বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে ভারতের তিনটি প্রকল্পের অর্থায়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিবেশী দেশটি। সম্প্রতি ঢাকায় ভারতীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে রেলওয়ের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। ভারতের অর্থায়ন বাতিল হওয়া তিনটি প্রকল্প হলো- রংপুর-কাউনিয়া থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত রেলপথ প্রকল্প, খুলনা-দর্শনা ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প এবং বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েল গেজ নির্মাণ প্রকল্প। ওদিকে এই তিনটি প্রকল্পের মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েল গেজ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য বিকল্প অর্থায়ন খুঁজছে বাংলাদেশ। আর বাকি দুই প্রকল্প আর আলোর মুখ দেখছে না।
২০১৮ সালে ভারতের অর্থায়নে রংপুর-কাউনিয়া থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত রেলপথ প্রকল্পটি শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল কিন্তু সাত বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। খুলনা-দর্শনা ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পে ভারত অর্থায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেয়, ফলে রেলওয়ে প্রকল্পটি বাতিল করেছে। বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েল গেজ নির্মাণ প্রকল্পে ভারত টাকা না দিলেও রেলওয়ে বিকল্প অর্থায়নের চেষ্টা চালাচ্ছে। অর্থায়ন বাতিল হওয়া তৃতীয় প্রকল্প অর্থাৎ বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি আলোচনায় আসে আরও আগেই।
গত বছর নভেম্বরের দিকে প্রকল্পটির স্টিয়ারিং কমিটির সভার সূত্র জানায়, প্রকল্পে প্রতিশ্রুত ঋণের টাকা দিচ্ছিলো না ভারত। প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধিতে যে বাড়তি ঋণ প্রয়োজন, সে বিষয়েও কিছু বলেনি দেশটি। সাড়া দেয়নি ঠিকাদার নিয়োগেও। ফলে তখন থেকেই অনিশ্চয়তায় পড়ে যায় প্রকল্পটি। ফলে সরকার বাড়তি ঋণের জন্য বিকল্প উৎস অনুসন্ধানের চিন্তা করছে বলে জানানো হয়। এ নিয়ে রেলপথ সচিব ফাহিমুল ইসলাম বলেন, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ প্রকল্পটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প এবং দ্রুত এর জন্য বিকল্প অর্থায়নের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি আমরা।
ভারতের ঋণে বাংলাদেশ রেলওয়ের ছয়টি প্রকল্প ছিল। তবে ১০ বছরে এসব প্রকল্পের মাত্র একটি প্রকল্প অর্থাৎ খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ শেষ হয়, যার কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে। ভারতীয় ঋণ বা লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় রেলের এই ছয় প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। শর্তানুযায়ী প্রকল্পগুলোর ৭৫ শতাংশ অর্থায়ন আসার কথা ভারত থেকে, বাকি ২৫ শতাংশ বাংলাদেশ দেবে। ভারতীয় ঋণের সব প্রকল্পের অর্থ দেবে দেশটির এক্সিম ব্যাংক। চুক্তি অনুসারে, ৭৫ শতাংশ পণ্য-সেবা ভারত থেকে আমদানি করতে হবে। বাকি ২৫ শতাংশ পণ্য-সেবা ভারতের বাইরে থেকে কেনা যাবে।
৬টি প্রকল্পের মধ্যে ভারত চলমান দু’টি প্রকল্পে অর্থায়ন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরমধ্যে একটি হলো ঢাকা-টঙ্গি-জয়দেবপুর ডুয়েল গেজ লাইন নির্মাণ প্রকল্প, যার কাজ ২০২৭ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। অন্য প্রকল্পটি হলো কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্প, যা ২০১১ সালে শুরু হয়েছিল এখনো শেষ হয়নি। এই প্রকল্পের ৫৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। খবর: মানবজমিন।