প্রায় ৫৪ বছর পর এই প্রথম পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে নতুন মোড় নিয়েছে। প্রায় ‘ডিপ ফ্রিজে’ চলে যাওয়া সম্পর্কটি এখন কেবল ‘স্বাভাবিক’ বা ‘সচল’ই নয়, বরং এতে দৃশ্যমান রূপান্তর ঘটতে চলেছে! সম্পর্কের অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর নিষ্পত্তি-চেষ্টার পাশাপাশি কিছু নতুনত্ব আনতে উভয়ের আগ্রহ রয়েছে- এমনটাই দাবি পেশাদার কূটনীতিকদের। তবে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক, গবেষক এবং বিশ্লেষকরা বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখার চেষ্টা করেন। যা বিবিসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের সাম্প্রতিক রিপোর্টে উঠে এসেছে। সেগুনবাগিচা এটা নিশ্চিত করেছে যে, নতুন বাস্তবতায় পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন করে বোঝাপাড়া করতে চাইছে বাংলাদেশ। চলতি মাসে ঢাকায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবের সফর হবে। প্রায় এক যুগ বিরতির পর ৬ষ্ঠ ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বা রাজনৈতিক সংলাপ হবে দুই দেশের মধ্যে।
২০১০ সালে সর্বশেষ ইসলামাবাদে ৫ম এফওসি হয়েছিল। আসন্ন ঢাকা সংলাপে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ রূপরেখা নির্ধারণ হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে ডেইলি পাকিস্তান। তাদের রিপোর্ট মতে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে চলমান প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমেনা বেলুচ এতে দেশটির প্রতিনিধিত্ব করবেন। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে দু’দেশের সম্পর্ক দৃঢ় করার প্রস্তাব। সেইসঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে একটি যৌথ কমিশন পুনর্বহালের বিষয়টি তুলতে পারে পাকিস্তান। এদিকে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার চলতি মাসেই বাংলাদেশ সফর করছেন, এটা নিশ্চিত করেছে সেগুনবাগিচা। কিন্তু তার সফরের দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি বলে দাবি করেছেন সফর প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যম অবশ্য সফরের সম্ভাব্য তারিখ তুলে ধরছে। তাদের রিপোর্ট মতে, আগামী ২২-২৪শে এপ্রিল পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করবেন। তার এ সফরকে বাণিজ্য, কূটনীতিসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা গভীর করার গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখছে ইসলামাবাদ। ডেইলি পাকিস্তানের রিপোর্টের ফাইন্ডিংস হচ্ছে- ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের ওপর থেকে ভারতের প্রভাব হ্রাস করে পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি করে পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন আনতে চাইছে।
বাংলাদেশ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে চীনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক করতে চাইছে। যা বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। স্মরণ করা যায়, বাংলাদেশের সঙ্গে বহুমাত্রিক সম্পর্ক জোরালো করতে পাকিস্তান আগ্রহী- এমন বার্তা দিয়ে গেছেন সদ্য ঢাকা সফরকারী পাকিস্তানের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি ঢাকায় দেশটির হাইকশিনার হিসেবে ক’বছর আগে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। এবারে ভিন্ন অ্যাসাইনমেন্টে আসা মিস্টার সিদ্দিকী পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উভয়পক্ষ দুই দেশের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে পরামর্শমূলক বৈঠক ও যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের সভা অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের সর্বশেষ বৈঠক ২০১০ সালে আর অর্থমন্ত্রী পর্যায়ের অর্থনৈতিক কমিশনের সর্বশেষ বৈঠক হয় ২০০৫ সালে। ইমরান সিদ্দিকী এপ্রিল মাসে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকা সফরের বিষয়েও আলোচনা করে গেছেন। তিনি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনকে লেখা ইসহাক দারের একটি চিঠিও পররাষ্ট্র সচিবের কাছে হস্তান্তর করেন। উভয়পক্ষ সার্ক, ওআইসি ও ডি-৮ কাঠামোর আওতায় আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করে। ২০১২ সালে পাকিস্তানের তদানীন্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানী খারের ঢাকা সফরের পর ইমরান সিদ্দিকী সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা যিনি ঢাকা সফর করেন।
শীতল সম্পর্কে উষ্ণতা আসে যেভাবে:
আগস্টে রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দন জানান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। এক মাসের মাথায় (সেপ্টেম্বরে) নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইডলাইনে দু’জনের মধ্যে বৈঠক হয়। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান শীতল সম্পর্ক অবসান হওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল সেই মিটিং! এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের মূল্যায়ন হচ্ছে- ‘গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক তলানিতে চলে যায়। অনেকের ধারণা, ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সুসম্পর্কের কারণেই পাকিস্তানকে গুরুত্ব দেয়নি বাংলাদেশ। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নতি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আগামীতে যারা সরকারে আসবেন, তারাও পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখবেন- সেটি ধারণা করা যায়।’ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জনের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার বিষয়টি। এ বিষয়ে অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, ক্ষতিপূরণ, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সম্পদের ভাগাভাগি, আটকেপড়া বিহারিদের পুনর্বাসনসহ অমীমাংসিত অনেকগুলো বিষয় রয়েছে। এগুলোর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত দুই দেশের সম্পর্ক উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন।’
সম্পর্ক উন্নয়নে যেসব উদ্যোগ দৃশ্যমান: গত বছরের নভেম্বর মাসে পাকিস্তানের করাচি থেকে কন্টেইনারবাহী একটি জাহাজ সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে আসে, যে সুযোগ আগে ছিল না। আওয়ামী শাসনামলে অবৈধ অস্ত্রসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ পণ্যের প্রবেশ বন্ধে পাকিস্তান থেকে আসা কন্টেইনারগুলো শতভাগ পরীক্ষার ব্যবস্থা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) এর সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন মনে করেন- বিদায়ী সরকারের আমলে পাকিস্তান থেকে আসা কন্টেইনারগুলো শতভাগ পরীক্ষা করার যে বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তা সঠিক ছিল না। গত ডিসেম্বরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশি ভিসা প্রাপ্তি সহজ করার নির্দেশ দেয়। আগে পাকিস্তানি নাগরিক এবং পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত উন্নত দেশের নাগরিকদের ভিসা প্রদানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনাপত্তিপত্র লাগতো। এ ছাড়া সেপ্টেম্বরের শুরুতে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়, বাংলাদেশিদের জন্য পাকিস্তানের ভিসার চার্জ লাগবে না। ৮ মাসে দু’টি বৈশ্বিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের দেখা হয়েছে। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল এসএম কামরুল হাসান ইসলামাবাদ সফর করেন এবং সেখানে তিনি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল অসিম মুনিরের সঙ্গে বৈঠক করেন। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় চেম্বার অব কমার্স ও ইন্ডাস্ট্রিজের (এফপিসিসিআই) একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে গেছে। এটা ছিল এক দশকে পাকিস্তানের কোনো উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দলের প্রথম ঢাকা সফর। প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা, ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের কর্মকর্তা ও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গেছে। সফরকালে পাকিস্তান-বাংলাদেশ যৌথ ব্যবসায়িক কাউন্সিল গঠনের জন্য একটি সমঝোতা স্মারকও সই হয়। পাকিস্তানের প্রতিনিধিদল দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আহ্বান জানায়। বর্তমানে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বছরে মাত্র ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য রয়েছে। জাপানি সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়ার প্রাক্কলন মতে, বাণিজ্য বিধি-নিষেধ পুরোপুরি দূর হলে এক বছরের মধ্যে দুই দেশের বার্ষিক বাণিজ্য ৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানো সম্ভব। তাদের রিপোর্ট মতে, চট্টগ্রাম ও করাচির মধ্যে মেরিটাইম রুটের সম্ভাবনা অবারিত। যা ৫২ বছর ধরে ব্যবহার হয়নি। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু করা যেতে পারে, যা ২০১৮ সালের পর থেকে বন্ধ।
৭১-এর সংবেদনশীলতা এবং...
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সেই সময়ে পাকিস্তান বাহিনীর বর্বরতা- বরাবরই দেশটির সঙ্গে সম্পর্কে সংবেদনশীল বিষয়। ইতিহাস বিবেচনায় এ নিয়ে আলোচনা, রাজনীতি কম হয়নি। তবে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে আওয়ামী আমলে, বিশেষত মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রশ্নবিদ্ধ বিচারের প্রেক্ষাপটে। বর্তমান বাস্তবতায় কি বাংলাদেশের কূটনীতিতে কোনো ধরনের পরিবর্তন আসবে? পাকিস্তানের তরফে বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহ কতোটা? সম্পর্ক উন্নয়নে বাংলাদেশেরই বা লাভ কী? অথবা সমস্যার জায়গাগুলো কী? এ নিয়ে একাধিক বিশ্লেষণ রয়েছে বিবিসি বাংলার। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুমতাজ যেহরা বালোচ বিবিসির সঙ্গে আলাপে দাবি করেন বাংলাদেশের ব্যাপারে পাকিস্তান সবসময়ই শ্রদ্ধাশীল, ইতিবাচক ও গঠনমূলক অবস্থানকে আগ্রাধিকার দিয়ে এসেছে। মাঝে মাঝে কিছু সমস্যা হয়েছে, কিন্তু তা অতিক্রম করার ইচ্ছায় তাদের কোনো ঘাটতি ছিল না। বিবিসি’র রিপোর্টে সম্পর্কোন্নয়নে তাদের আগ্রহের বেশ কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে। সেই রিপোর্টে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনকে উদ্ধৃত করা হয়। সেখানে মিস্টার হোসেন বলেন, গত ক’বছর ধরে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক শীতল যাচ্ছিল, অন্তর্বর্তী সরকার তা থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত মুখ লেখক ফাহাম আবদুস সালাম মনে করেন গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের সরকার ভারতের চোখে পাকিস্তানকে দেখেছে এবং ১৯৭১ সালকে ঘিরে বিভাজনের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছে, যেটা সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না। অস্ট্রেলিয়া থেকে বিবিসি’র সঙ্গে কথা বলেন লেখক ফাহাম আবদুস সালাম। তার মতে, ভারতবর্ষের মানুষের মধ্যে অনেক পুরানো একটা সমপ্রীতির জায়গা ছিল, সাম্প্রতিক সময়ে এসে সেটা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের পেছনে ভারতের মূলধারার গণমাধ্যমকে 'ঘৃণার সংস্কৃতি' প্রচারের জন্য দায়ী করেন মি. সালাম। হাসিনার পতনের পর পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঘিরে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে উদ্বেগ দেখা গেছে। বাংলাদেশ পরবর্তী আফগানিস্তান বা পাকিস্তানে পরিণত হবে কিনা? এমন আলোচনাও উঠেছে।
ক্ষমা প্রসঙ্গ: বাংলাদেশে অনেকদিন ধরেই একটি আলোচিত বিষয় ১৯৭১ সালের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা। এ নিয়ে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান একাধিকবার কথা বললেও আনুষ্ঠানিকভাবে সেটা করা হয়নি। এখন কি সেই ক্ষমা চাওয়ার মতো পদক্ষেপ নেয়া হবে? সে প্রসঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মিস বালোচ মনে করেন ১৯৭১ সালের ‘বেদনাদায়ক’ ইতিহাস দুই দেশই বহন করে আসছে। তার দাবি এই সমস্যার সমাধান ১৯৭৪ সালে দুই দেশের নেতারা করে গেছেন। এ সংক্রান্ত চুক্তিও হয়েছে। ১৯৭১-এর প্রেক্ষাপটে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে পদ থেকে সরে যেতে হয়েছিল (২০শে ডিসেম্বর ১৯৭১)। তার বিদায়ের পর ক্ষমতায় আসেন জুলফিকার আলী ভুট্টো, যিনি ’৭০-এর নির্বাচনে পশ্চিম পাকিস্তানে জয়ী হয়েছিলেন, কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিবুর রহমানের জয় নিয়ে টানাপড়েনে ক্ষমতা হস্তান্তর স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭১ সালের তিক্ততা পেছনে ফেলে আন্তর্জাতিক মহলের চেষ্টায় '৭৪ সালে দুই দেশের নেতা-ই অপর দেশে সফর করেন। ২৩শে ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪-এ পাকিস্তানের লাহোরে শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বাজিয়ে, তোপধ্বনি এবং গার্ড অব অনার দিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো। এর আগের দিন বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় পাকিস্তান। সে বছর জুন মাসে মি. ভুট্টো বাংলাদেশ সফর করেন। ঢাকায় মি. ভুট্টো বলেছিলেন, “যা হয়েছে তা নিয়ে অন্তর থেকে অনুতপ্ত হতে বা তওবা করতে দেরি হয়ে যায়নি। পাকিস্তানের মানুষ আপনাদের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা জানায়। তারা এবং পাকিস্তানের সরকার বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে স্বীকার করে এবং শ্রদ্ধা জানায়।” '৭৪-এর এপ্রিলের বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার ত্রিপক্ষীয় চুক্তির বিবরণে রয়েছে যে, জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশের জনগণকে অনুরোধ করেছেন যেন তারা তাদের (পাকিস্তানকে) ক্ষমা করে দেন এবং অতীতের কথা ভুলে গিয়ে সামনে এগিয়ে যান। শেখ মুজিবুর রহমানের তরফেও অতীত ভুলে নতুন সূচনা করার এবং “ক্ষমার নিদর্শন হিসেবে বিচার না চালানোর” সিদ্ধান্তের কথার উল্লেখ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি আর্কাইভ প্রতিবেদনে। দুই নেতার সে সময়কার দূরদর্শিতা সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছে বলে উল্লেখ করেন মিস বালোচ। খবর: মানবজমিন