বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-কে কেন্দ্র করে এক অনন্য আয়োজনের সাক্ষী থাকল হাজারও মানুষ। রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সর্ববৃহৎ ড্রোন শো প্রদর্শিত হয়েছে। শোতে ছিল ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো শহীদ আবু সাঈদ, পানির বোতল হাতে প্রতীকী মুগ্ধর ছবিসহ আরো বেশকিছু ছবি তুলে ধরা হয়।
ড্রোন শোতে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম আকরামের ছবি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ছাত্রদল।
বিষয়টিতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাত ১১টা ২ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে এ দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
ফেসবুক পোস্টে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লেখেন, ‘এই কয় সপ্তাহের ঝড়ের পর ক্লান্ত শরীরে ঘরে ঢুকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভাই-বোনদের বিবৃতিটা চোখে পড়ল। হয়তো তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে পারতাম।
কিন্তু পাবলিক রেকর্ডসের জন্য এখানেই লিখছি।’
আজকের ড্রোন শোতে শহীদ ওয়াসিমের ছবি না থাকায় তাদের ব্যথিত হওয়া শতভাগ যৌক্তিক। এই দুঃখ আমারও। যাত্রাবাড়ীর কোনো মাদরাসা ছাত্রের ছবি না রাখতে পারার দুঃখও আছে।
আরো অনেককে মিস করেছি। কিন্তু আইকনিক ইমেজ বাছাই, স্টোরিটেলিংয়ের থিমেটিক ফ্লো ঠিক রাখা, এবং বেশি ইমেজ বাছাই করার সুযোগ না থাকাতে এই অবস্থায় পড়েছি আমরা। কিন্তু মনে রাখবেন প্লিজ, শহীদদের দলের ভিত্তিতে ভাগ করে গুরুত্ব বা কম গুরুত্ব দিয়েছি তা না। জুলাইয়ের সকল শহীদই সমান। শুধু জুলাই না, এর আগের ষোলো বছরে গুম-খুনের শিকার সবার ত্যাগেই ফ্যাসিবাদের পতন।
তারা প্রত্যেকেই আমাদের হিরো। আমার জুলাই-আগস্ট বা ২০১৪-১৫ সালের লেখালেখি পড়ার সুযোগ হলে দেখতে পাবেন আমি কি কি বলার চেষ্টা করেছি।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লেখেন, শুধু এইটুকু বলবো, আপনারা দয়া করে জুলাই যাদুঘরের দিকে দৃষ্টি রাখবেন। সেখানে আমাদের কালের নির্যাতিত, শহীদ, গুম হয়ে যাওয়া সবাইকে পাবেন, সবার গল্পগুলা পাবেন। যে মানুষদের প্রাণের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা, তাদের আমাদের স্মরণ করতে হবে, তাদের জন্য বেদনায় মন খারাপ হয়ে যেতে হবে। কারণ বেদনা আমাদের মন এবং ইতিহাস দুইটাই পরিশুদ্ধ করে। বেদনা জারি থাকা তাই ভালো। সকল শহীদ ও গুম হওয়া মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা।
ড্রোন শো ছিল কেবল চোখ ধাঁধানো প্রযুক্তি নয়, এতে উঠে এসেছে বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনীতি, মানবিক বিপর্যয়, আন্দোলন, ঐতিহ্য ও বৈশ্বিক সংহতির বার্তা। শো শেষে দর্শকরা দাঁড়িয়ে হাততালিতে প্রকাশ করেন তাদের মুগ্ধতা, কৃতজ্ঞতা ও আশাবাদ।
শোতে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব মো. মফিদুর রহমান, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেনসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এর আগে, ড্রোন শোতে জুলাই আন্দোলনে চট্টগ্রামে শহীদ ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম আকরামকে স্মরণ না করায় ফেসবুকে পোস্ট দেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।