সৌদি আরবের সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার দাবি করেছিলেন গ্রেপ্তার হওয়া ব্যবসায়ী মো. দেওয়ান সমির। আদালতে দেওয়া পুলিশ প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, সুন্দরী নারীদের ব্যবহার করে উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলতেন তিনি।
এসব অভিযোগে সমিরের বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় মামলা হয়েছে। আজ শনিবার আদালত তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মো. দেওয়ান সমির (৫৮) ‘কাওয়াই গ্রুপ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ছিলেন। ওই গ্রুপের একটি ভিসা প্রসেসিং সেন্টার রয়েছে, যার মাধ্যমে জাপানের ভিসা দেওয়া হয়। এ প্রতিষ্ঠানে অ্যাম্বাসেডর হিসেবে যুক্ত ছিলেন মডেল ও উদ্যোক্তা মেঘনা আলম। বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন তিনি।
পুলিশ জানায়, দেওয়ান সমির দীর্ঘদিন ধরে ‘সুন্দরী নারীদের’ মাধ্যমে প্রভাবশালী কূটনীতিক ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের টার্গেট করে অর্থ আদায়ের ফাঁদ তৈরি করতেন। সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানও এর শিকার হতে যাচ্ছিলেন। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি ও মেঘনা রাষ্ট্রদূতের কাছে সরাসরি ৫ মিলিয়ন ডলার (৫০ লাখ) দাবি করেন।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আসামি দেওয়ান সমির বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের টার্গেট করে চাঁদাবাজির জাল বিছিয়ে আসছিলেন।
এ ঘটনার পেছনে রয়েছে এক বিস্ময়কর সম্পর্কের জট। মেঘনা আলম ও সৌদি রাষ্ট্রদূতের পরিচয় ঘটে আট মাস আগে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার মাধ্যমে। আগস্টে ঢাকায় সৌদি দূতাবাস আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রথম দেখা হয় তাঁদের। সেখান থেকে শুরু হয় ঘনিষ্ঠতা। রাষ্ট্রদূত মেঘনার ‘মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ নামের সংগঠনটির সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতেন, একসঙ্গে ঘোরাঘুরি ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ছিল নিয়মিত।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, মাত্র চার মাসের পরিচয়ের মধ্যে ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর মেঘনা ও রাষ্ট্রদূতের মধ্যে ‘গোপনে বাগ্দান’ হয়। পরিবারে তখন বিয়ের প্রস্তুতির আমেজ চলছিল। মেঘনা জানিয়েছিলেন, বিয়ের পর তাঁরা সৌদি আরবে স্থায়ী হবেন। কিন্তু কিছুদিন পর মেঘনার কাছে রাষ্ট্রদূতের বৈবাহিক সম্পর্ক ও সন্তান থাকার তথ্য পৌঁছায়। নিজেকে প্রতারিত মনে করে তখন থেকে সম্পর্ক নিয়ে জটিলতা শুরু হয়।
মেঘনার পরিবারের অভিযোগ, এর পর থেকে রাষ্ট্রদূত নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। এরই মধ্যে হঠাৎ মেঘনা নিখোঁজ হন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপহরণের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে গতকাল শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানায়, তাঁকে ‘নিরাপত্তা হেফাজতে’ নেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির ভাষ্য, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বিভ্রান্তি ছড়ানো এবং দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাঁকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হয়। সব আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, মেঘনা আলম ২০২০ সালে মিস আর্থ বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন এবং বর্তমানে মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।