শিরোনাম
◈ সাড়ে পাঁচ কোটি ভোটার এখনও পাননি  স্মার্টকার্ড  ◈ আজ জাতীয় শহীদ সেনা দিবস: বিডিআর হত্যাযজ্ঞের ১৬ বছর ◈ বেলজিয়ামে আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড, বিধ্বস্ত চেহারায় প্রকাশ্যে হাছান মাহমুদ ◈ সংস্কার হতে হবে নির্বাচনমুখী: আন্দালিব রহমান পার্থ ◈ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিলেন তৌহিদ হোসেন ◈ একদিন ম্যানেজ হলে ঈদে মিলবে টানা ৯ দিনের ছুটি ◈ বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা: কারাগার থেকে পালিয়েছেন ফাঁসির আসামি জেমি ◈ সাজেক ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করে প্রশাসনের বার্তা ◈ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জামায়াত আমিরের বৈঠক, অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত ◈ শুক্রবার আত্মপ্রকাশ করছে ছাত্রদের নতুন দল

প্রকাশিত : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০২:১৯ রাত
আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আজ জাতীয় শহীদ সেনা দিবস: বিডিআর হত্যাযজ্ঞের ১৬ বছর

আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’। পিলখানায় বিডিআর সদরদফতরে হত্যাযজ্ঞের ১৬ বছর। বিডিআর বিদ্রোহ বা পিলখানা হত্যাকাণ্ড ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন বিডিআরদের একটি গ্রুপ দ্বারা সংগঠিত বিদ্রোহ এবং হত্যাকাণ্ড।

ঢাকার পিলখানায় রহস্যময় এক বিদ্রোহের নামে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা বর্বরোচিত ও নির্মম হত্যার শিকার হন। সব মিলিয়ে ওই ঘটনায় ৭৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এই অনাহূত ঘটনা স্মরণীয় করে রাখতে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক পরিপত্রের মাধ্যমে রোববার এ ঘোষণা দেওয়া হয়। পরিপত্রে বলা হয়েছে, সরকার প্রতিবছর ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং ওই দিন ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ (সরকারি ছুটি ব্যতীত) পালনের জন্য ‘গ’ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে অন্তর্ভুক্তকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এই সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাকে অনুরোধ করা হয়েছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, বাংলাদেশের ওপর আধিপত্যবাদী শক্তির দখলদারিত্ব কায়েমের জন্য আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল পিলখানা হত্যাকাণ্ড।

তিনি আরও বলেন, এটি কোনো বিদ্রোহ ছিল না, ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। পিলখানা হত্যাকাণ্ডে আমরা জাতির সূর্য সন্তানদের হারিয়েছি। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ভিতকে আঘাত করা হয়েছে। ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের কবর রচনা করে নৈরাজ্যবাদের জন্ম দিয়েছিল পতিত আওয়ামী লীগ সরকার।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা বিডিআরের পোশাক পরে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডদের অনেকেই এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। তাদের বিচারের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।

বহুল আলোচিত পিলখানার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দু’টি মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। দেশের বিচারিক ইতিহাসে কোন মামলায় বহু আসামি নিয়ে এটিই একমাত্র মামলা। রাজধানীর পুরান ঢাকায় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে হত্যা মামলাটির বিচার সম্পন্ন হয়। বিচারিক আদালত ওই মামলায় ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করে। খালাস পান ২৭৮ জন।

২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে।

তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত একটি লার্জার বেঞ্চে হাইকোর্টে মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর রায় হয়। উচ্চ আদালতের রায়ে ১৩৯ আসামির ফাঁসির রায় বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।

হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন। অন্যদিকে, হাইকোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আবেদন এখন শুনানির অপেক্ষায়।

বিস্ফোরক আইনের মামলা :  ওই ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ আসামির বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম চলছে। বিস্ফোরক আইনের মামলা পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে ২০ জন স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দিয়েছে সরকার। নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন- অ্যাডভোকেট মো. বোরহান উদ্দিন, ফরহাদ নিয়ন, জাকির হোসেন ভূঁইয়া, মোসাম্মৎ রোভানা নাসরিন শেফালী, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী, মো. শফিউল বশর সজল, গোলাম মোক্তাদির উজ্জ্বল, হান্নান ভূঁইয়া, মো. আব্দুল লতিফ, মো. মেহেদী হাসান জুয়েল, মো. হেলাল উদ্দিন, গাজী মাশকুরুল আলম সৌরভ, মো. জিল্লুর রহমান, মাহফুজার রহমান ইলিয়াস, মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী, মো. মেহেবুব হোসেন, মো. মিজানুর রহমান শিহাব, মো. খুরশিদ আলম ও আজগর হোছাইন।

তাদের নিয়োগের আদেশে বলা হয়, ‘লালবাগ (ডিএমপি) থানার মামলা নম্বর ৬৫, তারিখ ২৮/০২/২০০৯ থেকে উদ্ধৃত বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) বিস্ফোরক দ্রব্য মামলা পরিচালনা করার জন্য ২০ জন আইনজীবীকে পুনরায় আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিয়োগ করা হলো।’ বিস্ফোরক আইনের মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর অস্থায়ী আদালতে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়ার আদালতে মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। হত্যা মামলাটিতে খালাস ও জামিন প্রাপ্ত আসামিরা এ আদালত থেকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় জামিন পেয়ে চলতি মাসে কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসন ও ফ্যাসিবাদের পতন হয়। পতন হয় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের। ওইদিন দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি ওঠে। গত ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান শহীদ পরিবারের সদস্যরা। ওই হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তের জন্য গত ২৪ ডিসেম্বর আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার। এই কমিশন এখন কাজ করছে।

হত্যাকাণ্ডের কারণ : পিলখানায় হত্যাকাণ্ড চলাকালে বাংলাদেশের মিডিয়ায় কোনো খবর আসার আগেই ভারতের মিডিয়াতে মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের নিহত হবার খবর প্রচার হলে সেনাবাহিনী ও জনমনে সন্দেহের দানা বাঁধে। সেনাবাহিনী পক্ষ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের যে তদন্ত আদালত করা হয়েছিল তার দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল মতিন। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে তার তদন্তের সারাংশ তুলে ধরেন। তদন্তে তিনি জানতে পেরেছিলেন, বেশ আগে থেকেই আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সাথে এ ব্যাপারে বিডিআর জওয়ানেরা পরিকল্পনা করে আসছিল। ২০০৮ সালের ১৭-১৮ ডিসেম্বর ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের বাসাতে হাবিলদার মনির, সিপাহি শাহাব, সিপাহি মনির বৈঠক করেন। নির্বাচনের আগের দিন সন্ধ্যায় বিডিআর দরবার সংলগ্ন মাঠে সিপাহি কাজল, সেলিম, মঈন, রেজা এবং বেসামরিক ব্যক্তি জাকিরসহ কয়েকজন বৈঠক করেন। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের আগে ১৩ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় রাজধানীর বনানীতে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিমের বাসায় বিডিআরের ডিএডি হাবিব, ডিএডি জলিল, ল্যান্সনায়েক রেজাউল, হাবিলদার মনির, সিপাহি সেলিম, কাজল, শাহাবউদ্দিন, একরাম, আইয়ুব, মঈন, রুবেল, মাসুদ, শাহাদত ও জাকির (বেসামরিক) বৈঠক করেন। এর আগে-পরেও বিডিআর সদস্যরা বেশ কয়েকটি বৈঠক করেন। সুবেদার গোফরান মল্লিক নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। উইকিলিকসে উন্মুক্ত হওয়া নথিতে জানা যায়, ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রী শিব শংকর মেননের কাছে সাহায্য চেয়ে বার্তা পাঠান। সোয়াচের অধ্যাপক আভিনাশ পালিওয়াল তার সাম্প্রতিক বইতে জানিয়েছেন, হাসিনাকে উদ্ধার করতে তখন প্রায় ১০০০ ভারতীয় ছত্রীসেনা পশ্চিমবঙ্গের কলাইকুণ্ডা বিমানঘাঁটিতে অবস্থান নেয়। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদকে ভারত সতর্ক করে বিদ্রোহী জওয়ানদের ধরার চেষ্টা যাতে না করা হয়, অন্যথায় ভারত সামরিক হামলা চালাবে। এতে জেনারেল মইন পিছিয়ে আসেন। পদুয়া-রৌমারি বর্ডারে বিডিআরের হাতে ভারতের পরাজয় এবং পিতার মৃত্যুর জন্য সেনাবাহিনীর দায় মেটানো ইত্যাদি কারণ অনুমান করা হয় বিদ্রোহের সাথে ভারত-আওয়ামী লীগ সম্পর্কের কারণ ব্যাখ্যা করতে।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়