শিরোনাম
◈ রাখাইনের গেরিলা কমান্ডার থেকে আঞ্চলিক শক্তি: তোয়ান মারত নাইংয়ের উত্থানের গল্প ◈ ইউক্রেন শান্তিচুক্তি নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের: ‘অগ্রগতি না হলে সরে আসবে যুক্তরাষ্ট্র’ ◈ ১৪ ঘণ্টা পর ড্রেনে পড়ে যাওয়া নিখোঁজ শিশুর মরদেহ মিলল  ◈ তিন দাবিতে এনসিপির নতুন কর্মসূচি ◈ গাজায় খাদ্য সংকট চরমে, ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত ৬৪; মৃতের সংখ্যা ৬১ হাজার ছাড়ালো ◈ তেহরানে সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বৈঠক: খামেনির কাছে বাদশাহ সালমানের গোপন চিঠি হস্তান্তর ◈ মুরাদনগরে একই দিনে বিএনপি ও এনসিপির পাল্টাপাল্টি জনসভা ঘোষণা, উত্তেজনা চরমে ◈ ব্রাজিলকে নি‌য়ে মেসির আ‌ক্ষেপ ◈ হঠাৎ যে কারণে ইসরায়েলে উড়ে এলো ঝাঁকে ঝাঁকে মার্কিন সামরিক বিমান! ◈ বাংলাদেশে শিক্ষকদের অপমান ও জবরদস্তিমূলক পদত্যাগ: শিক্ষা ব্যবস্থায় অশনি সংকেত

প্রকাশিত : ২৬ মার্চ, ২০২৫, ০৭:৩৫ বিকাল
আপডেট : ১৫ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

ঈদের ছুটিতে ঢাকায় কড়া নিরাপত্তা, থাকবে যৌথ বাহিনীর টহল, ফায়ার সার্ভিস প্রস্তুত ও মহাসড়কে থাকবে সেনাবাহিনী

মহসিন কবির: ঈদের ছুটির আমেজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। যারা আগে ছুটি ম্যানেজ করতে পেরেছেন তারা ছুটছেন বাড়ি। ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা। ফাঁকা ঢাকায় অপরাধ বাড়ার অশঙ্কায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে যৌথ বাহিনী। 

পুলিশ জানিয়েছে, মুসলমানদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে সুনির্দিষ্ট কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা নেই। তবে বিভিন্ন ধরনের গুজবকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা তৈরির শঙ্কা রয়েছে। যার জন্য নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। 

পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ৯ দিনের সরকারি ছুটিতে রাজধানীতে বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন–র‍্যাব। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে এ সময় মহানগরে অন্তত ১৫ হাজার পুলিশ তৎপর থাকবে। রাস্তায় তল্লাশিচৌকি বসানোর পাশাপাশি বিপণিবিতান ও আবাসিক এলাকায় টহল জোরদার করা হবে।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকার ইতিমধ্যে ২৮ মার্চ থেকে আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। এ সময় স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছেড়ে যাবেন বিপুলসংখ্যক মানুষ।

ডিএমপি সূত্র জানায়, ঈদ ঘিরে অনেক মানুষ ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন। এতে বাসাবাড়ি, ফ্ল্যাট ও অফিস ফাঁকা হয়ে যাবে। ফাঁকা ঢাকায় অপরাধ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে নগরবাসী। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি—এই ভয়ের অন্যতম কারণ। এসব বিষয় মাথায় রেখে ঈদের আগে ও পরে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছে ডিএমপি।

মহাসড়কের ১৫৫টি স্পটে নিরাপত্তা নজরদারিতে ব্যবহার করা হবে আইপি ও সিসি ক্যামেরা। সড়ক নিরাপত্তায় পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া ঈদের আগের ৭ দিন এবং পরের ৭ দিন সড়কে গাড়ি থামানো যাবে না। নৌপথে দুর্ঘটনা রোধে ১০ দিন বালিবাহী বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দপ্তর ও কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী মঙ্গলবার বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও অপরাধ কর্মকা- রোধকল্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত এবং দেশবিরোধী ও ধ্বংসাত্মক আন্দোলন-সমাবেশে উসকানিদাতাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকা- রোধে ইউনিফর্মধারী পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদেরও মোতায়েন করা হবে। বিশেষ বিশেষ রাস্তায় ও মোড়ে চেকপোস্ট স্থাপন করা হবে; টাকা স্থানান্তরে মানি এসকর্ট দেওয়া হবে। রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকা, গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ দেশের অন্যান্য বড় শহর ও বন্দরে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাবের টহল বৃদ্ধি করা হবে। গার্মেন্টস মালিক, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতৃবৃন্দ এবং শিল্প পুলিশ একত্রে বসে ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও বোনাস পরিশোধের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। মার্কেটগুলোতে রাত্রিকালীন বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক জানান, সাইবার মনিটরিংসহ গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে ঈদকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের নাশকতার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ঈদ আয়োজনকে নির্বিঘœ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দপ্তর ও কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ঈদে সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা ঝুঁকি না থাকলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করার ঝুঁকি রয়েছে। এটি আমলে নিয়ে ইতোমধ্যেই সাইবার পেট্রলিং বাড়ানো হয়েছে। গুজব ছড়ানো ব্যক্তিদের তালিকা করে আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে। দেশের বাইরে থেকে যেসব সামাজিক মাধ্যম থেকে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তা চিহ্নিত করে বন্ধের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

গুজবের মাধ্যমে আতঙ্ক তৈরির বিষয়টি গত কয়েক দিনের সামাজিক মাধ্যম বিশ্লেষণ করলেও স্পষ্ট হয়। গত রবিবার রাত থেকেই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ‘সোমবার সকাল থেকে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হচ্ছে।’ দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন ফেসবুক আইডি থেকে এই ডাহা গুজব ছড়ানো হয়। এর আগে গত শনিবার সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়, ‘গত দুদিন হয় ৩৩ জন বিজিবি সদস্য নাফ নদে মিশনে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে।’ পরে বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিষয়টি স্রেফ গুজব।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে পরিকল্পিতভাবে নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে, বিশেষ করে রাজনীতিবিষয়ক। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা রাখতে এবং জনমত প্রভাবিত করতে নানা ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে, দেশে অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টিতে এমন গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আবার আরেকটি গ্রুপ সামাজিক মাধ্যমে ভিউ বাড়ানোর জন্য সেই গুজবকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য এহেন গুজব ছড়ানোর পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। ঈদের ছুটিতে মানুষ সামাজিক মাধ্যমে বেশি সময় ব্যয় করে, তাই গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক তৈরি করা সহজ হয়। সেই সুযোগটিই কাজে লাগাতে পারে অপরাধী চক্র।

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান বলেছেন, অপরাধীরা গুজব ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, জনগণের মধ্যে ভয়, উদ্বেগ বা ঘৃণা ছড়িয়ে সমাজে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে অপতৎপরতা চালায়।

মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে ভারতের কিছু গণমাধ্যমও সক্রিয়। বিশেষ করে তারা বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে টার্গেট করে গুজব ছড়াচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, ভারতের ইন্ডিয়া টুডেতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ‘সামরিক ক্যু’ উল্লেখ করে যে প্রতিবেদন করা হয়েছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি রুটিন সভা সম্পর্কে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, র‌্যাবের সব কটি ব্যাটালিয়নই টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে র‌্যাবের কন্ট্রোল রুম, স্ট্রাইকিং রিজার্ভ, ফুট ও মোবাইল পেট্রল, ভেহিক্যাল স্ক্যানার, অবজার্ভেশন পোস্ট, চেক পোস্ট ও সিসিটিভি মনিটরিং কাজ করবে। বিভিন্ন ঈদগাহ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সুইপিং পরিচালনার পাশাপাশি র‌্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট তৎপর থাকবে। যে কোনো নাশকতা বা হামলা মোকাবিলায় র‌্যাব স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডো টিমকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি র‌্যাব এয়ার উইংয়ের হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

হাইওয়ে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, সড়কের নিরাপত্তায় এবং ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। হাইওয়ে পুলিশ বডিওর্ন ক্যামেরা, ড্রোন ক্যামেরা ও সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করছে। বিশেষ করে যেখানে যানজটের শঙ্কা রয়েছে, সেখানেই ড্রোন থাকবে। ড্রোনের মাধ্যমে ট্রাফিক নির্দেশনা দেওয়া হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এখন সিসি ক্যামেরার আওতায়। যানজট নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সড়কে সব ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে পরিকল্পিতভাবে কাজ করা হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক ও নৌ-পথে আকস্মিক দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের টিম, রেসকিউ বোট, ডুবুরি, অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামসহ অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

মহাসড়কে সেনাবাহিনী : ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়কে কাজ করছে সেনাবাহিনী। যানবাহনের চাপ ও অপরাধ রোধে কুমিল্লা সেনাবাহিনীর ৩৩ ডিভিশনের তিন শতাধিক সদস্য গতকাল রাস্তায় দায়িত্ব পালন করেন। গতকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক ছাড়াও লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও নোয়াখালী জেলা সড়কের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কুমিল্লা সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক ডিভিশন জানিয়েছে, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ এবং সম্ভাব্য অপরাধমূলক কর্মকা- রোধে ডিভিশনের তিন শতাধিক সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়