্থান। ফলে এখনকার লড়াই হবে সাংস্কৃতিক লড়াই। যেটা অপূর্ণ যা আমরা করতে পারিনি, সেটাকে সম্পূর্ণ করার লড়াই। আর এই সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদেরকে আগামী বৃহত্তর লড়াইয়ের জন্য তৈরি হতে হবে। আর এ বৃহত্তর লড়াইটা হবে নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করা।ছাত্ররা কিন্তু প্রথম থেকেই বলছে বাংলাদেশের জন্য নতুন গঠনতন্ত্র প্রয়োজন, নতুন সংবিধান বা আইন না।
তিনি বলেন, গঠনতন্ত্র মানে কিন্তু আইন না। তবে সংবিধান মানে হচ্ছে আইন। আর আমরা কিন্তু ঔপনিবেশিক শাসক না। ইংরেজরা আইন প্রণয়ন করে আর জনগণ গঠনতন্ত্র করে। আর এ পার্থক্যটাই মনে রাখতে হবে। তার মানে আপনি যখনই সংবিধান বলবেন, আপনি ঔপনিবেশিক একজন শাসক। তখন আপনি লুটেরা, মাফিয়াতন্ত্রের মতো একজন শাসক। আপনি একটা আইন দিয়ে গরিবদের শাসন করবেন।
ফরহাদ মজহার বলেন, আর গঠনতন্ত্র মানে জনগণ নিজেরাই অংশগ্রহণ করবে। তারা পরস্পরের সঙ্গে কীভাবে বাস করবে এটা তারা তৈরি করে। আর এখানে তারা সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দেয় এবং সেখান থেকে শিক্ষা নেয়, কোনটাকে বর্জন করবে, কোনটাকে রাখবে।
তিনি বলেন, এখন বলা যায় যে, চৈত্র সংক্রান্তি এটা আসলে কেন গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, চৈত্র সংক্রান্তি আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত। আমাদের কৃষকরা সংক্রান্তি করে। বৈশাখ মাস যখন আসে তখন চৈত্র যে নক্ষত্র এবং গ্রহের যে নক্ষত্র তার সঙ্গে তাদের (কৃষকদের) জীবনটা যুক্ত। ফলে সৌরমণ্ডলের ওই রাশিটা চলে যায় এবং মেষ রাশিতে প্রবেশ করে। এই যে পরিবর্তনটা এটার সঙ্গে ঋতুর পরিবর্তন হয়। আর এই ঋতুর পরিবর্তনটা তারা (কৃষকরা) উৎসব করে পালন করে। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, আমাদের সংস্কৃতিতে কোনো ক্যালেন্ডার নেই। আমাদের সংস্কৃতিতে ঋতু আছে। ঋতু কিন্তু বারবার ফিরে আসে। আর আপনি যখন বৈশাখ করে বলেন- সমস্ত অতীতের ময়লা ধুয়ে যাক মুছে যাক। তখন কিন্তু আপনি আপনার ঐতিহ্যকে অস্বীকার করছেন। আপনার ট্রেডিশনকে অস্বীকার করছেন। আপনার ধর্মকে অস্বীকার করছেন। ফলে পুরোনো বলে কিছু নেই। এগুলো আমরা কলোনিয়াল যুগ থেকে শিখেছি যে, পুরোনো মানে আবর্জনা। এগুলোকে ফেলে দিতে হবে।
ফরহাদ মজহার বলেন, ফলে এ সংক্রান্তি করার মধ্যদিয়ে আমাদের নতুন যে সংস্কৃতির উদ্বোধন করেছি তার মানে হচ্ছে, আমরা নতুনভাবে নিজেদের জানার চেষ্টা করছি। বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে গড়ে ওঠা যে বিনোদন সংস্কৃতি, এটাকে আমরা সংস্কৃতি বলি না।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনের সভাপতিত্বে ও ইমাজিনেক্সট ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র এবং নির্বাহী সদস্য মুহাম্মদ ইমতিয়াজের সঞ্চালনায় ‘ধারণাপত্র’ পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাফর ফিরোজ। এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন শিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।