শিরোনাম
◈ জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরে এক ঢিলে তিন পাখি মেরেছে অন্তর্বর্তী সরকার ◈ ঈদের পর নির্বাচন ও সংস্কার দাবিতে ফের উত্তপ্ত হবে রাজনীতির মাঠ  ◈ অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের আরেকটি দল আসছে, নেতৃত্বে শিবিরের সাবেকরা ◈ দুই-একজন অপকর্ম করছে, তাদেরকে কোনভাবেই দলে রাখতে পারব না : ইশরাক ◈ রাজধানীতে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার, গ্রেফতার ১৪৮ ◈ দেশে এই প্রথম বিরাট অঙ্কের ভার্চুয়াল মুদ্রা জব্দ ◈ ঈদের আগে আবারও বাড়লো  স্বর্ণের দাম, সোমবার থেকে কার্যকর ◈ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে চীনের সৌর প্যানেল জায়ান্ট ‘লংগি’: চীনা রাষ্ট্রদূত ◈ 'ধর্ষণ’ শব্দ নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ◈ আগামী বছর থেকে কর্পোরেট রিটার্নও অনলাইনে: এনবিআর

প্রকাশিত : ১৬ মার্চ, ২০২৫, ০২:০২ দুপুর
আপডেট : ১৭ মার্চ, ২০২৫, ০৩:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পানি চেয়েও পাননি আবরার, ঘাতকদের জবানবন্দিতে হত্যার নৃশংসতার বর্ণনা

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরেবাংলা হল থেকে উদ্ধার হয় তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের মরদেহ। অমানবিক, নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন করে হত্যা করা হয় আবরারকে। ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তারদের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে নৃশংসতার চিত্র।

মামলার আসামি অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদী হাসান রবিন, ইফতি মোশারফ, মেফতাউল ইসলাম জিয়ন, মনিরুজ্জামান মনির, এ এস এম নাজমুস সাদাত ও খন্দকার তাবাখ্খারুল ইসলাম তানভীরের জবানবন্দি থেকে জানা যায়, ছাত্র শিবির সন্দেহে আবরারকে শায়েস্তা করার জন্য বুয়েট ছাত্রলীগের সদস্যরা সভা করে সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ৬ অক্টোবর রাতে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে নির্মম নির্যাতন করা হয়। ওই কক্ষে আবরারকে আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের নামে দফায় দফায় ক্রিকেট স্টাম্প ও স্কিপিং রোপ দিয়ে আঘাত করেন আসামিরা।

শিবির সন্দেহে সভা, তারপর জিজ্ঞাসাবাদ: শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন আবরার। আসামিদের দেওয়া ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তির তথ্য অনুযায়ী, আবরার হত্যার মূল হোতা বা সূচনাকারী হিসেবে তাঁর রুমমেট মিজানুর রহমানকে চিহ্নিত করে পুলিশ। বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিনকে মিজানুরই বলেছিলেন, আবরারকে তাঁর শিবির বলে সন্দেহ হয়।

পরে রবিন বুয়েটের শেরে বাংলা হল ছাত্রলীগের ১৫ ও ১৬তম ব্যাচের ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপে এ কথা জানান। পরদিন ৫ অক্টোবর হলের গেস্টরুমে কয়েকজন মিলে সভা করেন। এরপর ৬ অক্টোবর রাতে আবরারকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তাঁরা।

একজনই ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে শতবার আঘাত করেন: অনিক সরকার। বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫তম ব্যাচের ছাত্র। শেরেবাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন তিনি।

১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অনিক বলেন, ‘সেদিন হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ইফতি মোশাররফ আবরারকে একটা ভাঙা ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে পেটাচ্ছিল। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আমিও আবরারের হাতে ও পায়ে ৪০ থেকে ৫০ বার করে ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে শতাধিকবার আঘাত করি। রাত ১টা ২০ মিনিটে রবিন আমাকে জানায়, আবরার বমি করছে।’

স্কিপিং রোপ দিয়েও মারা হয়: ইফতি মোশাররফ নিহত আবরারের কক্ষেরই আবাসিক ছাত্র। তিনি বুয়েটের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। ইফতি আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, আবরার শিবির করে কিনা তা নিয়ে সবাই প্রশ্ন করতে থাকেন। তার কাছ থেকে কথা বের করার জন্য ইফতি ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে ৪ থেকে ৫টি বাড়ি মারেন। স্টাম্পটি ভেঙে যায়। পরে ভাঙা স্টাম্প দিয়ে অনিক সরকার ও অন্যরা দফায় দফায় পেটাতে থাকেন। স্কিপিং রোপ দিয়ে মুজাহিদ মারা শুরু করেন। অন্যরাও স্কিপিং রোপ দিয়ে মারতে থাকেন।

সর্বশক্তি দিয়ে পেটানো হয় আবরারকে: বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়তেন মেহেদী হাসান রবিন। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে মেহেদী বলেন, আবরারকে কিল, ঘুষি, চড়, থাপ্পড়, ক্রিকেট স্টাম্প ও স্কিপিং রোপ দিয়ে মারা হয়। সর্বশক্তি দিয়ে পিটিয়ে আবরারের হাত, কনুই, পায়ের পাতা, হাঁটু, পিঠ, পাঁজর ও বুকে আঘাত করে সবাই।

বাঁচার জন্য কাকুতি মিনতি করেন আবরার: মেহেদী হাসান রবিন ও অন্যরা জবানবন্দিতে বলেন, আবরারকে দফায় দফায় নিষ্ঠুর নির্যাতন করার সময় তিনি বাঁচার জন্য চিৎকার করে কাকুতি-মিনতি করেছিলেন। কিন্তু তার দিকে কেউ ভ্রুক্ষেপ করেননি। কাকুতি-মিনতি করার পর নির্যাতনের হার আরও বেড়ে যায়। তাকে মোশাররফ লাথি মারতে থাকেন।

পানি চেয়েও পাননি আবরার: মুজাহিদুর রহমান বুয়েটের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। তিনি তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র ছিলেন। মুজাহিদ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, অনবরত পিটুনির একপর্যায়ে আবরার মাটিতে শুয়ে পড়েন। তখনো অনিক আবরারকে মারতে থাকেন। একপর্যায়ে আবরার প্রস্রাব করে দেন। বমিও করেন। আবরার পানি চাইলে মোর্শেদ তখন পানি দিতে যান। তখন অনিক বলেন, ‘তুই পানি দিতে গেলে তোকেও মারব।’ অনিক আবরারকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে আবরার নিস্তেজ হয়ে পড়েন। মুজাহিদ তাঁর জবানবন্দিতে নিজেও ক্রিকেট স্টাম্প ও স্কিপিং রোপ দিয়ে পেটানোর কথা স্বীকার করেন।

রাত ৮টা থেকে ১টা পর্যন্ত চলে নির্যাতন:  মেফতাউল ইসলাম জিয়ন জবানবন্দিতে বলেন, সেদিন রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে রবিন তাঁকে ফোন দিয়ে জানান, শিবিরের এক ছেলেকে আটক করা হয়েছে। তিনি যেন হলের নিচে নামেন। পরে তিনি হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে যান। ওই কক্ষে গিয়ে প্রায় ১৫ জন ছাত্রকে দেখেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে রবিন আবরারের গালে চড় মেরে মারধর শুরু করেন। এরপর একে একে ক্রিকেট স্টাম্প, স্কিপিং রোপ দিয়ে মারতে থাকে। যে যেভাবে পারে কিল, ঘুষি, লাথি, চড়-থাপ্পড় মেরেও মারতে থাকে আবরারকে।

জবানবন্দিতে জিয়ন আরও বলেন, আবরারকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয় ছিল, তিনি শিবির করেন কিনা এবং হলে আর কে কে শিবির করেন। এসব বিষয়ে আবরার চুপ ছিলেন। প্রথমদিকে তিনি চুপ ছিলেন। পরে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে কাকুতি-মিনতি করতে থাকেন।

এছাড়া বুয়েট ছাত্র মনিরুজ্জামান মনির, এ এস এম নাজমুস সাদাত এবং খন্দকার তাবাখ্খারুল ইসলাম তানভীরও জবানবন্দিতে একই ধরনের কথা বলেন।

আবরার খুন হওয়ার পর দিন তাঁর বাবা বরকত উল্লাহ চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দেওয়ার পর বিচার শেষে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। হাইকোর্টের রায় বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখা হয়।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়