শিরোনাম
◈ বৃষ্টিতে ভেসে গেল ম্যাচ, এক পয়েন্ট নিয়ে আসর শেষ বাংলাদেশের ◈ ‘জুলাই শহীদ’ ও ‘যোদ্ধা’রা যেসব সুবিধা পাবেন ◈ আফগানিস্তানকে কেউ আর হালকাভাবে নেবে না: কোচ ট্রট ◈ ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা মূল্যের চোরাই গাড়ি উদ্ধার, গ্রেফতার ১ ◈ বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে রাখাইনে স্বীকৃতি পেতে পারে আরাকান আর্মি  ◈ নতুন ছাত্র সংগঠনের আহ্বায়ক কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ  ◈ নতুন রাজনৈতিক দলের নাম জাতীয় নাগরিক পার্টি; কে কোন পদে? ◈ রমজানে তারাবি নামাজ পড়া নিয়ে যে আহ্বান জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ◈ সেনাপ্রধান কোনো কথা না বুঝে বলেন নাই: নৌপরিবহন ও শ্রম উপদেষ্টা সাখাওয়াত (ভিডিও) ◈ সাংবাদিক ইলিয়াসের ডকুমেন্টারি: নিজেকে নির্দোষ দাবি করে যা বললেন সোহেল তাজ

প্রকাশিত : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:৪৫ দুপুর
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

সেনাপ্রধানের কঠোর বক্তব্য থেকে কে কী বার্তা নিচ্ছেন

বাংলাদেশে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান

এল আর বাদল : বাংলাদেশে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্য এখন দেশটির রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। সেনাপ্রধান তার বক্তব্যে কী বার্তা দিলেন, এ নিয়ে চলছে নানামুখী বিশ্লেষণ, চলছে নানা আলোচনা।

রাজনৈতিক দলগুলোর কাদা-ছোড়াছুড়ি, পিলখানা হত্যাকা-, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে হেয় করার বিষয় এবং এমনকি দেশের স্বাধীনতা- স্বার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সতর্ক করেছেন তিনি। জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের এই বক্তব্য দেওয়ার সময় তার শারীরিক ভঙ্গি এবং বক্তব্যের ভাষাও বেশ কঠোর মনে হয়েছে। রাজনীতিকদেরও কেউ কেউ এতে অবাক হয়েছেন।

কারণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গত ছয় মাসে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান যে সব বক্তব্য দিয়েছেন, সে সব বক্তব্যের সঙ্গে সর্বশেষ বক্তব্যের পার্থক্য সহজেই দেখা যায়। সূত্র-বিবিসি বাংলা

বিশেষ করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনার শাসনের পতনের দিনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পর সেনাপ্রধান বক্তব্য দিয়েছিলেন। তার সেই বক্তব্যেই জানা গিয়েছিল শেখ হাসিনার ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া, অন্তর্র্বতী সরকার গঠনের বিষয় এবং সে সময়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে। সেদিনের বক্তব্যে তার শারীরিক ভঙ্গি ও ভাষা তেমন কঠোর বা শক্ত ছিল না।

এখন সেনাপ্রধানের এ ধরনের বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্র্বতী সরকার, রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা একটা বড় কারণ বলে রাজনীতিকদেরই অনেকে মনে করেন।

তাদের কেউ কেউ বলছেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর অনেক ক্ষেত্রে অন্তর্র্বতী সরকার ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চরম উদ্বেগ-শঙ্কা তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোও বিভেদে জড়িয়েছে। সার্বিকভাবে এটিকে একটি নিয়ন্ত্রণহীন পরিস্থিতি হিসেবে দেখছেন অনেকে।

অন্তর্বর্তী সরকার ছয় মাসে সার্বিকভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণ কতটা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে, এ নিয়ে মানুষের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে, আছে আস্থার অভাব। রাজনৈতিক দলগুলোও মনে করছে, অনেক ক্ষেত্রেই সরকার তাদের অথরিটি বা নিয়ন্ত্রণ দৃশ্যমান করতে পারেনি।

অন্যতম প্রধান দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবিসি বংলাকে বলেছেন, রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না, সে কারণে সেনাপ্রধানকে সবাইকে সতর্ক করে বক্তব্য দিতে হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

সেনাপ্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বিভেদসহ বিভিন্ন বিষয়ে বার বার সতর্ক করে কঠোর ভাষায় এই বক্তব্য দিয়েছেন মঙ্গলবার ঢাকায় রাওয়া ক্লাবে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে ২০০৯ সালের হত্যাকা-ে নিহত সামরিক কর্মকর্তাদের স্মরণে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

দলগুলোর প্রতি বার্তা

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সতর্ক করে বলেছেন, নিজেরা কাদা-ছোড়াছুড়ি, মারামারি ও কাটাকাটি করলে দেশ ও জাতির স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। তিনি এ-ও বলেন, "এই দেশ সবার। আমরা সুখে-শান্তিতে থাকতে চাই। আমরা চাই না হানাহানি, কাটাকাটি, মারামারি।"

এমন এক সময় সেনাপ্রধান এ ধরনের বক্তব্য দিলেন, যখন রাজনৈতিক দলগুলোর বিভেদ প্রকাশ্যে এসেছে।
বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মধ্যে বাকযুদ্ধ চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। সংস্কার, স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এই দুই দলের মত বিরোধ অন্যান্য দলের ওপরও প্রভাব ফেলেছে। এসব ইস্যুতে দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থান এখন দৃশ্যমান।

অন্যদিকে, শুক্রবার গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র নেতাদের নতুন দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। এই দল গঠনের প্রক্রিয়ায় ছাত্র নেতাদেরও অনেকে বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপির সমালোচনা করেছেন; জড়িয়েছেন বিতর্কে।
অন্তর্বর্তী সরকারে যে তিনজন ছাত্র প্রতিনিধি আছেন, তাদের মধ্যে নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করে নতুন দলের নেতৃত্বে যাচ্ছেন। অন্য দুজন ছাত্র প্রতিনিধি আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম উপদেষ্টা হিসেবে রয়ে গেছেন। তাদের মধ্যে মাহফুজ আলম নতুন করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। এই মন্ত্রণালয় ছিল নাহিদ ইসলামের হাতে। তাদের সঙ্গে নতুন দলের সম্পর্ক কি থাকছে, তারা কতটা সম্পৃক্ত থাকছেন-এখন এসব প্রশ্ন তুলছে বিভিন্ন দল।

উপদেষ্টা পদে থেকে দল গঠনের প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত থাকায় অন্তর্র্বতী সরকারের নিরপেক্ষতার প্রশ্নও সামনে এনেছে। বিশেষ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি বিবিসি বাংলার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ওই প্রশ্ন তুলেছিলেন।

দল গঠনের পেছনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে, এমন অভিযোগও করেছে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল। সেই প্রেক্ষাপটে ছাত্র নেতাদের অনেকে মি: আলমগীর ও বিএনপির সমালোচনায় নেমেছিলেন। সেটা বিএনপির সঙ্গে তাদের সম্পর্কে দূরত্ব বাড়িয়েছে।

রাজনৈতিক পক্ষগুলোর বিতর্ক, বিরোধ বা বিভেদের কারণে নানারকম সংকট তৈরি হচ্ছে, সাধারণ মানুষের মধ্যেও আস্থার অভাব দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর সরকারও সেভাবে ভূমিকা রাখতে পারছে না।

এমন এক প্রেক্ষাপটেই সেনাপ্রধান পরিস্থিতির ব্যাপারে সতর্ক করলেন। তিনি তার বক্তব্যে কয়েক বার 'সতর্ক' শব্দের ব্যবহার করেছেন। এ ক্ষেত্রে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হ্ওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি।

বিএনপির নেতাদের মধ্যে সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে নানা আলোচনা আছে। তবে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবিবিসি বাংলাকে বলেন, সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কিছু নেই। এই বক্তব্য তার ভালই লেগেছে। কারণ দেশে এখন সবার ঐক্য প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর কাদা-ছোড়াছুড়ি বন্ধ করা উচিত বলে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা বলছেন। দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বিবিসি বাংলাকে বলেন, রাজনীতিতে ঐক্যের জায়গায় বিভক্তির কারণে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, সেটাই সেনাপ্রধানের বক্তব্যে এসেছে।

যদিও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী, এই দুই দলই নানা ইস্যুতে একে অপরের সমালোচনায় লিপ্ত হওয়ায় তাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন বেড়েছে।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মতিউর রহমান আকন্দ অবশ্য বলেছেন, দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সঙ্গে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার বিষয় কেন এলো, এটি সহ সেনাপ্রধানের বক্তব্যের সার্বিক বিষয় নিয়ে তারা দলে আলোচনা করে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবেন।

অন্যান্য দল ও জোটগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চের একাধিক শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

আস্থা কি ফেরাবে

নিজের ভিন্ন কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই, এমন কথাও এসেছে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্যে। তার এ কথা নিয়েও চলছে নানা আলোচনা।

তবে রাজনীতিকদেরই অনেকে মনে করেন, দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা বা মবের দৌরাত্ম চলছে। একই সঙ্গে ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি থামানো যাচ্ছে না। আইশৃঙ্খলার চরম অবনতিতে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি আস্থার সংকট বেড়েছে।

সবদিকে যখন বিশৃঙ্খলা, তখন এ সরকার সামলাতে পারছে না, সামরিক শাসন আসতে পারে কি না- এখন এই আলোচনাও উঠছে বিভিন্ন মহলে। এ ধরনের পরিস্থিতিতেই সেনাপ্রধান বললেন, তার কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। তিনি নির্বাচনের কথা বলেছেন। ন্যুনতম বা প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে, সেটাই এখন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশা।

ডিজিএফআই, এনএসআইসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে হেয় প্রসঙ্গ কেন এলো-

সেনাপ্রধান বলেছেন, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই—এগুলো দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে অতীতে। খারাপ কাজের সাথে অসংখ্য ভালো কাজ করেছে। এর মধ্যে যদি অপরাধ করে থাকে, সেটার শাস্তি হবে। অবশ্যই শাস্তি হতে হবে। কিন্তু তার আগে মনে রাখতে হবে, আমরা এমনভাবে কাজটা করব, এই সমস্ত অর্গানাইজেশনগুলো যেন আন্ডারমাইন না হয়।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শাসনের সময় গুম, খুনসহ মানবাধিকার লংঘনের বিভিন্ন অপরাধের ব্যাপারে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আভিযোগ এসেছে। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই-এর অতীত ভূমিকা নিয়ে নানা আলোচনাও হয়েছে।

এমনকি বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান রাখা উচিত কি না- এই প্রশ্নও অনেকে তুলেছেন। আর এমন পটভূমিতেই প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই- এর ব্যাপারে সেনাপ্রধানের বক্তব্যে তার একটা অবস্থান এসেছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়