পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ‘প্রহসনমূলক মামলায়’ জেলবন্দীদের মুক্তি ও চাকরিচ্যুত সবাইকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে চাকরিতে পুনর্বহালসহ ৬ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বিডিআর সদস্যরা।
মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টায় দাবি আদায়ের লক্ষ্যে লাগাত্র কর্মসূচির প্রথম দিনে শহীদ মিনারে অবস্থান নেন বিডিআর সদস্যরা। এসময় তারা ‘বিজিবি না বিডিআর, বিডিআর বিডিআর’, ‘দেশপ্রেমিক বিডিআর, সীমান্তে যাবে আরেকবার’, ‘বিডিআরের ঠিকানা, পিলখানা পিলখানা’সহ একাধিক স্লোগান দেন।
এই ঘটনাকে ‘বিডিআর বিদ্রোহ’ বলে ১৬ বছর ধরে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিডিআর সদস্যরা বলেন, ‘এটা কোনও বিদ্রোহ ছিল না, এটা ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। পিলখানায় ইন্ডিয়ান ফোর্স ঢুকে এই হত্যাকাণ্ড চালায়। বিডিআর কোনও উপায় না দেখে যখন প্রতিরোধ করেছে, তখন তৎকালীন সরকার পরিকল্পিতভাবে বিদ্রোহ বলে চালিয়ে ৯ হাজারেরও বেশি বিডিআরকে চাকরিচ্যুত করেছে এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।’
ঝিনাইদহ থেকে আসা বিডিআর সদস্য বিএম কামরুজ্জামান বলেন, ‘তৎকালীন আওয়ামী শাসক শেখ হাসিনা তার মসনদকে টিকিয়ে রাখার জন্য এবং পার্শ্ববর্তী দেশকে খুশি করার জন্য চৌকস এক বিডিআর বাহিনীকে ধ্বংস করে দিয়ে গঠন করেছে বিজিবি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি বিডিআর সদস্যদের চাকরিতে আবারও পুনর্বহাল করতে হবে এবং আমাদের যেসব ভাইয়েরা জেলখানায় কষ্টের জীবনযাপন করছে তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। এ দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লাগাতার কর্মসূচি চলমান থাকবে।’
বিডিআর সন্তান আল-আমিন বলেন, ‘বিনা অপরাধে আমার বাবাকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছে। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পরেও কিছুদিন আমার বাবা ডিউটি করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে ছুটিতে থাকাকালীন আমার বাবাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে তাকে এই মিথ্যা সাজার সম্মুখীন করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারকে বলবো বিডিআরকে আইন শেখাবেন না। অবিলম্বে বিডিআরদের চাকরিতে পুনর্বহাল করুন। এর জন্য যদি ১০টা প্রাণ যায় আমরা দিবো, যদি ২০টা প্রাণ লাগে আমরা দিতে প্রস্তুত।’
কর্মসূচিতে চাকরিচ্যুত এক বিডিআর সদস্যের মেয়ে আর্তনাদ করে বলেন, ‘আমার বাবাকে মিথ্যা সাক্ষী না দেওয়ায় ফাঁসানো হয়েছে। তাকে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছে। আমার বাবা বেইমানি না করায় আজ তার গলায় ফাঁসির দড়ি। বেইমানি না করার ফল কী এরকম? আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন। আমি আমার বাবাকে একটি ছুঁয়ে দেখতে চাই।’
কর্মসূচিতে বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যানার নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন বিডিআর সদস্যরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
৬ দফা দাবিগুলো হলো-
১. পিলখানার ভেতরে ও বাইরে ১৮টি বিশেষ আদালত ও অধিনায়কের সামারি কোর্ট গঠন করে যেসব বিডিআর সদস্যদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাদের সবাইকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে এবং ক্ষতিপূরণ ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।
২. ইতিমধ্যে হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত এবং সাজা শেষ হওয়া জেলবন্দি বিডিআর সদস্যদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রহসনের বিস্ফোরক মামলা বাতিল করা।
৩. গঠিত কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত ব্যতীত শব্দ এবং কার্যপরিধি ২ এর (ঙ) নং ধারা বাদ দিতে হবে। একইসঙ্গে স্বাধীন তদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষে অন্যায়ভাবে দণ্ডিত সর্বপ্রকার নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের মুক্তি দিতে হবে এবং পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঠিক কারণ উদঘাটন, মূল ষড়যন্ত্রকারী, হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা।
৪. পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ হওয়া ৫৭ সেনা কর্মকর্তা, ১০ জন বিডিআর সদস্যসহ মোট ৭৪ জনের হত্যাকারীর বিচার নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে জেলের ভেতর মারা যাওয়া প্রত্যেক বিডিআর সদস্যের মৃত্যুর সঠিক কারণ উম্মোচন করতে হবে। অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়ে থাকলে দায়ী সবাইকে বিচারের আওতায় আনা।
৫. স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ধারণকারী বিডিআর নাম ফিরিয়ে আনা।
৬. পিলখানার হত্যাকাণ্ডে সব শহীদের স্মরণে জাতীয় দিবস ঘোষণা করতে হবে এবং শহীদ পরিবারের সর্বপ্রকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। উৎস: বাংলাট্রিবিউন ও দেশটিভি।
আপনার মতামত লিখুন :