সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রেশন সুবিধা সংক্রান্ত দাবির বিষয়ে ইতিবাচক সুপারিশ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে এ সংক্রান্ত সুপারিশ করা হলে সচিবালয়ের বাইরে থাকা দপ্তর-সংস্থার কর্মচারীর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।
অর্থসচিব বরাবর ২৫ মার্চ পাঠানো খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আব্দুল্লাহ আল মামুনের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ কর্তৃক সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায় রেশন সুবিধা প্রদান সংক্রান্ত প্রস্তাবটি অনুকূল বিবেচনা জন্য সুপারিশসহ নির্দেশক্রমে প্রেরণ করা হলো।'
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, 'এতে খাদ্য উপদেষ্টার অনুমোদন রয়েছে।'
দীর্ঘদিন যাবত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মতো বাংলাদেশ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায্যমূল্যে রেশন সুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। সর্বশেষ গত ১২ মার্চ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর এ বিষয়ে আবেদন জানিয়েছে তারা।
পরিষদ তাদের আবেদনে বলেছে, 'বাংলাদেশ সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সরকারি দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন সময়ে ছুটির দিনসহ অফিস সময়ের পরেও অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। এ জন্য সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা অর্থাৎ রেশন কিংবা সচিবালয় ভাতা দেওয়া হয় না। পক্ষান্তরে, বিভিন্ন দপ্তর/অধিদপ্তর/সংস্থার প্রায় ৮ লক্ষ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী রেশনের পাশাপাশি বিশেষ ঝুঁকিভাতাও পাচ্ছেন।'
'তাদের সঙ্গে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চরম বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে' বলে আবেদনে উল্লেখ করে পরিষদ।
সচিবালয়ে কর্মরতদের জন্য রেশন সুযোগ দিলে পুরনো বৈষম্য থেকে যাবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান।
তিনি বলেন, 'আমরা যারা সচিবালয়ের বাইরে বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থায় চাকরি করি, তাদের সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে রেশনের দাবি তুলেছিলাম। যদি শুধু সচিবালয়ের জন্য এটা বরাদ্দ হয়, তাহলে বৈষম্য থেকেই যাবে। বর্তমান সরকারের কাছে আমরা এ ধরণের সিদ্ধান্ত আশা করি না। নিম্ন গ্রেডের সব কর্মচারীদের জন্য রেশন চালু হোক।'
মাহমুদুল হাসান আরও বলেন, 'কর্মচারীদের দাবি আদায়ের বিষয়ে আমরা সব সময় একসঙ্গে কাজ করি, আন্দোলন করি। কিন্তু সুবিধা আদায়ের সময়ে সচিবালয়ের কর্মচারীরা এগিয়ে থাকবেন, এটা ঠিক নয়। আমরা এই সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরেছি, এখন সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রেশন চালুর উদ্যোগের বিরুদ্ধে কড়া হুশিয়ারি দিয়েছে ১১-২০ গ্রেড সরকারি কর্মচারী চাকরিজীবী ফোরাম। সংগঠনটির পক্ষ থেকে আজ শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, 'সচিবালয়ের বাইরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চরমভাবে ক্ষুব্ধ ও হতাশ। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দীর্ঘ ছুটির প্রাক্কালে এ ধরণের চিঠি ইস্যু করা দুরভিসন্ধিমূলক। সবার অগোচরে এ কাজ বাস্তবায়ন করার সুপ্ত বাসনা থেকে এই চিঠি ইস্যু করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি।'
'সকল কর্মচারী যেখানে পে-স্কেল ও মহার্ঘ্য ভাতার জন্য মাঠে আন্দোলনরত, তখন একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে এ ধরণের সুবিধা প্রদান বিদ্যমান বৈষম্যকে আরও বৃদ্ধি করার সঙ্গে সঙ্গে পে-স্কেল ও মহার্ঘ্য ভাতার দাবিকে দুর্বল করবে' বলে বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করে সংগঠনটি।
সরকারের এমন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সংবিধানে থাকা 'সকল নাগরিকের সমান অধিকার'র শর্তও লঙ্ঘন করে বলে মনে করে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের এ সংগঠন। খবর: ডেইলিস্টার।