পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হকের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের দলিল, ব্যাংকের স্থায়ী আমানত-এফডিআর, সঞ্চয়ী হিসাবের নথিসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র বোঝাই দুটি বস্তা উদ্ধারের তথ্য দিয়েছে দুদক।
দুটি বস্তায় মোট ৩৮ ধরনের ৪৮টি আলামতের মধ্যে তার গড়া মজিদ-জরিনা ফাউন্ডেশনের নামে ১৫টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ১৩ কোটি টাকা ও তার স্থাবর সম্পদের ২৮টি দলিল থাকার কথা বলেছে সংস্থাটি। খবর: বিডিনিউজ২৪
রাজধানীতে শহীদুল হকের এক আত্মীয়ের বাসায় মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে এসব আলামত উদ্ধার করা হয় বলে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন জানিয়েছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “দুদকের সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াতের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম এই অভিযান পরিচালনা করেন।”
শহীদুল হক তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য সংবলিত নথিপত্র এক নিকটাত্মীয়ের কাছে দুটি বস্তায় ভরে পাঠিয়েছিলেন বলে তুলে ধরেন আক্তার হোসেন।
দুদক মহাপরিচালক বলেন, “তল্লাশিকালে দুটি বস্তায় মোট ৩৮ ধরনের ৪৮টি আলামত পাওয়া যায়। যার মধ্যে সম্পত্তির দলিল, বিভিন্ন গোপনীয় চুক্তিপত্র, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি, সংঘ স্মারকের ছায়ালিপি, অফার লেটার ও ব্যাংক হিসাব বিবরণী উল্লেখযোগ্য।”
অভিযানে অংশ নেওয়া দুদকের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মিরপুর–১২ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের একটি বাসায় তারা এই অভিযান পরিচালনা করেন।
সেখানে শহীদুল হকের ছোট বোনের ননদ সম্পর্কীয় একজনের বাসা থেকে বস্তা দুটি উদ্ধার করা হয়।
অভিযানে শহিদুল হকের গড়া মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশনের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআরের নথি পাওয়া গেছে তুলে ধরে দুদক কর্মকর্তা বলেন, ফারমার্স ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকে শহীদুল হকের নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে বড় অঙ্কের অর্থ জমা থাকার তথ্যও পেয়েছেন তারা।
নথিপত্রে মধ্যে, মজিদ-জরিনা ফাউন্ডেশনের নামে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের তিনটি শাখায় ৫ কোটি ৫০ লাখ, ফারমার্স ব্যাংকের আটটি হিসাবে ৪ কোটি ৭০ লাখ ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকে চারটি হিসাবে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকাসহ মোট ১২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার এফডিআর থাকার আলামত পাওয়া গেছে।
এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে এই ফাউন্ডেশনের নামে প্রায় অর্ধশতাধিক সঞ্চয়ী হিসাব ও এফডিআরের নথিপত্র পাওয়া কথা বলেছেন দুদক কর্মকর্তা।
শহীদুল হকের গোপন করা দুটি বস্তায় বিপুল পরিমাণ স্থাবর সম্পদের দলিল পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকার গুলশান সাবরেজিস্ট্রি অফিসের সাতটি দলিল, ঢাকা সদরের পাঁচটি, উত্তরার দুইটি, কেরানীগঞ্জের দুইটি, মোহাম্মদপুরে দুইটি, নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জ ও ফতুল্লার ১০টিসহ ২৮টি দলিল পাওয়ার তথ্য দিয়েছেন দুদকের এই কর্মকর্তা।
সাবেক এই আইজিপির একটি ব্যক্তিগত ৭৯ পাতার ডায়েরি পাওয়ার কথা তুলে ধরে দুদক কর্মকর্তা বলেন, এই ডায়েরিতে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য নোট করা আছে। এছাড়া বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে শহীদুল হকের বিনিয়োগ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
দুদক মহাপরিচালক বলেন, “নথিপত্রগুলো গোপন রাখার শহীদুল হক তার এক আত্মীয়ের বাসায় পাঠান, সেই আত্মীয় আবার অপর এক আত্মীয়ের বাসায় পাঠান। এসব নথিপত্রে শহীদুল হকের বেআইনিভাবে অর্জিত কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য রয়েছে। দুদক এসব যাচাই বাছাই করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।”
এর আগে, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) শহিদুল হক, তার স্ত্রী শামসুন্নাহার রহমান এবং তাদের তিন সন্তানের নামে থাকা ৭২টি ব্যাংক হিসাবে ৫৬০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছিল।
অনুসন্ধানে তার পরিবারের নিয়ন্ত্রণাধীন মজিদ-জরিনা ফাউন্ডেশনের একাধিক ব্যাংক হিসাবেও বিপুল লেনদেননের তথ্য উঠে এসেছে। ২০২৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওই ৭২টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৫৬০ কোটি ২৮ লাখ টাকা জমা পড়েছিল, যার মধ্যে ৫৫০ কোটি টাকা তোলা হয়েছে। বর্তমানে এসব হিসাবে মাত্র ১০ কোটি ২০ লাখ টাকা অবশিষ্ট রয়েছে।
পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য বিএফআইইউ ওই প্রতিবেদন দুদকে পাঠায়।
শহীদুল হক ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত আইজিপির দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই ২০০৯ সালে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হন।
সরকার পতনের পর শহীদুল হককে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বরে ঢাকার উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাকে বিভিন্ন থানার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।গ্রেপ্তারের পর আদালতের নির্দেশে কয়েক দফায় রিমান্ডেও নেওয়া হয় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শককে।
আপনার মতামত লিখুন :