ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে সেই লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে নৌ চলাচলের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলো ১৫ রমজান থেকে বাস্তবায়ন শুরু হবে বলেও জানান তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নৌপথে সুষ্ঠু, সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ নৌচলাচল এবং যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে করণীয় নির্ধারণ বিষয়ক সভা শেষে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেছেন, ‘লঞ্চে নির্ধারিত ভাড়া টানিয়ে রাখতে হবে এবং নির্ধারিত ভাড়ার বেশি ভাড়া আদায় করা যাবে না। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলে লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল করা হবে। লঞ্চে কোনোভাবেই অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা যাবে না। লঞ্চ ছাড়ার নির্ধারিত সময় ও সিরিয়াল মেনে চলতে হবে।’
লঞ্চ মালিকরা নির্ধারিত ভাড়ার বেশি নেবেন না- জানিয়ে তিনি বলেন,‘এখন যাত্রী কম হওয়ায় তারা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া নিচ্ছেন। আগামী ১৫ রমজান থেকে নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হবে। আজ-কালকের মধ্যে উনারা ভাড়া টানিয়ে দেবেন, যাতে যাত্রীরা দেখতে পারেন নির্ধারিত ভাড়াটা কী, আর উনারা কী ভাড়া নিচ্ছেন।’
লঞ্চে যাত্রীদের নিরাপত্তায় একজন কমান্ডার ও তিনজন আনসার থাকবে জানিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আনসারদের আচরণের বিষয়ে বলা হয়েছে। আনসারদের যাত্রীদের সুরক্ষা দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো কাজ নেই।’
তিনি বলেন, ‘কোনো লঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে পারবে না। এ বিষয়ে আমাদের ইন্সপেক্টররা থাকবেন। শুধু সদরঘাটে না রাস্তায় কোনো জায়গা থেকে যদি অতিরিক্ত যাত্রী নেন কোনো লঞ্চ মালিক, সেজন্য কোস্টগার্ডকে বলা হয়েছে। নৌবাহিনীকেও বলা হয়েছে। কারণ নৌবাহিনীকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া আছে।'
নৌ পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড অহেতুক কোনো লঞ্চে উঠে তল্লাশি করবে না জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি সেটা করা হয়, আমি লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে বলব, তারা একটা অভিযোগ দেবেন। আমরা ব্যবস্থা নেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘাটগুলোতে কুলিদের ইউনিফর্ম ও নেমপ্লেট থাকতে হবে। যদি না থাকে সে ইজারাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাতে স্পিডবোট ও বাল্কহেড চলবে না জানিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘একটি লঞ্চ আরেকটি লঞ্চের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে না। লঞ্চের ফিটনেস সার্টিফিকেট থাকতে হবে। ফিটনেস ইন্সপেকশন কাল থেকেই শুরু হবে। মালিকদের বলব, তারা যাতে ফিটনেস সার্টিফিকেটটা নিয়ে নেন। তা না হলে রাস্তায় যদি তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে সরকার দায়ী থাকবে না।’
এ সময় যাত্রী নামিয়ে বাস ফেরিতে ওঠানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা।তিনি বলেন, ‘ফেরিতে যাত্রীসহ বাস ওঠানামা করতে পারবে না। যাত্রী নামিয়ে বাস ওঠানামা করতে হবে।’
‘আমরা সবসময় দেখি অতিরিক্ত ভাড়া ও যাত্রী না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ঈদের সময় যখন যাত্রীর চাপ হয় তখন এ নির্দেশনা কেউ মানে না।’ এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উপদেষ্টা বলেন, ‘এবার কী হবে আমি জানি না। বলা হয়েছে, শুধু জরিমানা নয়, ওই লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল করা হবে।’
‘এবার সবকিছু আমি নিজে দেখব। আমি নিজেই সদরঘাটে যাব’, বলেন উপদেষ্টা।
সড়ক পথের নিরাপত্তা নিয়েও সিদ্ধান্তের কথা জানান সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঈদুল ফিতর সামনে রেখে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত রাস্তা যানজট মুক্ত রাখতে হবে। পথে কিংবা কোনো স্টেশনে পাশাপাশি তিনটি বাস দাঁড়িয়ে একসঙ্গে যাত্রী ওঠানামা করা যাবে না।’
এ সময় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ, বিআইডব্লিউটি-এ চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মোহাম্মদ মাকসুদ আলমসহ নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, পুলিশ, লঞ্চ মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসকরা উপস্থিত ছিলেন।