অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তারা যার যার পারস্পরিক উদ্বেগ এবং স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা করেছেন। রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ওমানের মাস্কাটে ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্সের ফাঁকে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দ্বিতীয় দফায় তৌহিদ-জয়শঙ্করের সাক্ষাৎ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অষ্টম ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্সের সাইডলাইনে উভয়পক্ষ পারস্পরিক উদ্বেগ এবং স্বার্থের বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তারা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুই প্রতিবেশী যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে তা স্বীকার করেছে এবং সেগুলো মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেছে। মাস্কাটে ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্সে অংশ নিতে সেখানে রয়েছেন উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বেলা ৩টার দিকে এই বৈঠক হয়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গঙ্গা পানি চুক্তি নবায়নের জন্য আলোচনা শুরু করার গুরুত্বের উপর জোর দেন। তিনি সার্ক স্থায়ী কমিটির বৈঠক আয়োজনের গুরুত্বও তুলে ধরেন এবং এই বিষয়ে ভারত সরকারকে বিবেচনার অনুরোধ করেন।
ভারত ও ওমান সরকার যৌথভাবে এ বছর অষ্টম ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্সের আয়োজন করেছে। এই সম্মেলনে অন্তত ২৭টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যোগ দিয়েছেন।
এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
দেশের সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন শুরু হচ্ছে আগামীকাল সোমবার। বিজিবি মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল চার দিনব্যাপী এ সম্মেলনে অংশ নেবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের পর দুই দেশের মধ্যে মহাপরিচালক পর্যায়ে এটাই হবে প্রথম সীমান্ত সম্মেলন। তৌহিদ-জয়শঙ্করের সাক্ষাতে উঠে আসে সীমান্ত সম্মেলন প্রসঙ্গ। উভয়পক্ষ আশা প্রকাশ করেন বৈঠকের সময় সীমান্ত সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং সমাধানের পথ তৈরি হবে।
ওশান কনফারেন্সে এক প্ল্যানারি সেশনে তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রতিটি উপকূলীয় দেশকে নিশ্চিত করা উচিত যে পারস্পরিক আস্থা, সম্মান এবং স্বার্থের বোঝাপড়ার ভিত্তিতে যেন তাদের প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি হয়। যাতে সব উপকূলীয় দেশ একসঙ্গে বিকাশের জন্য একে অপরকে সহযোগিতা করে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, একটি সমুদ্র উপকূলীয় রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ দীর্ঘকাল ধরে সামুদ্রিক কার্যক্রমের একটি বড় কেন্দ্রবিন্দু। বাংলাদেশ ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন এবং ইন্টারন্যাশনাল সিবেড অথরিটিসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্মে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। আমরা ভারত মহাসাগরজুড়ে আমাদের অংশীদারত্বকে শক্তিশালী করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, উদীয়মান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা এবং এই অঞ্চলের সুযোগগুলো গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, জলদস্যুতা, সশস্ত্র ডাকাতি, মানবপাচার, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা এবং অবৈধ ও অনিয়ন্ত্রিত মাছ শিকার, সামুদ্রিক নিরাপত্তা হুমকি এবং এগুলো মোকাবিলায় আমাদের যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের নিয়ন্ত্রক এবং প্রশাসনিক সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, মূল সামুদ্রিক রুটে দুর্বলতার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং জ্বালানি সরবরাহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই একাধিক চ্যালেঞ্জ এবং অন্যান্য ভ‚-অর্থনৈতিক এবং ভূকৌশলগত কারণগুলোর জন্য দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। দুর্বলতা মোকাবিলা এবং সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আমাদের অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যের উন্নতি, খরচ কমানো এবং সারা বিশ্বে পণ্যের মসৃণ প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য মেরিটাইম সাপ্লাই চেইনকে শক্তিশালী করা এবং প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠা প্রয়োজন।
উপদেষ্টা আরও বলেন, মেরিটাইম সাপ্লাই চেইনকে শক্তিশালী করার জন্য প্রযুক্তি, অবকাঠামোগত উন্নতি, কৌশলগত পরিকল্পনা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশল এবং আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতার সমন্বয়ে একটি সামগ্রিক পদ্ধতি দরকার। আমাদের সামুদ্রিক যোগাযোগ সহজতর করতে হবে এবং বাণিজ্য বাধা কমাতে হবে। ভিসা ব্যবস্থা উদারীকরণের কথাও বিবেচনা করতে হবে। বিশেষ করে আমাদের নাবিকদের জন্য ভিসা এবং অন্যান্য প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজ করা, তাদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। কারণ সামুদ্রিক সরবরাহ চেইন বজায় রাখার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার মতামত লিখুন :