মিস আর্থ বাংলাদেশ-২০২০ বিজয়ী মডেল-অভিনেত্রী মেঘনা আলমের বিষয়ে আলোচনা চলছেই। সেই আলোচনার পালে হাওয়া দিচ্ছে একজন রাষ্ট্রদূতের নাম। মেঘনার পরিবারের দাবি, ঢাকায় নিযুক্ত ওই রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তাদের মেয়ের পরিচয় ও সম্পর্ক ছিল। তাদের বাগদানও হয়েছিল। বাসায় আসার কথা থাকলেও পরে আর মেঘনাদের বাসায় যাওয়া হয়নি ওই রাষ্ট্রদূতের।
মেঘনার বাবা বদরুল আলমের দাবি, ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের সঙ্গে তার মেয়ের সম্পর্কের বিষয়ে তিনি কিছু কিছু জানতেন। এই সম্পর্কের জেরে মেঘনাকে আইনের মুখোমুখি হতে হয়েছে বলে দাবি তার।
বদরুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, অন্যায়টা করলো সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ। তার অন্যায়ের বিচার হলো না। কিন্তু মেঘনাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হলো। ঈসা বিন ইউসুফ একজন রাষ্ট্রদূত, সৌদি আরবের রয়েল পরিবারের নয়, সে একজন চাকরিজীবী। বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে মেঘনার অধিকার বেশি। অন্য দেশের একজন নাগরিক অন্যায় করে চলে যাবে, তার কোনো বিচার হবে না; এটি ঠিক নয়।
বিশেষ ক্ষমতা আইনে দেওয়া ৩০ দিনের আটকাদেশ কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে মেঘনার বাবা বদরুল আলম বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইনের যে অর্ডার সেটি সঠিক নয়; যে প্রক্রিয়ায় মেঘনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেটিও সঠিক নয়। তাকে ধরার ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছিল, সেটিও সঠিক নয়। এছাড়া যেসব অভিযোগ মেঘনার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে সেগুলোও সঠিক নয়; এজন্য হাইকোর্টে রুল জারি হয়েছে।
সদ্য বিদায়ী সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের সঙ্গে মেঘনার সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে তার বাবা বলেন, দুজনের সম্পর্কের কিছু কিছু জানতাম। তাদের মধ্যে বাগদান হয়েছিল। রাষ্ট্রদূত ঈসা আমাদের বাসায় আসার জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন, কিন্তু পরে আসেননি।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত অনানুষ্ঠানিকভাবে মেঘনার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেন। কিন্তু মেঘনার ভাষ্য, তাকে মিস গাইড (বিভ্রান্ত) করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।
মেঘনার বাবা আরও বলেন, রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ বাংলাদেশ থেকে চলে গেছে, কিন্তু অন্যায়টা সে করে গেছে। তার অন্যায়ের বিচার হলো না, কিন্তু মেঘনাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হলো। ঈসা বিন ইউসুফ একজন রাষ্ট্রদূত, সৌদি আরবের রয়েল পরিবারের নয়, সে একজন চাকরিজীবী। বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে মেঘনার অধিকার বেশি। অন্য দেশের একজন নাগরিক অন্যায় করে চলে যাবে তার কোনো বিচার হবে না, এটা ঠিক নয়। রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ ভুল করেছে। সে আমার কাছে এসে ক্ষমা চাইতে পারে।
তিনি বলেন, মেঘনার বিষয়ে আসিফ নজরুল সাহেবও কথা বলেছেন। সবকিছু মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে বিভিন্নভাবে প্রমাণ হচ্ছে মেঘনা নিরপরাধ। সরকারের কাছে আমরা যত দ্রুত সম্ভব মেঘনার মুক্তি দাবি করছি।
মেঘনার কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে বদরুল আলম বলেন, মেঘনা বিভিন্ন কোম্পানির ব্র্যান্ড আম্বাসেডরের কাজ করতো। এছাড়া ‘মিস বাংলাদেশ’ নামে একটি ফাউন্ডেশন ছিল তার। সেখানে দেশের নারীদের উন্নয়নে কাজ করতো মেঘনা।
মেঘনার মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে তার বাবা বলেন, প্রায় ১৫ দিন আগে গাড়িটি কেনে মেঘনা। মেঘনা জাপানিজ একটি কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। তার চলাচলের সুবিধার্থে ডাউন পেমেন্ট দিয়ে গাড়িটি কিনে দেয়। বাকি টাকা মেঘনা ব্যাংক থেকে ঋণ করবে।
রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, মডেল মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে যে প্রক্রিয়ায় আটক করা হয়েছে, সেটা সঠিক হয়নি।
তবে মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে বলে উল্লেখ করেন আসিফ নজরুল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুলিশ তদন্ত করছে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শিগগির উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।
গত বুধবার রাতে মডেল মেঘনা আলমকে রাজধানীর বসুন্ধরার বাসা থেকে আটক করে হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে আদালত তাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিন আটক রাখার আদেশ দেন। তিনি এখন কারাগারে।
সুনির্দিষ্ট কারণ না জানিয়ে মেঘনা আলমের আটকের ঘটনা নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অপরাধে জড়ালে মামলা দিয়ে গ্রেফতার না করে তাকে কেন বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিতর্কিত প্রিভেন্টিভ ডিটেনশন বা প্রতিরোধমূলক আটক করা হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাকে দ্রুত ও নিঃশর্ত মুক্তি দিতে দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়া ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে, হঠাৎ করে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধানের পদ থেকে রেজাউল করিম মল্লিককে সরিয়ে দেওয়া হয়। গতকাল শনিবার ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ের এক আদেশে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। উৎস: জাগোনিউজ২৪