শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৩ মার্চ, ২০২৫, ০৭:৪৪ বিকাল
আপডেট : ২৫ মার্চ, ২০২৫, ০৫:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সৌদি আরবের আকস্মিক সিদ্ধান্তে আটকে গেল লাখো মানুষের ওমরাহ যাত্রা

কোনো ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে ওমরাহ ভিসা কমিয়ে দিয়েছে সৌদি সরকার। নতুন কোটা পদ্ধতিতে বাংলাদেশিরা ভিসা পাচ্ছেন মাত্র ৮-১০ শতাংশ। রমজানের শেষদিকে সেটি নেমে এসেছে ২-৩ শতাংশে। আকস্মিক এ সিদ্ধান্তে আগাম প্লেনের টিকিট কেটে এবং সৌদিতে বাড়ি ও হোটেল বুকিং করেও ওমরাহ পালনে যেতে পারছেন না ৩৫ থেকে ৪০ হাজার বাংলাদেশি। আর সিদ্ধান্ত নিয়েও যাত্রা বাতিল করেছেন ৫৫ হাজার ওমরাহপ্রত্যাশী। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ভুক্তভোগী ওমরাহযাত্রী ও হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (হাব) নেতারা।

হাব নেতারা বলছেন, পবিত্র ওমরাহ পালনে বাংলাদেশিদের অবস্থান ৬ষ্ঠ। প্রতি মাসে গড়ে শুধু ওমরাহর জন্য ৭৫ হাজার ভিসা দেয় ঢাকার সৌদি দূতাবাস। ওমরাহ ভিসার চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যায় রমজান মাসে। এ বছর কেবল মার্চ মাসে বাংলাদেশ থেকে এক লাখের বেশি আবেদন পড়ে। তবে ভিসা হয়েছে মাত্র ২৪ হাজারের মতো, সেটিও মার্চের শুরুর দিকে। শেষের দিকে ভিসা দেওয়ার হার ৩-৪ শতাংশে নেমে এসেছে। কোটা পদ্ধতির কারণে এ জটিলতায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।  

ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, মক্কা-মদিনায় ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষ অবস্থান করায় সৌদি সরকার ভিসা কমিয়ে দিয়েছে। এখন বাংলাদেশ থেকে ১০০ ভিসার আবেদন করলে হচ্ছে মাত্র ২-৩টি। কী কারণে এমনটি হয়েছে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।

অন্যদিকে হাব নেতারা বলছেন, হঠাৎ সৌদি সরকারের এমন সিদ্ধান্তে আটকে গেছে ৫৫ হাজারের বেশি মানুষের ওমরাহ পালন। অগ্রিম টিকিট করে আটকে গেছেন ৩৫ হাজারের মতো ওমরাহযাত্রী। তারা এখন টিকিটের টাকা ফেরত চেয়ে এজেন্সিতে ভিড় করছেন। এখন এসব টাকা ফেরত পাওয়া নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, সব প্রস্তুতি থাকার পরও শুধু ভিসা না পাওয়ায় একজন ওমরাহ যাত্রী গড়ে ৩০-৪০ হাজার টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন। একই ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন বিভিন্ন এজেন্সির মালিক ও মোয়াল্লেমরা।    

রমজান মাসে পরিবারসহ পবিত্র ওমরাহ পালন করার নিয়ত করেন লালবাগের ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান। ১০ রমজানের পর যেকোনো দিন তিনি ওমরাহ যাবেন ঠিক করে একটি এজেন্সির কাছে অগ্রিম টাকা দেন। প্রায় এক মাস হয়ে গেলেও তাদের ওমরাহ ভিসা হচ্ছে না। ইতোমধ্যে ওই এজেন্সি এয়ার টিকিট, সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনায় হোটেল বুকিংসহ প্রায় সব পেমেন্ট করে ফেলেছেন। রমজান প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ায় এবার ওমরাহ পালনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শাহজাহান। তিনি এখন এজেন্সির কাছে টাকা ফেরতে চাচ্ছেন। এদিকে এজেন্সি এয়ারলাইন্সের কাছে টিকিট বাতিল করে টাকা ফেরত চাচ্ছে। হোটেল বুকিং বাতিল করতে হচ্ছে, এতে ২৫ শতাংশ চার্জ কেটে নিচ্ছে বুকিং ডটকম। এ অবস্থায় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে যাত্রী ও এজেন্সি দুই পক্ষই।   

ব্যবসায়ী শাহজাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্লেনের টিকিট বাতিল চার্জসহ অন্যান্য খাতে আমাদের চার সদস্যের প্রায় ১ লাখ টাকা গচ্চা যাচ্ছে।

শুধু শাহজাহান নন, পূর্বঘোষণা ছাড়া সৌদি সরকার ওমরাহ ভিসা কমিয়ে দেওয়ায় তীব্র ভোগান্তির মুখে পড়েছেন হাজার হাজার ওমরাহ যাত্রী ও এ সম্পর্কিত ট্রাভেল এজেন্সিগুলো। আকস্মিক এ সিদ্ধান্তের ফলে অনেক ট্রাভেল এজেন্সিকে তাদের পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্লেনের টিকিট বাতিল বা রি-শিডিউল করতে গিয়ে অনেকের অতিরিক্ত টাকাও গচ্চা যাচ্ছে।

হাবের মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, হঠাৎ করে সৌদি সরকার ওমরাহ ভিসা কমিয়ে দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ওমরাহ যাত্রীরা। এজেন্সিগুলোও বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। অনেকেই অগ্রিম প্লেনের টিকিট কেটে রেখেছেন এবং সৌদিতে হোটেল ও বাড়ি ভাড়া করে রেখেছেন। ভিসা না পাওয়ায় তাদের সব বাতিল করতে হচ্ছে। এটা বড় ধরনের ক্ষতি।

তিনি বলেন, আমরা ধর্ম মন্ত্রণালয়কে এই সমস্যা সমাধানের জন্য চিঠি দিয়েছি। সৌদি দূতাবাসেও চিঠি দিয়ে যোগাযোগ করছি। কিন্তু কোনো সাড়া পাচ্ছি না। ধর্ম মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমরা দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চাই। না হয় ওমরাহর ভিসা ও টিকিট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কয়েকশ এজেন্সি ও কয়েক হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়বে।

ধর্ম উপদেষ্টা এ এফ এম খালিদ হোসেন এ বিষয়ে বলেন, সৌদি সরকার প্রাথমিকভাবে নুসুক অ্যাপের মাধ্যমে ওমরাহ ভিসা দিতো। মক্কা ও মদিনায় অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে তারা ভিসা দেওয়ার পরিমাণ ৯০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। হজের মৌসুমের চেয়েও এখন সৌদি আরবে বেশি মানুষ অবস্থান করায় ইবাদত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, আমি সৌদি সরকারের কাছে ডিও আর দূতাবাসকে চিঠি দিয়েছি। রাষ্ট্রদূতকে ওমরাহ ভিসা ইস্যু স্বাভাবিক করার অনুরোধ জানিয়েছি। একই সঙ্গে উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর সঙ্গেও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তারা এজেন্সিগুলোর অগ্রিম ভাড়ার অর্থ ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

ধর্ম সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামাণিক বলেন, হজের মতো ওমরাহর জন্য দুই দেশের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি নেই। ফলে বাই-লেটারাল কোনো যোগাযোগ করতে পারি না। তবে সমস্যা সমাধানের জন্য সৌদি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যারা ওমরাহ টিকিটের জন্য বিভিন্ন এজেন্সিতে টাকা জমা দিয়েছেন তারা টাকা ফেরত পাবেন।

হঠাৎ ওমরাহ ভিসার খরচ দ্বিগুণ : সাধারণ সময়ে একটি ওমরাহ ভিসা করাতে ১৭-১৮ হাজার টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ সৌদি সরকার ওররাহ ভিসা কমিয়ে দেওয়ায় সেই ভিসা পেতে এখন দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে। এখন একটি ভিসার জন্য কমপক্ষে ৩০-৩৫ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। তারপরও ভিসার নিশ্চয়তা নেই। কারণ দশজন আবেদন করলে সর্বোচ্চ একজনের ভিসা মিলছে।

বায়তুল্লাহ হজ সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী হামিদ সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুরো রমজান মাসে ওমরাহ নিয়ে আমাদের একটু ভালো ব্যবসা হয়। এবার সেটি মাটিতে মিশে গেছে। আমি দেড়শ জনের আবেদন করে মাত্র সাতজনের ভিসা পেয়েছি। ইতোমধ্যে অনেকেই অগ্রিম টিকিট কেটে রেখেছেন। তারা এখন টাকা ফেরত চাচ্ছেন।

তিনি জানান, ভিসা না পাওয়ায় টিকিট ও হোটেল বাতিলের কারণে একজন ওমরাহযাত্রীর গড়ে ৩০ হাজার টাকার বেশি ক্ষতি হবে। শুধু তাই নয়, যারা এখন ভিসা পাচ্ছেন তাদের ১০ হাজার টাকা করে বেশি দিতে হচ্ছে। উৎস: ঢাকা পোষ্ট।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়